
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত হৃদরোগ অনেক সময় হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে- মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪০ বছর পার হলে প্রতিবছর হার্টের পরীক্ষার পাশাপাশি কিছু বিশেষ লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এমন কিছু উপসর্গ রয়েছে, যেগুলো যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে, তবে সকালের দিকে এগুলো অধিকতর স্পষ্টভাবে দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় ঘুমানোর পর হঠাৎ সকালের অক্রিয় অবস্থা থেকে শরীর সচল করার সময় এসব লক্ষণ বেশি নজরে আসে।
নিচে এমন ৫টি সকালের লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো হৃদরোগের সম্ভাব্য পূর্ব-সংকেত হতে পারে:
১. বুকের অস্বস্তি বা ব্যথা:
সকালে জেগে ওঠার পর বুকে চাপ, টানটান অনুভূতি বা ভারী কিছু বসে থাকার মতো যন্ত্রণা হৃদরোগের সবচেয়ে স্পষ্ট সতর্ক সংকেত হতে পারে। এটি বাম পাশে বা বুকের মাঝখানে হয়ে থাকে এবং হাত, গলা, চোয়াল, পিঠ বা পেট পর্যন্ত ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেকে একে বর্ণনা করেন “বুকে হাতি বসে আছে” বলে। ব্যথা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন- তা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
২. শ্বাসকষ্ট:
সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্বাস নিতে কষ্ট হলে সেটি হার্টের সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। হৃদপিণ্ড ঠিকভাবে রক্ত পাম্প না করতে পারলে ফুসফুসে তরল জমে যায়, ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। বিশ্রাম অবস্থায় বা শুয়ে থাকা অবস্থায়ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কখনও কাশি ও হাঁপানির মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
৩. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা ধড়ফড়ানি:
সকালে জেগে ওঠার পর হৃদস্পন্দনে হঠাৎ গতি বেড়ে যাওয়া, লাফানো বা অনিয়মিতভাবে চলা হলে তা আরিথমিয়া (Arrhythmia) নামে পরিচিত একটি হার্ট সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সকালে শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এই ধরণের অনিয়ম হতে পারে। এর সঙ্গে মাথা ঘোরা, বুকের ব্যথা বা দুর্বলতা থাকলে তা আরও বিপজ্জনক। এই সমস্যাগুলো নিয়মিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইসিজি বা অন্যান্য পরীক্ষা করা জরুরি।
৪. অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা:
যথেষ্ট ঘুমের পরও যদি সকালে অত্যধিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব হয়, তবে তা হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটি হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। হঠাৎ ক্লান্তি, নিঃশ্বাসের কষ্ট বা বুক ধড়ফড় করার সঙ্গে থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত।
৫. মাথা ঘোরা বা হালকা বোধ হওয়া:
সকালে উঠে মাথা ঘোরার অনুভূতি হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহে বাধার লক্ষণ হতে পারে। রক্তচাপের ওঠানামা, হৃদযন্ত্রের ছন্দের সমস্যা কিংবা আর্টারিতে ব্লক থাকলে এমনটা দেখা দিতে পারে। ঘাম, বমিভাব বা বুকে অস্বস্তির সঙ্গে মাথা ঘোরা হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার।
সকালের লক্ষণ এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গবেষণা বলছে, হৃদরোগ-সংক্রান্ত উপসর্গগুলো অনেক সময় সকালেই প্রথম দেখা দেয় অথবা সকালে তীব্র হয়। কারণ, এই সময় শরীরে কর্টিসল হরমোন হঠাৎ বেড়ে যায়, যা হার্টের কার্যক্ষমতা ও রিদমে প্রভাব ফেলে। তাই সকালের লক্ষণগুলো অবহেলা না করে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
কী করবেন এই ধরনের লক্ষণ দেখলে?
সকালে বুকের চাপ, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা হৃদস্পন্দনের অনিয়ম দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বসে বিশ্রাম নিন এবং লক্ষণগুলো মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। যদি ব্যথা হাতে, চোয়ালে বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে, কিংবা বমিভাব, ঘাম বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি থাকে, তাহলে বিলম্ব না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন—এটি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে।
একইসঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ইসিজি বা রক্ত পরীক্ষার মতো প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো করিয়ে নেওয়া জরুরি। সময়মতো রোগ শনাক্ত করা গেলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করে ভবিষ্যতের জটিলতা প্রতিরোধ করা যায়।
বি.দ্র.: এই প্রতিবেদনটি কেবল তথ্যভিত্তিক, কোনোভাবেই এটি চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। হৃদরোগ সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
মিরাজ খান