
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধে সক্ষম প্রোটিন তৈরি করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। ক্যানসার, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ইনফেকশন, এমনকি সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি করতেও এখন বিজ্ঞানীরা এআই প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। যেসব প্রোটিন তৈরি করতে আগে একাধিক দশক লেগে যেত, এখন তা তৈরি হচ্ছে চোখের পলকেই।
সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি কার্যকর বায়োলজিক্যাল প্রোটিন তৈরি করেছেন, যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া যেমন ই. কোলাই ধ্বংস করতে সক্ষম।
‘নেচার কমিউনিকেশন্স’-এ প্রকাশিত গবেষণা
বিশ্বখ্যাত জার্নাল Nature Communications-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, নতুন এই পদ্ধতি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ‘সুপারবাগ’ মোকাবিলায় এক বৈপ্লবিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে—যারা এরই মধ্যে উন্নত এআই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে হাজার হাজার কার্যকরী প্রোটিন তৈরি করছে।
এ গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ড. রিস গ্রিন্টার ও সহযোগী অধ্যাপক গ্যাভিন নাট, যিনি স্নো মেডিকেল ফেলো হিসেবে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি বায়ো২১ ইনস্টিটিউট ও মনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউট-এ AI Protein Design Program পরিচালনা করছেন।
তাদের দাবি, এই প্ল্যাটফর্মটি অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম—যা ২০২৩ সালে রসায়নে নোবেলজয়ী ডেভিড বেকার-এর মডেলের অনুরূপ একটি সম্পূর্ণ ‘এন্ড-টু-এন্ড’ পদ্ধতিতে কাজ করে, যার মাধ্যমে যেকোনো ধরণের প্রোটিন ডিজাইন করা সম্ভব।
ব্যবহারিক ক্ষেত্র ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সহযোগী অধ্যাপক নাট বলেন, ‘এই প্রোটিনগুলো এখন ফার্মাসিউটিক্যাল, ভ্যাকসিন, ন্যানো ম্যাটেরিয়াল ও ক্ষুদ্র সেন্সর তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্র এখনো পরীক্ষিত হয়নি।’
গবেষণায় ব্যবহৃত AI Protein Design Platform-এ এমন সব টুলস রয়েছে, যা বিশ্বের যে কোনো বিজ্ঞানী ব্যবহার করতে পারেন।
গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী পিএইচডি শিক্ষার্থী ড্যানিয়েল ফক্স বলেন, ‘আমরা চাই এই প্রযুক্তি সবাই ব্যবহার করতে পারুক। আমাদের তৈরি প্ল্যাটফর্মের সাহায্যে আমরা প্রোটিন ডিজাইন করতে পারি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে কাজ করার জন্য—হোক সেটা ইনহিবিটর, অ্যাগোনিস্ট, অ্যান্ট্যাগোনিস্ট বা কার্যকরী এনজাইম।’
ড. গ্রিন্টারের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চিকিৎসায় ব্যবহৃত বেশিরভাগ প্রোটিন প্রাকৃতিক উৎস থেকে নিয়ে সেগুলোকে পুনরায় ডিজাইন করে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নতুন ‘ডিপ লার্নিং’-ভিত্তিক প্রযুক্তিতে এখন একেবারে নতুন প্রোটিন তৈরি করা সম্ভব—যার ফলে ব্যয় কমছে, সময়ও বাঁচছে।
অস্ট্রেলিয়ার অর্জন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রফেসর জন ক্যারল, মনাশ বায়োমেডিসিন ডিসকভারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বলেন, ‘এই প্রোটিন ডিজাইন প্রোগ্রাম অস্ট্রেলিয়াকে নতুন প্রজন্মের থেরাপিউটিকস ডিজাইনের দৌড়ে সামনের কাতারে নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, তরুণ দুই বিজ্ঞানীর নিরলস পরিশ্রমে এই সক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
অধ্যাপক নাট জানান, ‘আমাদের টিমে রয়েছে দক্ষ স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী, যারা প্রোটিনের গঠন ও ডিজাইন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বুঝে কাজ করেন। ফলে আমরা নতুন নতুন AI টুলস সহজেই অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’
সূত্র: https://www.sciencedaily.com/releases/2025/07/250710113152.htm
রাকিব