
ছবি: সংগৃহীত
আগের চেয়ে দ্রুত ঘুরছে পৃথিবী। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসছে একটি দিনের দৈর্ঘ্য। সম্প্রতি এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকদের মতে, এই পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক চক্রের অংশ হলেও, আগামী কয়েক মাস ধরেই এর প্রভাব থাকতে পারে।
এই খবর সামনে আসার পর সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে— কেন দ্রুত ঘুরছে পৃথিবী? আর এতে আমাদের জীবনে কি কোনো বাস্তব প্রভাব পড়বে?
পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর প্রতিনিয়ত ঘূর্ণায়মান। আর এই ঘূর্ণনের কারণেই সৃষ্টি হয় দিন ও রাত। তবে ২০২৫ সালে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, এই ঘূর্ণনের হার কিছুটা বেড়ে গেছে। যার অর্থ, এখন একদিন শেষ হতে ২৪ ঘণ্টার কম সময় নিচ্ছে।
ঘূর্ণনের পেছনে কাজ করছে একাধিক প্রাকৃতিক উপাদান
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পৃথিবীর ভেতরের ও বাইরের নানা প্রাকৃতিক উপাদান ও ঘটনা একসঙ্গে কাজ করছে এই পরিবর্তনের পেছনে। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর অভ্যন্তরে গলিত লোহা ও মেন্টালের গতিবিধি, মহাসাগর ও বায়ুপ্রবাহ, বরফ গলার ফলে ভরের বণ্টনে পরিবর্তন, এমনকি ভূমিকম্পও এই ঘূর্ণন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল টাইম স্ট্যান্ডার্ড ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, মেরু অঞ্চলে বরফ গলার ফলে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রে সামান্য স্থানচ্যুতি হয়েছে, যা পৃথিবীর ঘূর্ণনের ত্বরণে প্রভাব ফেলছে।
কীভাবে পরিমাপ করা হয় এই পরিবর্তন?
পৃথিবীর ঘূর্ণনের হার এত নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে অত্যন্ত উচ্চ নির্ভুলতা সম্পন্ন পরমাণু ঘড়ি এবং লেজার রেঞ্জিং সিস্টেম ব্যবহার করে। ইন্টারন্যাশনাল আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেম সার্ভিস (IERS) প্রতিদিন পৃথিবীর ঘূর্ণনের সময় রেকর্ড করে। তাদের ডেটা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে একটি দিনের দৈর্ঘ্য গড়ে ১.৪ মিলিসেকেন্ড কমে গেছে।
লাইভ সায়েন্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক মাসে পৃথিবীর ঘূর্ণন আরও বাড়তে পারে এবং দিন আরও কয়েক মিলিসেকেন্ড ছোট হতে পারে।
এর প্রভাব পড়বে কোথায়?
টাইম ম্যাগাজিন-এর মতে, দিনের দৈর্ঘ্য কয়েক মিলিসেকেন্ড কমে গেলে তা ঘুম, খাবার বা কাজের রুটিনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই সময়ের পার্থক্য জমতে জমতে প্রভাব ফেলতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা, জিপিএস, উপগ্রহ, পরমাণু ঘড়ি, এমনকি ব্যাংকিং, বিমান চলাচল ও সামরিক অপারেশন-এর মতো খাতে।
কারণ এসব ক্ষেত্রের সময় নির্ধারণ অত্যন্ত নির্ভুল এবং সমন্বিত হওয়া দরকার। ফলে সময়ের অল্প পরিবর্তনেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
এই পরিবর্তন কতদিন স্থায়ী হতে পারে তা নিশ্চিত নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর ঘূর্ণন হার ভবিষ্যতে কমতেও পারে, আবার বাড়তেও পারে। এটি একটি প্রাকৃতিক চক্রের অংশ। তবে তারা আশ্বস্ত করেছেন— এর ফলে নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবী ধ্বংসের মুখে পড়বে না।
শেখ ফরিদ