
বিখ্যাত ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার পর গর্বের জাতীয় পতাকা হাতে বাংলাদেশের দুই সাঁতারু সাগর (ডানে) ও হিমেল
বাংলাদেশের দুই সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর ও নাজমুল হক হিমেল ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর বাংলাদেশের দুই সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার বিরল কীর্তি গড়েছেন। ইংল্যান্ড সময় মধ্যরাত আড়াইটায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে নামেন তারা। শেষ পর্যন্ত ্সাগর-হিমেল সফলভাবে সাঁতার শেষ করে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছেন।
স্বপ্ন পূরণে সাগর ও নাজমুলকে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করতে হয়েছে। ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে স্লট বুকিং ছিল তাদের। বৈরী আবহাওয়ার জন্য কয়েকবার সময় পিছিয়েছে। অবশেষে মঙ্গলবার ইংল্যান্ড সময় মধ্যরাতে তারা ইংলিশ চ্যানেল অভিযান শুরু করেন। ১২ ঘণ্টা সাঁতরে সফলভাবে শেষ করেন দুই বাংলাদেশি সাঁতারু। ইংলিশ চ্যানেল কর্তৃপক্ষের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আসতে হয়ত কিছুটা সময় লাগতে পারে।
সেটা আসলেই তাদের কীর্তি ইতিহাসের পাতায় পাকাপাকিভাবে লিপিবদ্ধ হবে। বাংলাদেশের সাবেক তারকা সাঁতারু ও অলিম্পিয়ান মাহফিজুর রহমান সাগর বলেন, আমরা ৬ জনের একটি রিলে দল ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছি। বাংলাদেশ থেকে আমি ও নাজমুল ছিলাম। বাকি চারজনের একজন মেক্সিকান ও তিনজন ভারতীয়। রিলের মধ্যে আমিই প্রথম সাগরে নামি। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় ও পথ অতিক্রম করে সাঁতরাই। সবমিলিয়ে ১২ ঘণ্টা ১৫-২০ মিনিটের মতো লেগেছে।
সফলভাবে আমরা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছি। দুঃসাহসিক এই অভিযান শেষে মাহফিজুর রহমান সাগর সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ রহমত এবং আপনাদের সকলের নিরন্তর সমর্থনে, বাংলাদেশ দল ৬ জনের রিলে সাঁতারে ইংলিশ চ্যানেল জয় করেছে। ইংলিশ চ্যানেল আর কোনো কল্প কাহিনী নয়। ৩৭ বছরের অপেক্ষার পর, আমরা শেষমেশ করতে পেরেছি।
বাংলাদেশ এসে গেছে দৃপ্ত পদক্ষেপে। ইতিহাস রচিত হলো। সাগর-হিমেলের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে দুরন্ত এক ইতিহাস রচিত হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশি সাঁতারুদের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্রজেন দাস ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। এরপর আব্দুল মালেক ও মোশাররফ খানও এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি প্রায় সব সাঁতারুর স্বপ্ন। সাগরেরও এই স্বপ্ন ছিল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে ব্রজেন দাসের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার গল্প পড়েছি ও শুনেছি। যখন সাঁতারু হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করি তখন আরেক কিংবদন্তি সাঁতারু মোশাররফ হোসেন খানের ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করব। সেটা অবশেষে করতে পেরেছি।
একজন মানুষ যখন দীর্ঘদিন থেকে একটি স্বপ্ন লালন করে, সেটা বাস্তবায়ন হলে অনুভূতির ভাষা থাকে না। আমারও অনেকটা তাই। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন সাগর। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকেও খেলেছেন। এবার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। কোন মুহূর্তটা বেশি স্মরণীয়? এ প্রশ্নে সাগর বলেন, একজন অ্যাথলেটের স্বপ্ন থাকে অলিম্পিকে খেলা আবার অনেক সাঁতারুর কাছে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অলিম্পিকের সমানই। তবে আমার কাছে অলিম্পিকে বাংলাদেশের হয়ে অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়। অলিম্পিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্ট। সেখানে দেশের পতাকা বহনের চেয়ে একজন ক্রীড়াবিদের সম্মান আর কি হতে পারে।
ব্রজেন দাস, মোশাররফ হোসেন খান দু’ জনই একা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছিলেন। তবে সাগর এটা করেছেন রিলে দলের হয়ে। এ বিষয়ে সাগর বলেন, আমারও ইচ্ছে ছিল একাই পাড়ি দেওয়ার। একা পাড়ি দিতে ২০-২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আমার পক্ষে সেই টাকা বহন করা সম্ভব নয় আবার পৃষ্ঠপোষকতাও পাওয়া যায় না।
প্যানেল হু