ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

তরুণ চিকিৎসক ফাতেমার নারীস্বাস্থ্য ভাবনা

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

তরুণ চিকিৎসক ফাতেমার নারীস্বাস্থ্য ভাবনা

ফাতেমার নারীস্বাস্থ্য ভাবনা

উন্নয়নের নানামাত্রিক কর্মযোগে বাংলাদেশের নজরকাড়া অভিগমন এখন সময়ের চাহিদা। শুধু দেশ এগিয়ে যাওয়া নয় বরং সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশের চলমান প্রবৃদ্ধি চমক দেওয়ার মতো। সঙ্গতকারণে সমসংখ্যক নারীরাও এগিয়ে আসছে তাদের যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা নিয়ে। সেখানে সবার আগে প্রয়োজন শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে নারীদের সাবলীল অংশ নেওয়া। পরবর্তীতে পছন্দসই পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করা। মেয়েরা এক সময় শিক্ষকতা এবং চিকিৎসক হিসেবে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিল। কিন্তু যুগের প্রয়োজনে, নতুন সময়ের তাগিদে ভিন্ন মাত্রার পেশায় যুক্ত হওয়াও বাঙালি নারীদের অনন্য কর্মসাধনা।

কথা হচ্ছিল এক উদীয়মান চিকিৎসক ফাতেমাতুজ জহুরা মৌ-এর সঙ্গে। সম্ভাবনাময় এই চিকিৎসক শুনালেন তার এগিয়ে চলার কাহিনী। এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত মুসলিম পরিবারের কন্যা মৌ জন্ম থেকেই পেলেন এক অসাধারণ গড়ে ওঠার অনুকূল পরিবেশ। ময়মনসিংহ জেলায় জন্ম নেওয়া এই চিকিৎসকের পিতা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। বাংলাদেশ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ অবস্থানে নিজের চাকরি জীবন শেষ করেন। মা হেলেনা খাতুন ছিলেন নিঝুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। কলতান মডেল স্কুল থেকে প্রাইমারি শিক্ষা সমাপ্ত করে ভর্তি হন ময়মনসিংহের ভালুকা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন।

বিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ২০১২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্ব সম্পন্ন করে চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি সারা জীবনের নতুন মোড় পরিবর্তনে এক অবধারিত শিক্ষা কার্যক্রম। কথা প্রসঙ্গে বললেনÑ মেয়েরা মায়ের জাত। তাই সেবামূলক শিক্ষা জীবন চলার পথকে নানামাত্রিকে ভরিয়ে তোলে। আর চিকিৎসক মানেই মানব সেবামূলক অভাবনীয় কর্মযোগ। ১ ভাই ১ বোনের মধ্যে মৌ চিকিৎসক আর ভাই মেরিন প্রকৌশলী। সবই পারিবারিক সুষ্ঠু আবহে পিতা-মাতার নিবিড় সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা এক অনন্য জীবন প্রবাহ। ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেইসড মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডিগ্রি নেওয়া এই সফল শিক্ষার্থী ২০১৯ সালে তার ইনটার্নশিপ পর্ব শেষ করেন। একই চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ের হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন।

সেখানে মানব সেবামূলক কর্মযোগ দেখতে হয়েছে মেয়েরা আজও কতভাবে নিজেদের নতুন সময় থেকে পিছিয়ে রেখেছে। এই আধুনিক যুগেও মাসিক ঋতুস্রাব নিয়ে লজ্জাশরমের অন্ত নেই। এমনকি সেটা যে একান্ত গোপনীয় বিষয় তেমন পুরনো বোধ লালন করে চলেছে। শুধু কি তাই? শিক্ষার্থী কিংবা কর্ম জীবনে নিয়মিত ঋতুস্রাব নিয়ে কত আপত্তিকর বয়ান শুনতে হয়, তাও এই উদীয়মান চিকিৎসককে মর্মাহত করে। মাসিক ঋতুস্রাব শুধু প্রজনন স্বাস্থ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং মাতৃশৌর্যে এক অপার শক্তিময়তায় দেশের আগামীর প্রজন্মকে পৃথিবীর আলো দেখায়।

আধুনিক ও প্রযুক্তির বাংলাদেশে অনেক নতুন সময় দৃশ্যমান হলেও মেয়েদের চিরায়ত বহু সমস্যা এখনো সমাজের অভ্যন্তরে জিইয়ে আছে। অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে গেলে তা দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমানও হয়। আর চিকিৎসক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক পেশায় নিয়োজিত থাকার কারণে হরেক বৈষম্য, অনিয়ম আর অবিচার দেখে তিনি ক্ষুব্ধ, বিচলিত এবং শঙ্কিত। কবে বাংলাদেশ সব মান্ধাতা আমলের অপসংঙ্কারকে ভেঙে নতুন সময়কে অবারিত করবে তাও ভাবনার জগতকে তোলপাড় করে দেয়।
আধুনিক উন্নত বাংলাদেশে অনেক মেয়ে এখনো নিয়মিত মাসিকে সেই পুরনো কাপড়ই ব্যবহার করে। একটা অংশ জানেও না বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর প্যাড ব্যবহারই সবচেয়ে উত্তম। ভারাক্রান্ত অন্তরে জানালেন মেয়েরা আর কত নিজেদের আড়াল করবে পরম সত্যের মুখোমুখি হওয়া থেকে। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়ে মেয়েরা অস্বাস্থ্যকর, ত্রুটিপূর্ণ স্যানিটেশন অব্যবস্থাপনায়। এখানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে অনেক মেয়ের প্রচ- পেট ব্যথা করে। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করাও জরুরি। কিন্তু বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্মক্ষেত্রে দরকারি কিছু ওষুধের অপর্যাপ্ততা সংশ্লিষ্টদের বিপদাপন্ন হতে হয়।

চিকিৎসক হিসেবে তিনি মনে করছেনÑ ব্যক্তিগত থেকে প্রাতিষ্ঠানিক সর্ববিধ পর্যায়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সুবন্দোবস্ত থাকা জরুরিই নয় বিরূপ পরিস্থিতির ন্যায্যতাও। একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে ভাবার চাইতেও মনে করছেন তাকে যথার্থভাবে তৈরি করতে হবে যাতে নিজেই সব কিছু সামাল দিতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালের স্পর্শকাতর সময় পার করা ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্যই সংকটাপন্ন। পিতামাতাকে সার্বক্ষণিক সচেতন-সাবধানতায় সন্তানদের নজরদারি করতে হয়। তার চেয়েও বেশি সতর্কে রাখতে হয় যাতে তারা নিজের সুরক্ষা আপনা থেকে দিতে সক্ষম হয়। বয়ঃসন্ধিকালের শরীর মনের নতুন দোলাচলে সন্তানদের এক ভিন্নমাত্রার আকস্মিক অনুভব।

সেখানেও মেয়েদের বিপদ অনেকখানি। তবে সবাই কোনো এক সময় নিজের মতো করে সামলে নিতে পারদর্শী হয়। তবে সমস্যা শঙ্কুল সময়ও পিছিয়ে থাকে না। নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তোলা মৌ বলেন, নিশ্চিতভাবে আগামীতে মেয়েদের জীবন আরও স্বচ্ছন্দ ও অবারিত হবে। নতুন সময় তাদেরকে যথার্থ পথ দেখাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।