ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই, ভাবনায় বিশ্বকাপ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ মার্চ ২০১৭

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই, ভাবনায় বিশ্বকাপ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এবার খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে বাংলাদেশ। এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থাকতে পারলে ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলাও নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ। এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর স্থানে আছে মাশরাফিবাহিনী। যদি ২৫ মার্চ প্রথম ওয়ানডে দিয়ে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারে, তাহলে র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে ওঠার সুযোগ রয়েছে। তাতে করে বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। তাই বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশের সামনে এখন প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা থাকলেও ভাবনায় বিশ্বকাপই আছে। বিশ্বকাপে খেলার জন্য এবার নতুন নিয়ম হয়েছে। আগে ১৪টি দল বিশ্বকাপ খেলতে পারলেও ২০১৯ সাল থেকে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে টুর্নামেন্টে ১০ দল খেলতে পারবে। স্বাগতিকরা সরাসরি খেলার সুযোগ পাবে। তার মানে ইংল্যান্ড নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ খেলবে। এর বাইরে র‌্যাঙ্কিয়ের সেরা সাতটি দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ করে নেবে। তাতে করে ইংল্যান্ডকে বাদ দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা সাতটি দল খেলবে বিশ্বকাপ। বাকিরা বাছাইপর্ব খেলবে। আইসিসির সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে বাছাইপর্ব হবে। বাছাইপর্ব থেকে দুটি দল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ এখন সাত নম্বরে থাকায় অনেকটাই নিরাপদে আছে। তবে বাংলাদেশের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে আট নম্বরে থাকা পাকিস্তান ও নয় নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যদি ইংল্যান্ড র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকে, তাহলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারবে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকা দলগুলো। সেক্ষেত্রে এখন যে অবস্থা আছে সেভাবে চললে বাংলাদেশ বিশ্বকাপেও সরাসরি খেলবে। বাছাইপর্ব খেলার দরকার পড়বে না। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট ৯১। পাকিস্তানের ৮৯। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট ৮৪। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে রেটিং পয়েন্টে খানিক পার্থক্য থাকলেও পাকিস্তানের সঙ্গে নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের খেলা না থাকায় সুবিধাই হয়েছে। কারণ র‌্যাঙ্কিংয়ের নিচের সারির দলের সঙ্গে খেলে হারলে রেটিং পয়েন্ট বেশি করে কমে। আর র‌্যাঙ্কিংয়ের ওপরের দলের সঙ্গে খেলে জিতলে রেটিং পয়েন্ট বেশি করে বাড়ে। বাংলাদেশ তাই নিরাপদ জোনে আছে এ মুহূর্তে বলাই যায়। আবার সামনেই আছে শ্রীলঙ্কা। যাদের অবস্থান এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে। লঙ্কানদের রেটিং পয়েন্টও ৯৮। বাংলাদেশ থেকে ৭ রেটিং পয়েন্ট বেশি আছে তাদের। কিন্তু যদি বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে যায়, তাহলে শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে র‌্যাঙ্কিংয়ের ছয় নম্বরে উঠে যাবে। তখন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ খেলাও নিশ্চিত হয়ে যাবে, তা মোটামুটি বলা যায়। কারণ সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্টে শুধু আয়ারল্যান্ডই র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকা প্রতিপক্ষ থাকবে। এছাড়া সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সব প্রতিপক্ষই র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ওপরের দল। সেক্ষেত্রে তাদের বিপক্ষে হারলেও রেটিং পয়েন্ট বেশি কমবে না। আর যদি কোনভাবে দুই-একটি ম্যাচ জেতা যায়, তাহলে তো রেটিং পয়েন্ট আরও মজবুত হয়ে যাবে। তখন বিশ্বকাপে খেলার ভিত আরও মজবুত হয়ে যাবে। বাংলাদেশের রেটিং পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগও তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজটি। সামনে তাই শ্রীলঙ্কা থাকলেও ভাবনায় থাকছে বিশ্বকাপই। এ সিরিজে জেতার চেষ্টাও তাই করবে বাংলাদেশ। এমনটা আগেই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি বলেছিলেন, ‘সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজ জেতা সম্ভব। আমাদের যে দল সব বিভাগে ভাল করতে পারলে সিরিজ জেতা অবশ্যই সম্ভব। টেস্টের চেয়ে ওয়ানডেতে অবশ্যই প্রত্যাশা বেশি। আমাদের মতো সমর্থকদেরও তাই। লাল বল থেকে সাদা বলে আসা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার ব্যাপার। প্রত্যাশা তো অবশ্যই আছে। তার জন্য ভাল খেলতে হবে। টেস্টেও আমরা শুরু থেকে ভাল খেলেছি, ফলাফল ভাল হয়েছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যদি ওয়ানডে স্কোয়াড দেখেন, বেশিরভাগ টেস্ট স্কোয়াডের খেলোয়াড়। তারা তাই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে। কারণ বড় ফরমেটে বড় একটা ম্যাচ জিতেছে। তারপরও আমার মনে হয় ব্যাটিংটা একটু চিন্তা থাকতে পারে। কারণ ওদের কয়েকজন ভাল বোলার আছে। আর আমরা টানা পাঁচটা টেস্ট খেলার পর সাদা বলে খেলব। এখন যেটা হবে, আমাদের রান বের করতে হবে। ওদের কিছু ‘ক্রিটিক্যাল’ বোলার আছে, তাদের কাছ থেকে রান বের করাটা কঠিন হবে। মানসিকভাবে নির্ভার থাকলে শুরুটা ভাল করতে পারলে সব ভাল হবে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৩৮টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। ৩৩টিতে হারের বিপরীতে ৪টি ম্যাচে জিতে। রেজাল্ট হয়নি একটি ম্যাচে। নিজেদের মাটিতে তিন ম্যাচে জেতার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার মাটিতেও একটি জয় আছে। ২০১৩ সালে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কা সফরে পাল্লেকেলেতে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই জয়টিকে প্রেরণা হিসেবে নিচ্ছেন মাশরাফি। বাংলাদেশ দলে যে বিশ্বকাপ ভাবনাও আছে, তা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে, সেই ভাবনা করছেন। সেখানে সরাসরি বিশ্বকাপ না খেলার তো যেন অপশন ভাবতেই পারছেন না। পাপন বলেছেন, ‘বাংলাদেশ একদিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে। লক্ষ্য নিয়েই বোর্ড এগুচ্ছে। আমাদের যেসব কার্যক্রম, নতুন কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই তো সেগুলো করছি। এখানে লক্ষ্য আমাদের একটাই ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া। কাজটি কঠিন, কিন্তু পরিশ্রম করলে অবশ্যই তা সম্ভব। সেই যোগ্যতা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আছে। ক্রিকেটারদের মধ্যে যে বন্ধন গড়ে উঠেছে এবং জয়ের যে একটা বিশ্বাস ও আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে, তাতে বাংলাদেশ এখন কোন দলকে ভয় পায় না। এভাবে এগুতে পারলে অবশ্যই বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব।’
×