ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভিলিয়ার্স ছোঁয়ায় জিতল রংপুর

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

ভিলিয়ার্স ছোঁয়ায় জিতল রংপুর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিপিএলে প্রথমবার খেলতে নেমে খুব যে বিধ্বংসী ব্যাটিং করেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স তা নয়। কিন্তু তার ছোঁয়ায় যেন ‘জাদু’ মিশে রইল। দলের ক্রিকেটারদের ভেতর আলাদা রকম আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠল। সেই আত্মবিশ্বাসে ১৯৫ রানের বিশাল টার্গেটেও জিতে গেল রংপুর। সিলেট সিক্সার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়ে আবার জয়ের ধারায় ফিরল রংপুর। ভিলিয়ার্স বিপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন শনিবার। সেই ম্যাচেই সিলেটকে হারিয়ে গত ম্যাচেরই সিলেটের কাছে হারের প্রতিশোধ নিয়ে নিল রংপুর। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষদিনে প্রথম ম্যাচে জিতে বেহাল অবস্থা থেকে বেরও হলো মাশরাফির দল। ম্যাচটি জিতে পয়েন্ট তালিকায় সেরা চারে আবার আসল দলটি। ম্যাচটিতে আসলে মূল আকর্ষণ ছিলেন ভিলিয়ার্স। তিনি প্রথমবারের মতো বিপিএল খেলছেন। শনিবার প্রথম ম্যাচে খেলতেও নেমেছেন। ‘৩৬০ ডিগ্রী’ খ্যাত এ দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যানের ছোঁয়ায় রংপুরও হারের ‘গর্ত’ থেকে বের হতে পারবে এমন আশাই দেখা হয়েছিল। ভিলিয়ার্সও ২১ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৪ রান করেন। বিধ্বংসী ব্যাটিং মিলল না। তবে রাইলি রুশোর সঙ্গে যে তৃতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটি গড়েন, সেটিই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। এই জুটি না হলে ম্যাচে জয় পাওয়া কঠিনই হতো। এমনকি জয়টি নাও মিলতে পারত। তখন রংপুরের ‘প্লে-অফে’ খেলার পথও অনেক কঠিন হয়ে উঠতো। হারের গোলকধাঁধা থেকেও বের হলো রংপুর। ম্যাচটিতে ভিলিয়ার্সের সঙ্গে সিলেট অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের দিকেও সবার নজর ছিল। তিনি যে আজ অস্ট্রেলিয়া চলে যাবেন। শনিবার বিপিএলের এবারের আসরে শেষ ম্যাচ খেললেন। এবার ১৯ রানের বেশি করতে পারেননি ওয়ার্নার। আবার দলও জয় পেল না। হার নিয়েই বিপিএল শেষ করছেন ওয়ার্নার। তবে এই ম্যাচটিতে খারাপ খেললেও বিপিএলের আকর্ষণ যতটুকু তা ওয়ার্নারের দুর্দান্ত কয়েকটি ইনিংসের জন্যও বেড়েছে। তবে শেষ ম্যাচটিতে আর জয়ের মুখ দেখতে পারেননি ওয়ার্নার। টস জিতে রংপুর আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিলেট আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে তা ভালভাবেই কাজে লাগায়। সাব্বির রহমান রুম্মনতো অসাধারণ ব্যাটিং করেন। শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচের আগ পর্যন্ত এবার বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে সবচেয়ে বড় ইনিংসটিই খেলেন সাব্বির। ৫১ বলে ৫ চার ও ৬ ছক্কায় ৮৫ রানের ইনিংস উপহার দেন। তার এই বিধ্বংসী ইনিংসের সঙ্গে নিকোলাস পুরানের (২৭ বলে অপরাজিত ৪৭ রান) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯৪ রান করে সিলেট। আর ৬ রান হলেতো ২০০ রানই স্কোরবোর্ডে জমা হতো। এরপরও যে রান হয়েছে তা এবার বিপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরই। শুরুতে সিলেট একটু ধাক্কা খেলেও তা সামলে নেয় দ্রুত। দ্বিতীয় উইকেটে সাব্বির-আফিফ হোসেন ধ্রুব মিলে ৩৯ রানের, তৃতীয় উইকেটে সাব্বির-ওয়ার্নার মিলে ৫১ রানের জুটি গড়েন। তবে চতুর্থ উইকেটে যে সাব্বির-পুরান মিলে ৮২ রানের জুটি গড়েন, সেই জুটিতেই এত বড় স্কোর দাঁড় হয়। সাব্বিরতো নিজেকে আলাদাভাবেই এবার বিপিএলে উপস্থাপন করছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা ২ উইকেট নেন। তবে ৪ ওভারে ৩১ রান দেন। এত বড় স্কোরের জবাব দেয়াটা কঠিন থাকলেও রংপুরের ত্রাস ঘটানো ব্যাটসম্যানের অভাব ছিল না। রংপুরের ব্যাটিং লাইনআপ দেখলেতো মনে হবে, দেশের বাইরের কোন দল খেলছে। প্রথম চার ব্যাটসম্যানই বিদেশী। চারজনই আবার ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। ক্রিস গেইল, এ্যালেক্স হেলস, রাইলি রুশো ও ভিলিয়ার্স। একজন ব্যর্থ হলেই আরেকজন ভরসা হয়ে উঠতে পারবেন। তাই হয়েছে। বরাবরের মতো গেইল আবারও ব্যর্থ হয়েছেন। রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তবে হেলস আবার একাদশে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। ২৪ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। দলের ৬৩ রানে হেলস আউটের পর রুশো ও ভিলিয়ার্স মিলে হাল ধরেন। দুইজন মিলে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজনই মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন। একটা সময়তো মনে হয়েছে এই দুই ব্যাটসম্যানই খেলা শেষ করে ফেলবেন। কিন্তু দলের ১৩০ রান হতেই রংপুরের জয়ের আশা ফিকে হতে থাকে। এই সময় ৩৫ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রান করা রুশোকে আউট করে দেন তাসকিন আহমেদ। যিনি এবার বিপিএলে অসাধারণ বোলিং করছেন। জাতীয় দলে আবার ফেরার মতো বোলিং হচ্ছে। আর ৭ রান যোগ হতেই ভিলিয়ার্সকেও আউট করে দেন তাসকিন। দল পুরোই বিপদে পড়ে যায়। তাসকিন এক ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে রংপুরকে খাদের কিনারায় ফেলে দেন। তখনও রংপুরের জিততে ৩৬ বলে ৫৮ রান লাগতো। এমন মুহূর্তেও রংপুরের যে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন তারাই দলকে জেতানোর মতো নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু আবারও যখন তাসকিনের গতির কাছে হার মানেন মোহাম্মদ মিঠুন ও নাহিদুল ইসলাম, তখন হারের সম্ভাবনা জেগে যায়। ১৮তম ওভারে দলের ১৭১ রানের মধ্যে মিঠুন ও নাহিদুলকে আউট করে দেন তাসকিন। বিপিএলে সবচেয়ে বেশি উইকেটশিকারি হয়ে যান। এই ম্যাচেও ৪ উইকেট নিয়ে রংপুরকেও হারের মুখে ফেলে দেন। ১২ বলে জিততে ২৪ রান লাগে। টি২০তে তা সম্ভব। কিন্তু ব্যাটসম্যানতো থাকা লাগবে। মাশরাফি ও ফরহাদ রেজাকে নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু সেই ভয় এই দুইজনই জয় করে দেখালেন। মেহেদী হাসান রানার করা ১৯তম ওভারে ফরহাদতো একটি ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে দেন। মাশরাফিও বাউন্ডারি হাঁকান। তাতে করে এই ওভারেই ১৯ রান আসে। জিততে তখন ৬ বলে ৫ রান লাগে। জয় তখন রংপুরের মুঠোয় এসে পড়ে। চরম উত্তেজনা তৈরি হয় ম্যাচে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত ফরহাদ (১৮*) বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রংপুরকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। মাশরাফি অপরাজিত ৫ রান করেন। দল ৬ উইকেট হারিয়ে ৩ বল বাকি থাকতে ১৯৫ রান করে জিতে। যে রান করে জিতে রংপুর, সিলেটকে একই ম্যাচে টপকে এবারের আসরে সর্বোচ্চ দলীয় রান রংপুরেরই হয়ে যায়। ভিলিয়ার্স যোগ হওয়াতেই রংপুরের রূপ যেন বদলে গেল। ভিলিয়ার্স ছোঁয়ায় রংপুর জিতলও। স্কোর ॥ সিলেট সিক্সার্স ইনিংস- ১৯৪/৪; ২০ ওভার (লিটন ১১, সাব্বির ৮৫, আফিফ ১৯, ওয়ার্নার ১৯, পুরান ৪৭*, জাকের ৫; মাশরাফি ২/৩১)। রংপুর ইনিংস- ১৯৫/৬; ১৯.৩ ওভার (গেইল ০, হেলস ৩৩, রুশো ৬১, ভিলিয়ার্স ৩৪, মিঠুন ১৪, নাহিদুল ১৯, মাশরাফি ৫*, ফরহাদ ১৮*; তাসকিন ৪/৪২)। ফল ॥ রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রাইলি রুশো (রংপুর রাইডার্স)।
×