জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘এমন কষ্ট আর কোনদিন পায়নি, হয়ত পাবও না।’ বুধবার ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হাতের মুঠোয় থাকা জয় হাতছাড়া হওয়ার পর এই মন্তব্য করেন ক্রিকেটপ্রেমী শিহাব শাহরিয়ার তুতুষ।
এটা শুধু শিহাবের কথা নয়। ১৬ কোটি বাঙালীর মনের কথা। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে খেলে শেষ তিন বলে অপ্রত্যাশিত হার মানতে হয় বাংলাদেশকে। ১ রানের এই হারে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের। তারা কিছুতেই মানতে পারছেন না এই হার। এ জন্য ক্রিকেটপ্রেমীরা বিভিন্ন গঠনমূলক যুক্তিও তুলে ধরেছেন।
হারডিক পান্ডিয়ার করা শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। প্রথম বলে সিঙ্গেলস নেয়ার পর সমীকরণ দাঁড়ায় ৫ বলে ১০ রান। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচটা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন মুশফিকুর রহীম। এ সময় সমীকরণ দাঁড়ায় ৩ বলে ২ রান। দু’জন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান উইকেটে। মাত্র ১ রান করলেই ‘টাই’। অথচ এরপরই অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখেন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ। দু’জনই দায়িত্বহীনজ্ঞানহীন শট খেলে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আউট হন।
ফলে শেষ বলে জয়ের জন্য টাইগারদের প্রয়োজন হয় ১ বলে ২ রান। কিন্তু শুভাগত হোম ব্যাটে বল লাগাতে ব্যর্থ হন। রান নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন মুস্তাফিজুরকে নিয়ে। কিন্তু ধোনির বুদ্ধিমত্তার কাছে রানআউট হতে হয়। সঙ্গে সঙ্গেই সমাধি হয়ে স্বপ্নের। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিতের পাশাপাশি শোকে স্তব্ধ, পাথর হয়ে যায় বাংলাদেশের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থকরা। এই শোক যেন কাটছেই না লাল-সবুজেদের দেশের ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণদের। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন টগবগে যুবক তানভীর আলম। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমেও খেলেছেন। যে কারণে ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা বা জানাশোনাটাও তার বেশ। ম্যাচ শেষে তানভীর বলেন, ‘মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ দু’জনই স্বপ্ন দেখিয়েছিল। ব্যাটে বল লাগবে আর সোজা আছড়ে পড়বে গ্যালারিতে, উন্মাতাল দূরে হারিয়ে দেবে সব দুঃখগুলো। কিন্তু নিয়তির কাছে সব আবেগই হার মানে। ইচ্ছা ছিল প্রাণ খুরে চিৎকার করব। কিন্তু হলো না ...আফসোস ...’। একটি সফটওয়্যার কোম্পানির এইচআর এ্যান্ড এডমিন ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন, ‘খেলাটা অসাধারণ হয়েছে। তবে আমরা হেরে গেছি শুধু অভিজ্ঞতার কাছে। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ অযথাই উচ্চাবিলাসী শট খেলে ১৬ কোটি মানুষকে জয়ের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছে’। কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস ভারতের চতুরতা ও বাংলাদেশের চাপ নিতে না পারাকে বড় করে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘শেষ ওভারে ভারত মেন্টালি এ্যাটাক করেছে বাংলাদেশকে। প্রতি বল করার আগে তারা মিটিং করেছে। প্রতি বলের আগে এতটা সময়ক্ষেপণ সচরাচর দেখা যায় না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিকল্পনায় কিছুটা পিছিয়ে ছিল। শেষ বলের আগে টিম ম্যানেজমেন্টের উচিত ছিল দুই ব্যাটসম্যানকে বার্তা পাঠানো। আসলে চাপ নিতে না পারার কারণেই জয়টা হাতছাড়া হয়েছে’। পুরো বিশ্বকাপে নাসির হোসেনকে একটি ম্যাচও খেলানো হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে শুভাগত, মিথুনদের চেয়ে অনেক যোগ্য নাসির। এ প্রসঙ্গে সাইমুম রশীদ নামের একজন বলেন, ‘আমরা কেমন খেলেছি গোটা বিশ্ব দেখেছে। আমাদের টিম প্রমাণ করেছে নিজেদের সক্ষমতা। কিন্তু নাসিরকে না খেলিয়ে নির্বাচকরা যে গুটিবাজি করছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি। আর কত ম্যাচ অযোগ্য মিথুন, শুভাগতদের দিয়ে জেতা খেলা হারবে এই প্রশ্ন বিসিবির কাছে। আমরা নাসিরকে না খেলানোর ব্যাখ্যা চাই’।
ভক্ত-সমর্থকরা কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন দুই ভাইরা মুশফিক-মাহমুদুল্লাহকে। নিজেদের ভুল হয়ত বুঝতে পেরেছেন তারাও। তাই তো দেশবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুশফিকু। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ফেসবুকে দুঃখ প্রকাশ করে মুশি বলেন, ‘আমি জানি, গতকালের (২৩ মার্চ) হারটি আপনাদের জন্য অনেক বেদনাদায়ক ছিল ... কিন্তু দলের সকলেই প্রতি ম্যাচে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলে ... তাই আমার ও দলের সবার জন্যই পরাজয়টা কষ্টকর ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ রকম সময়ে আমার এভাবে আউট হওয়া ঠিক হয়নি ... হয়তো আমার জন্যই দল হেরে গেছে ... সে ক্ষেত্রে দেশবাসীর কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আশা করি, এটা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের মুখে আবারও হাসি এনে দিতে পারব।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমি এই হারের জন্য কাউকেই দায়ী করতে চাই না। তবে আমি মনে করি, তারা দুজনেই (মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ) আরেকটু সতর্ক হলে এই ম্যাচে আমরাই জিততে পারতাম’।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: