ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের শিশুস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের পথে, ১৭ বছরের পরিসংখ্যানে ধস

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ৮ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের শিশুস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের পথে, ১৭ বছরের পরিসংখ্যানে ধস

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের স্বাস্থ্যগত অবস্থা গত ১৭ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে অবনতি ঘটেছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এখনকার শিশুরা অতীতে তুলনায় বেশি মাত্রায় স্থূলতা, দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যদিও এসব তথ্যের অনেকটাই পূর্বে থেকেই আংশিকভাবে জানা ছিল, তবে এই সমীক্ষা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক একসাথে বিশ্লেষণ করে সামগ্রিক ও সুস্পষ্ট একটি চিত্র উপস্থাপন করেছে।

গবেষণার সহ-লেখক ড. ক্রিস্টোফার ফরেস্ট বলেন, “গবেষণার সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে—একক কোনো পরিসংখ্যান নয়, বরং এটি ৮টি তথ্যসূত্র থেকে সংগৃহীত ১৭০টি নির্দেশকের বিশ্লেষণ, যার প্রতিটিই শিশুদের স্বাস্থ্যের সাধারণ অবনতি নির্দেশ করছে।”

এই গবেষণাটি সোমবার Journal of the American Medical Association-এ প্রকাশিত হয়েছে।

মার্কিন স্বাস্থ্যসচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র মে মাসে বহুল প্রতীক্ষিত "Make America Healthy Again" শীর্ষক প্রতিবেদনে শিশুদের অপুষ্ট ও অতিমাত্রায় ওষুধনির্ভর হিসেবে চিহ্নিত করেন। তবে বাইরের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের স্বাস্থ্য বাজেট কমানো, মেডিকেইডে ছাঁটাই এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কাটছাঁট—এসব নীতির ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সিয়াটল চিলড্রেনস হসপিটাল ও UW মেডিসিনের শিশু বিশেষজ্ঞ ড. ফ্রেডরিক রিভারা বলেন, “মার্কিন শিশুদের স্বাস্থ্য অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে, এবং বর্তমান প্রশাসনের নীতিগুলো এটি আরও খারাপ করবে।” তিনি নতুন এই গবেষণার সঙ্গে প্রকাশিত সম্পাদকীয়ের সহ-লেখকও।

ড. ফরেস্ট এবং তাঁর সহকর্মীরা ১০টি শিশুস্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বাস্থ্য রেকর্ড, বিভিন্ন জরিপ এবং আন্তর্জাতিক মৃত্যুহার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেন।  

২০০৭-২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ২-১৯ বছর বয়সী শিশুদের স্থূলতার হার ছিল ১৭%, যা ২০২১-২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১%। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা (যেমন: উদ্বেগ, বিষণ্নতা, স্লিপ অ্যাপনিয়া) থাকার সম্ভাবনা ২০১১ সালের তুলনায় ১৫%-২০% বেশি।

চিকিৎসকদের নথিভুক্ত ৯৭টি দীর্ঘমেয়াদি রোগের বার্ষিক গড় উপস্থিতি ২০১১ সালের প্রায় ৪০% থেকে ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৬%। বাল্যকালেই ঋতুস্রাব শুরু, ঘুমে সমস্যা, দৈনন্দিন কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা, শারীরিক উপসর্গ, বিষণ্নতা ও একাকীত্বের মাত্রা বেড়েছে।

২০০৭-২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মৃত্যুহার অন্যান্য ধনী দেশের শিশুদের তুলনায় প্রায় ১.৮ গুণ বেশি। বিশেষ করে প্রি-ম্যাচিওর জন্ম, হঠাৎ শিশু মৃত্যু, আগ্নেয়াস্ত্রজনিত দুর্ঘটনা ও যানবাহন দুর্ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

ড. ফরেস্ট বলেন, “শিশুরা হচ্ছে সমাজের সতর্কবার্তা সূচক। যখন শিশুদের স্বাস্থ্যে পরিবর্তন আসে, তখন সেটি বৃহৎ সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।”

তিনি বলেন, এই গবেষণার সময়কাল একরকম ‘অপেক্ষাকৃত সৌভাগ্যজনকভাবে’ নির্বাচনের আগেই সম্পন্ন হয়েছে। শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখার সময়ই তিনি এই ঘাটতি অনুভব করেন।

তবে গবেষণায় ব্যবহৃত কিছু ডেটাসেট পুরো মার্কিন জনসংখ্যার জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ড. জেমস পেরিন, আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্সের মুখপাত্র।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, যদিও “MAHA” আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদি রোগের বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াচ্ছে, প্রশাসন একসাথে এমন কিছু নীতি অনুসরণ করছে যা শিশুদের স্বার্থের পরিপন্থী। এর মধ্যে রয়েছে: দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচি বাতিল, আকস্মিক শিশুমৃত্যু প্রতিরোধ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ বন্ধ এবং টিকাদানে অনীহার মতো প্রবণতা উসকে দেয়া।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ কোনো মন্তব্য দেয়নি। ড. ফরেস্ট বলেন, অতিপ্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ অবশ্যই এক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি, তবে এটি শিশুস্বাস্থ্য অবনতির একমাত্র কারণ নয়। তিনি বলেন, “আমাদের উচিত শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ—অর্থাৎ, ‘ইকোসিস্টেম’—নিয়ে ভাবা। শহরভিত্তিক, এলাকাভিত্তিকভাবে এ সমস্যাগুলোর বিশ্লেষণ দরকার।”

শহীদ

×