ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৌরভ নূর

সৌখিন গাড়ি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

সৌখিন গাড়ি

শখের দাম লাখ টাকা। কখনও কখনও কোটি টাকাও কিংবা তারও বেশি। আর সেটা যদি হয় আভিজাত্য প্রকাশের মাধ্যম তাহলে তো কথাই নেই। এর আগে ভারতে এক নাপিত কিনেছিল কোটি টাকা দামের রোলস রয়েস গাড়ি! প্রতিশোধ নিতে রাজস্থানের আলওয়ার রাজ্যের মহারাজা জয়সিংহ বিশ্বের এক নম্বর রোলস রয়েস গাড়িকে ময়লা টানা গাড়ি হিসেবে কাজে লাগিয়েছিলেন। যে গাড়িতে চড়ে বেড়ান গ্রেট ব্রিটেনের রাজা-রানীরা। যাই হোক, প্রয়োজন কিংবা শখ, নিজের একটা বাহন দৈনন্দিন জীবনে যতটা সুবিধা দিয়ে থাকে, তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আর সেক্ষেত্রে গাড়ির ভেতরেই যদি থাকে আরাম-আয়েশ করে চলাচলের সব সুবিধা, তাহলে তো কথাই নেই। চলতি বছর পুরো বিশ্বে বিলাসবহুল গাড়ির তালিকায় উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি গাড়ির নাম। তারই একটি রোলস রয়েস। বিশ্বজুড়ে সমাদৃত দ্রুতগতির এবং বিলাসবহুল গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েস অন্যতম। ১৯০৬ সালের ১৫ মার্চ চার্লস স্টুয়ার্ট রোলস এবং স্যার ফ্রেডরিখ হেনরী রয়েস যৌথভাবে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের দুজনের নামের শেষ মিলিয়ে নাম রাখা হয়। এ সময় গাড়ি তৈরির পাশাপাশি বিমানের ইঞ্জিন তৈরির কাজেও জড়িয়ে পড়ে তারা এমনকি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাইফেলও তৈরি করেছে এই ব্রিটিশ গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে রোলস-রয়েস লিমিটেড জাতীয়করণের মাধ্যমে সরকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তবে ১৯৮৭ সালে পুনরায় প্রাইভেট কোম্পানি খাতে চলে যায়। সবচেয়ে আধুনিক নকশায় তৈরি গাড়ি বললে কিন্তু এক কথায় চলে আসবে রোলস রয়েসের কথা। ২০১৫ সালের আকর্ষণ হিসেবে রোলস রয়েস বাজারে এনেছিল অত্যাধুনিক ‘ফ্যান্টম ড্রপহেড কুপে’। গাড়িটি কিনতে খরচ হয় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। বিলাসিতার জন্য এই একটা গাড়িই যথেষ্ট। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আর নজরকাড়া ডিজাইন যে কাউকে আকর্ষণ করবে। আর সবকিছুর পর যেটা ইচ্ছা করলেই করা যাবে তা হচ্ছে গাড়ির ছাদ খুলে ঘুরে বেড়ানো। শুধু সাজেই নয় বরং রোলস রয়েসের এই নতুন মডেলের গাড়ি চালানোতেও পাওয়া যাবে অনেক স্বস্তি। বলা হয়, রোলস রয়েসের নতুন এ গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো অনেকটা রাজপথে রাজার বেশে ঘুরে বেড়ানোর মতোই। এক সময় শুধু ব্রিটেনের রাজা রানীরা ব্যবহার করতেন রোলস রয়েস। তখন এসব গাড়ির দাম ছিল আকাশচুম্বী। বছরে মাত্র ৫০০টি গাড়ি তৈরি হতো। ১০ হর্সপাওয়ারের প্রথম রোলস রয়েস গাড়িটির দাম ছিল ৩৯৫ পাউন্ড, আর এখন সেটির দাম আড়াই লাখ পাউন্ডের বেশি। রোলস রয়েসের রেইথ সিরিজের সর্বশেষ গাড়িগুলোর দাম প্রায় সোয়া তিন লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় আড়াই কোটি টাকার বেশি। অভিজাতদের গাড়ি রোলস রয়েস অতিউচ্চ মূল্যের কারণে উচ্চবিত্তদেরও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে রোলস রয়েস। পঞ্চাশের দশক থেকে ব্রিটেনের রাজ পরিবার এই গাড়ি ব্যবহার করত। গাড়িটি রাজ পরিবার এবং রাষ্ট্র প্রধানদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হতো। ফ্যান্টম-৪ সিরিজের গাড়ি তৈরি হয়েছিল মাত্র ১৮টি। এ পর্যন্ত তৈরি হওয়া রোলস রয়েস গাড়িগুলোর ৬৫ শতাংশই সচল আছে এখনও। ফ্যান্টম সিরিজের একটি গাড়ি তৈরি করতে সময় লাগে দু’মাস। এই গাড়িগুলো পৃথিবীর অন্যতম দুর্লভ গাড়ি হিসেবে এখনও চাহিদার শীর্ষে। ষাটের দশকে এসে রোলস রয়েসের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। জন লেলন, জর্জ হ্যারিসন, ইনগ্রিড বার্গম্যান, ওমর শরিফের মতো সেলিব্রেটিরা ব্যবহার করতে শুরু করে রোলস রয়েস। ক্রমেই রুপালিপর্দার তারকায় পরিণত হয় রোলস রয়েস। রোলস রয়েস গাড়ির সিরিজগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যান্টম, গোস্ট এবং রেইথ। এর মধ্যে অন্যতম রেইথ সিরিজ। ১৯৫৫ সালের সিলভার ক্লাউড সিরিজের ৪ হাজার ৮৮৭ সিসি ইঞ্জিনের এই গাড়িগুলো ঘণ্টায় ১০৬ মাইল বেগে চলতে পারত। রেইথ সিরিজের সর্বশেষ গাড়িগুলোয় আছে ৬২৪ হর্সপাওয়ার ক্ষমতার ৬.৬ লিটার ভি-১২ ইঞ্জিন, ফলে মাত্র চার সেকেন্ডেই ঘণ্টায় ৬০ মাইল বেগ তুলতে সক্ষম। এছাড়াও জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের অবস্থান নির্ণয় করে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এমনকি মৌখিক নির্দেশের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা যায়। গাড়ির ছাদে লাগানো আছে এক হাজারের বেশি ফাইবার অপটিক ল্যাম্প, রাতে গাড়িতে চড়ার সময় মনে হবে আকাশের নিচে বসে তারা দেখছেন আপনি। রোলস রয়েসের মালিকানা চক্র রোলস রয়েস কোম্পানি যাতে জেট ইঞ্জিনের কাজে মনোযোগ দিতে পারে সেই উদ্দেশ্য ১৯৭৩ সালে গাড়ি উৎপাদন বিভাগটি আলাদা করে বিক্রি করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। এরপর ১৯৮০ সালে রোলস রয়েস মোটরকে অধিগ্রহণ করে ভিকারস। ১৯৯৮ সালে ভিকারসের কাছ থেকে রোলস রয়েসকে কিনে নেয় ভল্কসওয়াগন, এবং ২০০২ সালে পুনরায় মালিকানা বদল হয়ে রোলস রয়েসকে কিনে নেয় বিএমডব্লিউ। যদিও ১৯৯৮ সালেই রোলস রয়েসকে কিনতে চেয়েছিল বিএমডব্লিউ। কিন্তু বেশি দর হেঁকে রোলস রয়েস মোটর্সের মালিকানা পেয়ে যায় ভল্কসওয়াগন। অবশ্য ততদিনে গাড়ির অন্তর্দহ ইঞ্জিনের প্রয়োজনে বিএমডব্লিউ-এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল রোলস রয়েস। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিএমডব্লিউ ইঞ্জিন সরবরাহ করে, ভল্কসওয়াগন রোলস রয়েস নাম এবং লোগো ব্যবহারের অনুমতি পায়। এবং ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে বিএমডব্লিউ রোলস রয়েস উৎপাদন শুরু করে। এই হল সেই রোলস রয়েস যা অভিজাতদের প্রথম পছন্দ।
×