ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

থাইরয়েড গ্লান্ডের ক্যান্সার হলে করণীয়

প্রকাশিত: ২০:১৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২৩

থাইরয়েড গ্লান্ডের ক্যান্সার হলে করণীয়

থাইরয়েড ক্যান্সার

থাইরয়েড গ্রন্থি হলো এক ধরনের হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থি। এই এন্ডোক্রাইন গ্লান্ড বা গ্রন্থির হরমোন নিয়েই সাধারণত আমরা বিপাকে পড়ে থাকি। গলগণ্ড রোগের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু এর বাইরেও এই গ্রন্থির টিউমার বা নডিউল এবং সিস্টও আমাদের ভাবিয়ে তুলতে পারে। আশ্বস্তের বিষয় হলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থির নডিউল বা সিস্টগুলো ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু যখন এই গ্রোথ বা বাড়তি অংশগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর বা ক্যান্সারের উৎস হয়ে ওঠে তখন তা ভাবনার বিষয় বৈকি।

থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো অংশের কোষ সংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেলে তাকে আমরা থাইরয়েড ক্যান্সার বলে থাকি। গত তিন দশকে থাইরয়েড ক্যান্সারের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি এখন মহিলাদের মধ্যে দ্রুততম ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার। পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৫.৪% এবং মহিলাদের মধ্যে ৬.৫% নির্দেশ করে। এই বৃদ্ধির প্রায় পুরোটাই প্যাপিলারি থাইরয়েড ক্যান্সারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

থাইরয়েড ক্যান্সারের লক্ষণগুলোঃ

- গলার সম্মুখভাগে ফুলে ওঠা এবং এই ফোলা ঢোক গেলার সময় ওঠানামা করে। ক্যান্সার হলে সেই ফোলা অংশটি বেশ শক্ত হয়ে থাকে। এর সঙ্গে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, ক্ষুধামান্দভাব যুক্ত হয়।

- থাইরয়েড গ্রন্থির আশপাশে একটি বা একাধিক টিউমার হতে পারে; উভয় পাশে টিউমার হতে পারে। আশপাশের লিম্ম্ফনোড বা লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে উঠতে পারে।

-থাইরয়েড টিউমার নার্ভ বা স্নায়ুকে আক্রান্ত করলে গলার স্বর পরিবর্তন হতে পারে। গলার স্বর হঠাৎ মোটা বা ফ্যাসফেসে হয়ে যেতে পারে।

- থাইরয়েড টিউমার শ্বাসনালির ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

থাইরয়েড ক্যান্সার বংশপরম্পরায় ছড়াতে পারে এ ভয়ংকর সত্যটি পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে মনে রাখতে হবে। এ জন্য সমস্যা দেখা না দিলেও বংশে নিকটাত্মীয়দের কারও থাইরয়েড ক্যান্সার থাকলে স্ট্ক্রিনিং করিয়ে নিতে হবে যে নিজের শরীরে কোনো ক্যান্সার উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে কিনা।

থাইরয়েড ক্যান্সার এমন একটি রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা করলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আরোগ্য হওয়া সম্ভব। গলার সামনে ফুলে উঠলে বা কোনো কারণ ছাড়া গলার স্বর অনেকদিন ধরে পরিবর্তিত হলে দ্রুত একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

তিনি শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন আলট্রাসনোগ্রাম, থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বায়োপসি পরীক্ষা করে দেখবেন এটা আসলে কোন ধরনের রোগ।

ক্যান্সারের চিকিৎসাঃ

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন বা সার্জারি করা। পরীক্ষার পর আক্রান্তের ধরনের ওপর নির্ভর করবে থাইরয়েড গ্রন্থির কতটুকু কাটতে হবে। অপারেশনের পর থাইরয়েড ক্যান্সারে প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট ডোজের রেডিও আয়োডিন থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। থাইরয়েড ক্যান্সারের রোগীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে অপারেশনের পর তাকে চিকিৎসকের অধীনে ফলোআপে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাফিলতি বিপদ ডেকে আনতে পারে। থাইরয়েড ক্যান্সার মানেই মৃত্যুর বিভীষিকা নয়, তা থেকে মুক্তির পথ রয়েছে। এ জন্য শুধু প্রয়োজন বাড়তি স্বাস্থ্য সচেতনতা।

লেখক : রেজিস্ট্রার, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। 

 

এমএস

×