
ছবি: প্রতীকী
সকালে নিয়মিত, স্বাভাবিক মলত্যাগ সুস্থ হজমপ্রক্রিয়ার একটি লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে অনেকেই সকালবেলা অনিয়মিত মলত্যাগ বা পেট ঠিকমতো পরিষ্কার না হওয়ার সমস্যায় ভোগেন। কেউ কেউ একদিন পরপর মলত্যাগ করেন, কেউ আবার সকালে কয়েকবার চেষ্টা করেও পুরোপুরি স্বস্তি পান না।
কারও ক্ষেত্রে গ্যাস, পেট ফাঁপা, অস্বস্তি, বা বারে বারে বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। এই অনিয়মিত মলত্যাগ সাময়িক কোনো হজমজনিত সমস্যা যেমন হতে পারে, তেমনি এটি দীর্ঘস্থায়ী কোনো রোগ বা অসুস্থতার ইঙ্গিতও হতে পারে।
সকালে অনিয়মিত মলত্যাগের অন্যতম প্রধান কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় অনিয়ম। যাঁরা পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, আঁশযুক্ত খাবার খান না বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বেশি গ্রহণ করেন, তাঁদের পেট পরিষ্কার হতে সমস্যা হতে পারে।
তাছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ, রাতে দেরি করে খাওয়া বা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়াও মলত্যাগের ছন্দপতনের কারণ হতে পারে। তবে এসব কারণ দীর্ঘমেয়াদি না হলে সাধারণত স্থায়ী কোনো রোগের দিকে ইঙ্গিত দেয় না এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
তবে যখন অনিয়মিত মলত্যাগ দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে, এবং তার সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ যেমন পেটে ব্যথা, অস্বাভাবিক গ্যাস, ক্ষুধামান্দ্য, ওজন হ্রাস বা রক্তপাত যুক্ত হয়, তখন তা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে। যেমন—
প্রথমত, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) নামক একধরনের হজমজনিত সমস্যা এতে জড়িত থাকতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই সকালে বাথরুমে একাধিকবার যান, কিন্তু প্রতিবারই অসম্পূর্ণ অনুভূতি থাকে। অনেক সময় মল নরম বা পাতলা হয়, আবার কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যের মতোও দেখা দেয়। IBS-এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তবে মানসিক চাপ, হরমোনগত পরিবর্তন ও খাবারের সংবেদনশীলতা এতে ভূমিকা রাখে।
দ্বিতীয়ত, কোষ্ঠকাঠিন্য বা দীর্ঘমেয়াদি কনস্টিপেশনও অনিয়মিত মলত্যাগের অন্যতম কারণ। যাঁরা দিনে একবার বা দুইদিনে একবারের কম মলত্যাগ করেন এবং মলত্যাগ করতে গেলে কষ্ট হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি ধরা পড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক সময় কোনো অন্তর্নিহিত রোগ যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি), পারকিনসনস ডিজিজ, ডায়াবেটিস অথবা অন্ত্রের গঠনগত সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।
তৃতীয়ত, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ইনফেকশন বা অন্ত্রের সংক্রমণ মলত্যাগের ছন্দ পরিবর্তন করতে পারে। কোনো ধরনের জীবাণু বা পরজীবীর সংক্রমণ হলে সকালে একাধিকবার পাতলা পায়খানা হতে পারে, কখনো কখনো পেটে মোচড় দিয়ে ব্যথাও হয়। এসব ক্ষেত্রে কখনো রক্ত বা শ্লেষ্মাও দেখা দিতে পারে।
চতুর্থত, কলোরেক্টাল ক্যানসার বা অন্ত্রের টিউমারও একে একে মলত্যাগের ছন্দ পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যাঁদের বয়স ৫০-এর উপরে এবং হঠাৎ করে মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসে—যেমন বারবার মলত্যাগের অনুভূতি, অসম্পূর্ণতা, বা মলে রক্ত দেখা যায়—তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পঞ্চমত, হজমে সমস্যা বা পাচনতন্ত্রের অকার্যকারিতা যেমন গ্যাস্ট্রিক আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস বা পিত্তথলির সমস্যা থেকেও সকালে মলত্যাগের সময় অস্বস্তি বা পেট ফাঁপার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও, হরমোনজনিত অসাম্য, মানসিক উদ্বেগ বা অবসাদ, এবং দীর্ঘদিনের ঔষধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনিয়মিত মলত্যাগের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে ডিপ্রেশনের ওষুধ, আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা কিছু ব্যথানাশক ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
সকালে অনিয়মিত মলত্যাগ যতটা না রোগ, তার চেয়েও বেশি একটি উপসর্গ— যার পেছনে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কারণ থাকতে পারে। তাই এটিকে অবহেলা না করে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি।
পর্যাপ্ত পানি পান, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম ও খাওয়া, আঁশযুক্ত খাবার (যেমন শাকসবজি, ফলমূল ও গোটা শস্য) খাওয়া এবং মানসিক চাপ কমানো মলত্যাগকে নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।
তবে উপসর্গ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তার সঙ্গে অন্যান্য সমস্যাও যুক্ত হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ দ্রুত সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
এম.কে.