
ছবিঃ সংগৃহীত
ক্যানসার অনেক সময় এত সূক্ষ্ম উপসর্গ দেখায় যে সহজেই আমরা তা অবহেলা করে ফেলি।
ক্যানসার যদি শীঘ্রই ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা থাকলে সেগুলো সহজেই চিনতে পারেন, যদিও লক্ষণগুলো ভিন্ন হতে পারে। এই লক্ষণগুলো যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মেদান্তা – দ্য মেডিসিটির রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন ডা. তেজিন্দর কাটারিয়া ১০টি প্রাথমিক ক্যানসার লক্ষণ সম্পর্কে জানালেন, যা কখনোই উপেক্ষা করা উচিত নয়।
ক্যানসার লক্ষণ কেন প্রায়ই অজানা থেকে যায়?
ক্যানসারের লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ সমস্যা মনে হওয়ায় নজরে পড়ে না — ক্লান্তি, পেটে ফোলাভাব, হঠাৎ কাশি। মানুষ এগুলোকে মানসিক চাপ, খারাপ খাবার বা বয়সের প্রভাব মনে করে ফেলেন। তাছাড়া, অনেক ক্যানসারে প্রথম দিকে ব্যথা বা অন্য বড় সমস্যা দেখা দেয় না, তাই লক্ষণগুলো সহজেই এড়িয়ে যায়। অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পান বা সহজে স্বাস্থ্যসেবা পান না। চিকিৎসকের কাছে গেলেও অস্পষ্ট লক্ষণগুলো ভুল চিকিৎসার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সংক্ষেপে, ক্যানসার চিৎকার করে না, নীরবে গোপনে থাকে, তাই নিয়মিত চেকআপ বা নিজের শরীরের প্রতি সতর্ক থাকা জরুরি।
১০টি প্রাথমিক ক্যানসারের লক্ষণ যা উপেক্ষা করবেন না:
১. অজানা ওজন কমে যাওয়া
কোনো কারণ ছাড়াই এক মাসে ১০ পাউন্ড বা তার বেশি ওজন কমলে তা পেট, খাদ্যনালী, ফুসফুস বা অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের সংকেত হতে পারে। অবশ্যই অন্য কারণ থাকলে খতিয়ে দেখবেন, তবে ওজন কমা চলতেই থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
২. অবিরত ক্লান্তি
বিশ্রামের পরেও ক্লান্তি দূর না হলে বিশেষ করে রক্তের ক্যানসার (লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা) হতে পারে। যদি অবসাদ আপনার দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. নতুন বা পরিবর্তিত গুটি
গলায়, বগলে বা কোমরে নতুন কোনো গুটি বা ফোলাভাব দেখা দিলে সেটা সংক্রমণ হতে পারে বা অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির লক্ষণও হতে পারে। যদি গুটি শক্ত, ধীরে ধীরে বড় হয় বা কমে না, তাহলে স্তন, টেস্টিকল বা লিম্ফ সংক্রান্ত ক্যানসারের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আকার, রং ও কোমলতা খেয়াল রাখা দরকার।
৪. ত্বক বা ফোঁটার পরিবর্তন
ত্বকে নতুন ফোঁটা বা মোল যে কোন রকম পরিবর্তন, যেমন আকার, রঙ, সীমা, রক্তপাত বা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে তা ত্বকের মেলানোমার লক্ষণ হতে পারে। ABCDE নিয়ম (Asymmetry, Border, Color, Diameter, Evolving) অনুসরণ করুন।
৫. অস্বাভাবিক রক্তপাত বা চোট
মূত্রে, পায়খানায়, বমিতে বা কাশিতে রক্ত দেখা গেলে তা মূত্রথলি, বড় অন্ত্র, পেট বা ফুসফুস ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। নিয়মিত নাক থেকে রক্ত পড়া বা অজানা চোট লাগাও রক্তের ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
৬. অবিরত কাশি বা কন্ঠস্বর পরিবর্তন
যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি শুকনো কাশি থাকে বা রক্ত কাশি হয়, তবে এটা ফুসফুস, গলা বা থাইরয়েড ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। টিউমার গলার বা শ্বাসনালীর কাছাকাছি থাকলে এমন উপসর্গ দেখা দেয়।
৭. পায়খানায় রক্ত
লাল বা গাঢ় রঙের পায়খানা রক্তের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
৮. কষ্টসহ পেট বা গলায় খাওয়া
গলায় বা খাদ্যনালীতে ক্যানসার থাকলে গিলে কষ্ট হয় বা আপসেট থাকে। পেট বা গলায় দীর্ঘস্থায়ী অজানা অম্লতা বা হজমজনিত সমস্যা থাকলে পরীক্ষা করানো জরুরি।
৯. বাথরুমের অভ্যাস পরিবর্তন
দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানায় রক্ত, পেশাবের সময় ব্যথা বা রক্ত দেখা কোলন, মূত্রথলি বা প্রস্রাবথলির ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
১০. অবিরত ব্যথা
হাড়, ডিম্বাশয়, অগ্ন্যাশয় বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্যানসার দীর্ঘস্থায়ী পেট, পিঠ বা সন্ধিবন্ধু ব্যথার কারণ হতে পারে। এ ব্যথা সাধারণ ব্যথার মতো নয়, ক্রমশ বেড়ে যেতে পারে।
১১. রাত্রিকালীন ঘাম, জ্বর বা বারবার সংক্রমণ
নিয়মিত হালকা জ্বর, রাতের ঘাম বা বারবার সংক্রমণ লিম্ফোমা বা লিউকেমিয়ার মতো ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
এই লক্ষণগুলো মানে আপনার ক্যানসার হয়েছে এমন নয়, তবে আপনার শরীরে কিছু সমস্যা আছে তা নিশ্চিত। সময়মতো শনাক্ত করলে চিকিৎসার বিকল্প বাড়ে, চিকিৎসা কম কষ্টকর হয় এবং ফলাফল ভালো হয়।
সাধারণ ক্যানসারের ধরন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, স্তন ক্যানসার বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে। তবে ফুসফুসের ক্যানসার সবচেয়ে প্রাণঘাতী, বিশেষ করে ধূমপান বা দূষণের বেশি এলাকায়। কোলন ক্যানসারের ঘটনা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। পুরুষদের মধ্যে প্রস্রাবথলির ক্যানসার বেশি দেখা যায় এবং পেটের ক্যানসার কিছু এশিয়ান দেশে এখনও বড় সমস্যা। WHO বলছে, নিয়মিত চেকআপ, সুষম খাদ্য ও তামাক থেকে বিরত থাকা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে খুবই কার্যকর।
পরামর্শ: যদি এই উপসর্গগুলো আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। শীঘ্রই পরীক্ষা করানো এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন, কারণ সময়মতো সনাক্তকরণ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইমরান