ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটের আয়েশি জয় নিউজিল্যান্ডের

যথারীতি হার দিয়েই বছর শুরু মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

যথারীতি হার দিয়েই বছর শুরু মাশরাফিদের

মিথুন আশরাফ ॥ পুরনো বছর যেমনভাবে শেষ হয়েছে, নতুন বছরও তেমনভাবেই শুরু হয়। দুইদিকেই যুক্ত থাকল হার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি২০তে ৬ উইকেটে হার দিয়েই নতুন বছর শুরু করল বাংলাদেশ। ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪১ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ম্যাচটিতে বাংলাদেশের হয়ে অর্ধশতক করতে পেরেছেন। ৫২ রান করেছেন। বাকি সব ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে তামিম ইকবাল (১১), সাব্বির রহমান রুম্মন (১৬), সাকিব আল হাসান (১৪) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (২০) দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছেন। কিন্তু কেউই ২০ রানের বেশি করতে পারেননি। আর তাতে করে জয়ের ভিত শুরুতেই গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। নেপিয়ারের ম্যাকলিয়ন পার্কে ১৬০ রানের বেশি করতে না পারলে জেতা কঠিন। তা আগেই বোঝা গেছে। এ স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো হওয়া আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে ১৬০ রানের ধারে কাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। হারও হয়েছে নিয়তিই। বল হাতে লকি ফার্গুসন (৩/৩২) ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর ব্যাট হাতে আরাম আয়েশে জয় তুলে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ৭৩ ও কলিন গ্র্যান্ডহোমের অপরাজিত ৪১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮ ওভারে ১৪৩ রান করে জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় আবারও একটি ম্যাচ হেরে গেল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচসহ টানা ৫ ম্যাচে হারল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এরআগে কখনই টি২০ ম্যাচে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেই অধরা জয়টি পাওয়ার মিশনেই নেমেছিল বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচেও হার এড়ানো গেল না। নিউজিল্যান্ডে এরআগে ২০১০ সালে একটিমাত্র টি২০ ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। তাতে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল। এবার হারের ব্যবধান কমেছে। হবে সেই গোলকধাঁধা থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১০ সালের পর ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি২০ বিশ্বকাপে ৫৯ রানে, ২০১৩ সালে মিরপুরে ১৫ রানে ও গতবছর টি২০ বিশ্বকাপে ভারতে ৭৫ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। শুধু দেশের মাটিতে হওয়া টি২০ ম্যাচটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পেরেছিল। বাকি সবম্যাচেই বাজেভাবে হেরেছে। এবারও বাজেভাবে হারই হলো। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টি২০ সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। ওয়ানডের চেয়ে টি২০তে দুর্বল দল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর দলের বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। তারপরও আশা ছিল, যদি টি২০ সিরিজে দেশের মাটিতে সাফল্যে ঘেরা বাংলাদেশ দলকে কোনভাবে মিলে যায়। টি২০ দিয়েই নতুন বছর শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে সিরিজে ব্যাটসম্যানদের যে দুর্দশা দেখা গেছে বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের; সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি মিলবে নতুন বছরে? সেই প্রত্যাশাই করা হয়েছিল। কিন্তু সব আশা হতাশায় পরিণত হলো। এখন ৬ ও ৮ জানুয়ারি যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচে বাংলাদেশ কিছু করে দেখাতে পারলেই হয়। না হলে ওয়ানডের দশা টি২০তেও ভর করতে পারে। ওয়ানডেতে তামিম-ইমরুল জুটি ভাল করেছে। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি২০তে সেই ঝলক শেষ। দুইজনই ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাব্বিরকে টি২০ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান ধরা হয়। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন। সাকিব এখন নিজের জন্য নয়। দলের জন্যই খেলেন। কিন্তু দলের জন্য কিছুই দিতে পারেননি। প্রথম ওয়ানডের পর একাদশের বাইরে রাখা সৌম্য সরকারকে টি২০তে আবার সুযোগ দেয়া হলো। তিনিতো রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরলেন। মাঝখানে ৬৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যখন ১০০ রানের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখন মাহমুদুল্লাহ ও মোসাদ্দেক মিলে প্রতিরোধ গড়েন। ষষ্ঠ উইকেটে দুইজন মিলে ৩২ রানের জুটি গড়েন। যে জুটি দলকে ১০০ রানের কাছাকাছি নিয়ে যায়। ৯৯ রানে মোসাদ্দেকও আউট হয়ে যান। মাহমুদুল্লাহ যদি অর্ধশতকের একটি ইনিংস না খেলতেন তাহলে দল শেষ পর্যন্ত ১৪১ রানেও যেতে পারত না। এতটাই খারাপ অবস্থা হয়েছে ব্যাটসম্যানদের যে উইকেট থেকে রান তোলাই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। রান করাটা যেন অনেক কষ্টের ব্যাপার। অথচ সেই কাজটি উইলিয়ামসন ও গ্র্যান্ডহোম কত সহজেই না করে দেখালেন। ৬২ রানে ৪ উইকেট পতনে নিউজিল্যান্ডও কিছুটা চাপে পড়ে যায়। কিন্তু সেই চাপ সহজেই সামাল দেন উইলিয়ামসন ও গ্র্যান্ডহোম। শুধু সামালই দেন না পঞ্চম উইকেটে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও গড়েন। যে জুটি দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়ে। উইলিয়ামসন ও গ্র্যান্ডহোম যদিও ‘নতুন জীবন’ পান। কিন্তু এমন ব্যাটসম্যানরা সুযোগ পেলে যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন, সেটিও সবারই জানা। সুযোগ পেলেন উইলিয়ামসন ও গ্র্যান্ডহোম। সেই সুযোগে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠও ছাড়লেন। গতবছর ভারতে হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে টানা চারটি ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ দল। সর্বশেষ ম্যাচটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটি গতবছরের শেষ টি২০ ম্যাচ ছিল। নতুন বছরের প্রথম ম্যাচটিও কিউইদের বিপক্ষেই খেলেছে বাংলাদেশ। তাতেও হার হয়েছে। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার টি২০ ম্যাচটি দিয়েই নেপিয়ারের ম্যাকলিয়ন পার্কে প্রথমবারের মতো টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এরআগে এ স্টেডিয়ামে ১০টি টেস্ট ও ৪১টি ওয়ানডে ম্যাচের ফল মিলেছে। গতবছর পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির জন্য তা হয়নি। এ স্টেডিয়ামে ২০১৫ সালের মার্চের পর আর কোন ওয়ানডে ম্যাচ হয়নি। এমনকি ২০১২ সালের পর কোন টেস্ট ম্যাচও হয়নি। টেস্ট ও ওয়ানডেগুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই দেখা গিয়েছিল, উইকেটে রান ভালই হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা সেই রানই স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারেননি। টি২০ ক্রিকেটে বেশি রান স্কোরবোর্ডে যোগ না হলে কি আর হয়। কোনভাবেই হয় না। তাই নতুন বছরের শুরুটাও হার দিয়েই হলো বাংলাদেশের।
×