ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জেনে নিন সফল মানুষদের ১০টি গোপন দৈনন্দিন অভ্যাস!

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

জেনে নিন সফল মানুষদের ১০টি গোপন দৈনন্দিন অভ্যাস!

জীবনে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টা কেবল ভাগ্যের উপর নির্ভর করে না,এটা নির্ভর করে আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসগুলোর উপর।আমরা অনেকেই মাঝেমধ্যে নিজের জীবনকে স্থবির মনে করি। মনে হয়, কেমন যেন আটকে গেছি।

কীভাবে আবার এগিয়ে যাওয়া যায়, সেই উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই দিন চলে যায়। অথচ মনোবিজ্ঞান বলছে,এই উত্তর খুব একটা জটিল নয়। প্রতিদিনকার কিছু অভ্যাসই পারে আমাদের জীবনকে বদলে দিতে।

যাঁরা সবসময় এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের জীবনে একটা মিল রয়েছে তাঁরা কিছু কার্যকর অভ্যাসকে নিয়মিতভাবে চর্চা করেন।চলুন জেনে নিই এমন ১০টি অভ্যাস, যেগুলো প্রতিদিন মেনে চলেন তাঁরা, যারা জীবনে সবসময় একটু একটু করে এগিয়ে চলেন।

১. লক্ষ্য ঠিক করে রাখেন
জীবনে কোথায় যেতে চান, সেটা যদি না জানেন,তবে আপনি কোন পথে হাঁটবেন?

যাঁরা জীবনে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা জানেন সফল হতে গেলে আগে দরকার একটি পরিষ্কার লক্ষ্য। প্রতিদিন তাঁরা নিজেদের সেই লক্ষ্যগুলো পর্যালোচনা করেন, কোথাও কিছু বদলাতে হলে বদলান, এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করে কাজ করেন।

শুধু লক্ষ্য বানালেই হবে না লক্ষ্য হতে হবে স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত, যাতে তা আপনার জীবনের বড় স্বপ্নের সাথে মিল রেখে এগিয়ে নিতে পারে আপনাকে।তাই আপনি যদি সত্যিই নিজের জীবনে অগ্রসর হতে চান, তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন।একটি স্বচ্ছ, অর্থবহ লক্ষ্য ঠিক করে নিন।

২. পরিবর্তনকে বরণ করে নেন
পরিবর্তন অনেক সময় অস্বস্তিকর। কিন্তু এটিই আমাদের প্রকৃত বিকাশের চাবিকাঠি।জীবনে যাঁরা এগিয়ে যান, তাঁরা জানেন পরিবর্তন মানেই সুযোগ। তাঁরা ভয় না পেয়ে পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শেখেন। গবেষণাও বলছে,পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম উপায়।পরিবর্তনকে ভয় নয়, তাকে আপন করে নিন। তবেই আপনি বুঝবেন, আপনি কতটা সামনে এগিয়ে যেতে পারেন।

৩. নিজেকে গুরুত্ব দেন
‘সেলফ-কেয়ার’ শব্দটা শুধু ট্রেন্ড নয়,এটা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার এক জরুরি শর্ত।নিজের শারীরিক, মানসিক ও আবেগগত স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া মানে শুধু ‘ভালো লাগা’ না,এটা আসলে জীবনযুদ্ধে লড়ার শক্তি সঞ্চয়ের উপায়।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের চাপ আমাদের মস্তিষ্কের কিছু অংশের গঠনই বদলে দিতে পারে,যেখানে আবেগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ কাজ করে।

তাই যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, সুষম খাবার খান, পর্যাপ্ত ঘুমান এবং নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার কাজগুলো করেন,তাঁরাই সত্যিকারের অগ্রগতির পথে আছেন।আপনাকেও শুরু করতে হবে এখান থেকেই,নিজেকে সময় দিন, নিজের যত্ন নিন।

৪. প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন
‘ধন্যবাদ’ বলাটা কৃতজ্ঞতা নয়,কৃতজ্ঞতা একটা মানসিক অভ্যাস, যা আপনার মন ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে।

জীবনে যাঁরা এগিয়ে যান, তাঁরা প্রতিদিন একটু সময় বের করে ভাবেন,আজ আমি কোন কোন কিছুর জন্য কৃতজ্ঞ?ছোট হোক বা বড় এই ভাবনাই তাঁদের মনে আনতে পারে প্রশান্তি, জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।গবেষণাগুলোও বলছে নিয়মিত কৃতজ্ঞতা চর্চা করলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, সম্পর্ক গভীর হয় এবং শরীরও সুস্থ থাকে।তাই আজ থেকেই শুরু করুন প্রতিদিন নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “আমি আজ কিসের জন্য কৃতজ্ঞ?”

৫. শেখা থামান না কখনো
জীবন থেমে নেই, পৃথিবী বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। তাই আপনাকেও শিখতে হবে প্রতিদিন।যাঁরা জীবনে এগিয়ে যান, তাঁরা প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখতে থাকেন। বই পড়া, অনলাইন কোর্স, নতুন স্কিল শেখা বা কেবল কৌতূহল থেকে কিছু জানা সবই শেখার পথে পড়ে।

এটা শুধু তথ্য জানার ব্যাপার নয়,এটা মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখার অভ্যাস।তাই প্রতিদিন কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করুন। এই অভ্যাস আপনাকে অগ্রগতির পথে রাখবে।

৬. তাঁরা কখনো হাল ছাড়েন না
সবার জীবনেই বাধা আসে, ব্যর্থতা আসে। কিন্তু যাঁরা এগিয়ে যান, তাঁরা জানেন,থেমে যাওয়া নয়, আবার উঠে দাঁড়ানোই আসল।তাঁদের চোখে সফলতা মানে পারফেকশন না, ধৈর্য ও অধ্যবসায়।

হ্যারিয়েট বিচার স্টো-এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে-"যখন সব কিছু আপনার বিরুদ্ধে যাচ্ছে, এবং মনে হচ্ছে আর এক মুহূর্তও টিকে থাকা সম্ভব নয়,সেই সময়েই আপনি জানবেন, এই মুহূর্তটাই পাল্টে যাওয়ার সময়।"
তাই মনে রাখবেন, কঠিন সময়ে থেমে যাবেন না,থাকবেন। ধৈর্য ধরুন, এগিয়ে যান।

৭. তাঁরা সচেতন থাকেন ‘এই মুহূর্তে’
আজকের ব্যস্ত জীবনে আমরা এতটাই দৌড়াচ্ছি যে, বর্তমানে থাকতে ভুলে যাচ্ছি। কিন্তু যারা এগিয়ে যান, তাঁরা সময় বের করে একটু থেমে থাকেন, একটু ভেতরের দিকে তাকান।এই ‘মাইন্ডফুলনেস’ বা সচেতনতা আমাদের মানসিক স্থিতি এনে দেয়, ভাবনার স্পষ্টতা এনে দেয়।আপনার যদি মনে হয় আপনি হারিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে থেমে দাঁড়ান। একটু নিজের ভেতরটা দেখুন।

৮. তাঁরা ব্যর্থতাকে ভয় পান না
ব্যর্থতা আসলে আমাদের সবচেয়ে ভালো শিক্ষক। যাঁরা এগিয়ে যান, তাঁরা ব্যর্থতাকে লজ্জা নয়,একটা সুযোগ হিসেবে দেখেন।গবেষণাও বলছে,যাঁরা ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখেন, তাঁরাই সফল হন বেশি।তাই পরের বার কোনো কিছুতে ব্যর্থ হলে নিজেকে দোষারোপ নয়, বরং নিজেকে বলুন,"আমি এখান থেকে কী শিখতে পারি?"

৯. তাঁরা ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করেন
জীবনে একা চলা যায় না। যাঁরা সত্যি সত্যি এগিয়ে যান, তাঁরা তাঁদের চারপাশে এমন মানুষ রাখেন,যাঁরা সমর্থন দেন, অনুপ্রেরণা দেন।এটা মানে এই না যে তাঁরা নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে যান, বরং তাঁরা জানেন কীভাবে সীমারেখা টানতে হয়।একজন সহানুভূতিশীল বন্ধু বা প্রেরণাদায়ী কোনো মানুষ আপনার জীবনের পথচলাকে অনেক সহজ করে দিতে পারে।

 

১০. তাঁরা নিজেদের বিশ্বাস করেন
সব অভ্যাসের মূল কথাটা এখানেই,নিজের প্রতি বিশ্বাস।যাঁরা সবসময় এগিয়ে যান, তাঁদের ভেতরে থাকে এক অদম্য বিশ্বাস,"আমি পারব।"

এটা অহংকার নয়, এটা আত্মবিশ্বাস। আপনি যদি নিজেকে বিশ্বাস না করেন, তাহলে কেউ করবে না।নিজের যোগ্যতা, মেধা ও লক্ষ্যের উপর ভরসা রাখুন। এই আত্মবিশ্বাসই আপনাকে আগলে রাখবে, ঠেলে নিয়ে যাবে সামনে।

 

 

ক্ষমতা আপনার মধ্যেই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি যা খুঁজছেন, তার ক্ষমতা আপনার মধ্যেই রয়েছে।এই ১০টি অভ্যাস আপনাকে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু সেগুলো কাজে লাগানো বা না লাগানোর সিদ্ধান্ত শুধুই আপনার।

মনোবিজ্ঞানী ওয়েন ডায়ারের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে,"আপনি যেভাবে জিনিসগুলোকে দেখেন, সেটাই ঠিক করে দেয় জিনিসগুলো আসলে কেমন দেখাবে।"

অর্থাৎ, জীবনে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর, আপনার পরিস্থিতির উপর নয়।সুতরাং আজই এক ছোট্ট পদক্ষেপ নিন। নিজের ভেতরের শক্তিকে বিশ্বাস করুন।আপনার যাত্রা শুরু হোক এখান থেকেই। আপনি পারবেনই।

 

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/3fphv8d9

আফরোজা

×