ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেস্টে মাশরাফির ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিং

প্রকাশিত: ২০:১৩, ২৩ মে ২০২০

টেস্টে মাশরাফির ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিং

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার নিজেদের প্রথম টেস্ট ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সেই টেস্টে অনেকগুলো রেকর্ড গড়ে প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত খেললেও দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত হেরে যায় স্বাগতিকরা। এরপর আর ভারতের সঙ্গে টেস্টে পেরেই ওঠেনি বাংলাদেশ। তবে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে সিরিজের প্রথম টেস্টেই ধাক্কা খায় তারা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ১৮ মে শুরু হওয়া ম্যাচটি পঞ্চমদিনে (২২ মে) শেষ হয়। প্রথমবার হার এড়াতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। উদ্বোধনী টেস্টে ৯ উইকেটে হারলেও, পরে আরও দুই টেস্ট খেলে ভারতীয় দলের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হারতে হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ সালের এই চট্টগ্রাম টেস্টে ভারতের সঙ্গে প্রথমবার কোন টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ। আর এর পেছনে মূল ভূমিকা ছিল পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্যাটিং নৈপুণ্য! প্রথম ইনিংসে বল হাতে ৪ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে টেস্টে নিজের সেরা ৭৯ রানের ইনিংস খেলে বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন। তাই ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টেস্টে ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে তোলেন। ২০০০ সালে নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ দল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ১০ থেকে ১৩ নবেম্বর হওয়া সেই একমাত্র টেস্টে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে পরাজিত হয় স্বাগতিকরা। এরপর ভারতের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে আরেক সিরিজ খেলে দেশের মাটিতে এবং দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানের পরাজয় বরণ করে। এর ৩ বছর পর আবার বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্ট মাঠে গড়ায় ১৮ মে। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। এই টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ছিল বৃষ্টির দাপট। তবে ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার ওয়াসিম জাফরকে বোল্ড করে দিয়ে মাশরাফি জোরালো ধাক্কা দেন ভারতকে। কিন্তু তাদের শক্ত ব্যাটিং লাইন ঘুরে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় উইকেটে ১২৪ রানের জুটি গড়েন দিনেশ কার্তিক ও দ্রাবিড়। সেই জুটিও ফিরতি স্পেলে বোলিংয়ে এসে ভেঙ্গে দেন মাশরাফি, এবার সাজঘরে ফেরান ৫৬ রান করা কার্তিককে। দ্রাবিড়ও (৬১) দ্রুত ফিরে যান এরপর শাহাদাত হোসেন রাজিবের পেসে। জোড়া এই ধাক্কা ভারতীয়রা সামলে ওঠে শচীন টেন্ডুলকর (১০১) ও সৌরভ গাঙ্গুলীর (১০০) জোড়া শতকে। শচীনকে শাহাদাত ও গাঙ্গুলীকে মাশরাফি শিকার করেন। এরপর মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও (৩৬) সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। বৃষ্টির দাপটে দ্বিতীয় দিনের অনেকখানি আর পুরো তৃতীয় দিন ভেসে যায়। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দিনের শুরুতেই ৮ উইকেটে ৩৮৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। মাশরাফি নেন ৯৭ রানে ৪ উইকেট। শাহাদাত পান ৩টি। টেস্ট ড্র করার দারুণ সুযোগ পেয়েও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা হতাশা উপহার দেন, শঙ্কা দেখা দেয় বাকি দু’দিনেই পরাজয়ের। প্রথম ইনিংসে নেমে ১২২ রানেই ৭ উইকেট এবং ১৪৯ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৮ নম্বরে নেমে মাশরাফি এই বিপদে খেলেন ক্যারিয়ারসেরা ৭৯ রানের ইনিংস। নবম উইকেটে তিনি শাহাদাতের সঙ্গে ৭৭ রানের জুটি গড়ে দলের নাজুক পরিস্থিতি সামাল দেন। ক্যারিয়ারের প্রথম সেই অর্ধশতক পাওয়া মাশরাফি সিরিজের পরের টেস্টেই ৭০ রানের আরেকটি ইনিংস খেলেছেন এবং পরবর্তীতে করেছেন আরেকটি অর্ধশতক। কিন্তু ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে ম্যাচ বাঁচানো ৯১ বলে ৭ চার, ৩ ছক্কায় করা ৭৯ রানের ইনিংসটি অনন্য এবং এখন পর্যন্ত সেরা টেস্ট ইনিংস মাশরাফির। শেষ পর্যন্ত ২৩৮ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয়রা দ্রুত রান তুলতে গিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১০০ রানেই দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে তারা। মোহাম্মদ রফিক ৩, শাহাদাত ২ আর মাশরাফি ১ উইকেট নেন। ২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২ উইকেটে ১০৪ রান তুলতেই টেস্টটি ড্র হয়ে যায়। জাভেদ ওমর ৫২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
×