ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

এইচআরডিবির ওয়েবিনারে বক্তারা

‘সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ালে মূলধারার রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে’

প্রকাশিত: ০০:১৪, ৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৭:৫৫, ৮ জুলাই ২০২৫

‘সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ালে মূলধারার রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হবে’

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ (এইচআরডিবি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে তা নারীর মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথকে আরো কঠিন করে তুলবে।

রবিবার (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ১১টা) অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশের সংসদে নারীর সংরক্ষিত আসনের ভবিষ্যৎ: চ্যালেঞ্জ ও সংস্কারের দিকনির্দেশনা” শীর্ষক এই ওয়েবিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ ও মানবাধিকার সংস্থা ‘সোচ্চার’-এর প্রেসিডেন্ট ড. শিব্বির আহমদ, নাগরিক কোয়ালিশনের সহ-সমন্বয়ক ও বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ফাহিম মাশরুর এবং ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব ফাতিমা তাসনিম জুমা।

ড. শিব্বির আহমদ বলেন, “সংরক্ষিত আসন একটি প্রাথমিক ক্ষমতায়নের পদ্ধতি হলেও, এটি কোনো টেকসই সমাধান নয়। বরং এতে অনেক সময় নারীরা মূলধারার রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে অপেক্ষাকৃত সহজ এই পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।” তিনি আরও বলেন, “সংরক্ষিত আসন বরাদ্দে নারীদের ভোটের হারকে ভিত্তি হিসেবে ধরলে দলগুলো নারীবান্ধব পলিসিতে উৎসাহিত হবে। ভোটের আগে সম্ভাব্য নারী সংসদ সদস্যদের একটি প্যানেল প্রকাশের প্রস্তাবও এই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।”

বিডিজবসের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাশরুর বলেন, “নীতিগতভাবে সংরক্ষিত আসন ১০০ তে উন্নীত করার প্রস্তাবের সাথে আমি একমত নই। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে সাধারণ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দিতেই বাধ্য করতে হবে। এটা হবে দীর্ঘমেয়াদে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কার্যকর পদ্ধতি।”

ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, “রাজনৈতিক মাঠ এখনও নারীদের জন্য সহায়ক হয়ে ওঠেনি। তাই সংরক্ষিত আসন বাড়ানোর আগে নারীদের জন্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরিসরে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। রাজনৈতিক দলের ভেতরে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়াতে হবে।”

তিন প্যানেলিস্টই সংরক্ষিত আসন বরাদ্দে ড. শিব্বির আহমদের প্রস্তাবকে ‘ইউনিক’ ও সময়োপযোগী আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটি বাস্তবায়িত হলে নারী সংসদ সদস্যদের কার্যকারিতা, জবাবদিহিতা এবং নেতৃত্ব প্রদানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে।”

এসময় সরকার কর্তৃক গঠিত সংবিধান কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতি তিনটি আসনের একটিতে নারী প্রার্থীদের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি তুলে ধরেন ফাহিম মাশরুর। তবে ড. শিব্বির ও ফাতিমা জুমা এতে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, “এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন ব্যয়বহুল এবং কঠিন হওয়ায় তা অনেক নারী প্রার্থীর জন্য নিরুৎসাহজনক হয়ে উঠতে পারে।”

সেমিনারের শেষ বক্তব্যে সঞ্চালক অধ্যাপক ড. নকিবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে অগ্রগতি হচ্ছে ঠিকই, তবে এখন সময় এসেছে সংরক্ষিত আসন পদ্ধতির কাঠামোগত সংস্কার ও আধুনিকায়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।”

ওয়েবিনারটিতে অংশগ্রহণকারীরা নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নতুন কৌশল ও বাস্তবমুখী সংস্কারের জন্য সম্মিলিত প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান।

আসিফ

×