
আজ ক্লাস শেষে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। রোদের তাপ ছিল নরম, হালকা বাতাস বইছিল চারপাশে। মাথায় ক্লাসের কিছু চিন্তা ঘুরছিল, কিন্তু পথের দৃশ্য মনোযোগ কেড়ে নিল।
রাস্তায় দেখি এক দম্পতি ধীরে ধীরে হাঁটছেন। দুজনের কোলেই একটি করে ছোট্ট শিশু। সেই হাঁটার মধ্যে ছিল ক্লান্তি, কিন্তু কোথাও যেন অভ্যস্ত এক ছন্দও। হঠাৎ খেয়াল করলাম, বাবার কোলে থাকা শিশুটি একটু বিরক্ত করছিল নড়াচড়া করছিল, হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছিল, বা কোল থেকে নামতে চাইছিল। আর বাবা তাকে বকা দিচ্ছিল বুঝি হাবিজাবি কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছিল, যেন নিজের বিরক্তি শিশুটির দুষ্টামির ওপর ঢেলে দিচ্ছে।
এই সময় পাশ থেকে মায়ের কণ্ঠে ভেসে এলো এক নরম কিন্তু দৃঢ় বাক্য- “আমার মনিটাকে নিতে ইচ্ছে না হলে আমাকে দিয়ে দিক, কিন্তু এভাবে বকা দিবে কেন।” কথাটা খুব শান্ত স্বরে বলা হলেও, তার ভিতরে ছিল এক শক্ত স্পর্শ ভালোবাসা, রক্ষা আর মমতার এক অদ্ভুত আবেশ।
তারপর বাবা কিছুটা বিরক্ত হয়েই শিশুটিকে মায়ের কোলের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মা নিঃশব্দে শিশুটিকে গ্রহণ করলেন, যেন ওটাই স্বাভাবিক, যেন এটাই প্রতিদিনের কাজ। আমি থমকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।
শিশুটি ‘মা মা’ বলতে বলতে কাঁদতে কাঁদতেই যেন হেসে উঠল। সেই হাসির মধ্যে মিশে ছিল চোখের জল, ভালোবাসা আর আশ্রয়ের নিঃশব্দ প্রশান্তি। একটা ছোট্ট মুখে কান্না আর হাসির একসাথে ফুটে ওঠা দেখে মনে হলো এই মুহূর্তটাই যেন জীবনের সবচেয়ে গভীর সংজ্ঞা।
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম মা একা দুই সন্তানকে দুই কোলে নিয়ে হাঁটছেন, অথচ তার মুখে নেই একফোঁটা বিরক্তি। না ক্লান্তির ছাপ, না কোনো অভিযোগ বরং শান্ত, আত্মস্থ এক মুখ। তার চোখে যেন কিছু একটা বলছিল “এটাই তো আমার, এদের নিয়ে বাঁচাই আমার আনন্দ,এদের জন্যই তো বেঁচে থাকা।”
আর সেই ছোট্ট মনিটার “মা” ডাকে লুকানো হাসিভেজা কান্না আমাকে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ করে দিল। আমার বুকের কোথাও যেন কেঁপে উঠল হালকা করে, অদ্ভুত এক অনুভূতিতে মন ভরে উঠল।
আসলে মা শব্দটাই হলো চোখের জলের হাসি। এই এক শব্দে লুকিয়ে থাকে সারা পৃথিবীর আশ্রয়, প্রশ্রয় আর নিঃশর্ত ভালোবাসার গল্প।
লেখা-
তনয় অধিকারী
শিক্ষার্থী, সরকারি বাঙলা কলেজ, রসায়ন বিভাগ।
আফরোজা