
ছবি: সংগৃহীত
একসময় গ্রামীণ জনপদে উৎসব-অনুষ্ঠান মানেই ছিল পুতুলনাচ। হাটে, মেলায়, কিংবা রাতের আকাশজুড়ে চাঁদের আলোয় খোলা মাঠে বসত পুতুলনাচের আসর। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও মুগ্ধ হয়ে দেখত কাঠ, কাপড় আর বাঁশে তৈরি চলমান পুতুলের কসরত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প।
এখন আর নেই সেই পুতুলনাচের দল, নেই কাঠের পুতুল ঘোরানোর তাল। টেলিভিশন, মোবাইল ফোন আর ডিজিটাল বিনোদনের দাপটে শিশুদের মনেও নেই পুতুলনাচের প্রতি আগ্রহ। ফলে বিনোদনের এক নির্মল ধারা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
পটুয়াদের (পুতুলনাচ শিল্পী) জীবনও এখন নিদারুণ দুঃসময় পার করছে। আগে বছরে অন্তত ২০-৩০টি অনুষ্ঠান করতেন তারা। এখন বছরে দু-একটির বেশি ডাক পান না। আয় না থাকায় অনেকে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে গেছেন।
ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, আমার বাবা-দাদারাও পুতুলনাচ করতেন। আমি ছোটবেলা থেকেই শিখেছি। কিন্তু এখন এই কাজ করে সংসার চলে না। আগে মানুষ অপেক্ষা করত পুতুলনাচ দেখার জন্য, এখন কেউ ডাকে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুতুলনাচ শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি এক ধরনের লোকশিক্ষা এবং ঐতিহ্যের ধারক। এখানে গল্পের মাধ্যমে সামাজিক বার্তা, নৈতিকতা ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হতো।
পুতুলনাচ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে সরকার ও সমাজের অবহেলাই মূল কারণ। এটিকে সংরক্ষণ না করলে পরবর্তী প্রজন্ম কেবল বইয়ের পাতায় এর কথা জানবে।
এখন প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিত উদ্যোগ। স্কুল-কলেজে পুতুলনাচের প্রদর্শনী, উৎসব আয়োজন এবং পটুয়াদের প্রশিক্ষণ-ভাতা চালুর মাধ্যমে আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। না হলে একদিন সত্যিই ইতিহাস হয়ে যাবে গ্রামীণ পুতুলনাচ, আর শিশুরা হারাবে এক আনন্দঘন শৈশব।
আবির