
বন্দরনগরীর নিরাপত্তা বেষ্টনীহীন খালগুলো বর্ষা এলেই পরিণত হয় মৃত্যুকূপে। সেবা সংস্থাগুলো একেকটি মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসে। নাগরিকরা এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানকে মরণফাঁদ বলছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সাল থেকে নগরীর এসব খাল ও নালা-নর্দমায় পড়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ১৫ জন। নগরীর এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা আর খালের মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) আওতায় রয়েছে ৩০০ কিলোমিটার। বাকিটা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। ২০২১ সালের অক্টোবরে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ নালা-নর্দমা ও খালের একটি তালিকা করা হয়। ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৭টি জায়গায়। যেগুলোকে মরণফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশেষজ্ঞ দল।
নগরবাসীর দাবি, লোহার রেলিং দিয়ে অবিলম্বে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রাণহানি না ঘটে। নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্ল্যাব না থাকায় এসব জায়গায় বাঁশের সঙ্গে লাল ফিতার অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে আপাতত ঝুঁকি এড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে চসিক। সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪১ ওয়ার্ডের উন্মুক্ত খাল-নালার মোট ৫৬৩টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ১ নম্বর জোনে ৪৭টি, ২ নম্বর জোনে ৭৮টি, ৩ নম্বর জোনে ৬৮টি, ৪ নম্বর জোনে ৭৪টি, ৫ নম্বর জোনে ৩৩টি এবং ৬ নম্বর জোনে ২৬৩টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। নাগরিকদের চলাচলে দুর্ঘটনা এড়াতে এসব স্থানে বিভিন্ন পরিমাপের ৮৬৩টি স্ল্যাব বসানো এবং ১৪৬ জায়গায় নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হচ্ছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। ঝুঁকি এড়াতে দেওয়া হচ্ছে বাঁশের বেড়া। ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে। বাঁশ দিয়ে এখন যা হচ্ছে, তা নগরবাসীর সঙ্গে ছলচাতুরি ছাড়া কিছু নয়। নাগরিক জীবনকে সুরক্ষিত করতে খালের দুই তীরে সড়ক উন্নয়ন ও স্থায়ী বেষ্টনী দেওয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৩ কিলোমিটার পথে তিনটি পৌরসভা (সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, বারইয়ারহাট)। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া ও দোহাজারী পৌরসভাও একইভাবে মহাসড়ক ঘেঁষে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলে আসছে বছরের পর বছর। কোনো পৌরসভারই নিজস্ব ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফলে ময়লা ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে, ইউ টার্নের ধারে, যেখানে নিয়মিত শত শত যানবাহন চলাচল করছে। অপরদিক ময়লার দুর্গন্ধে কৃষকরা চাষাবাদে নিরুৎসাহী হচ্ছেন। ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। নাগরিকদের জীবনের সুরক্ষায় ডাম্পিং স্টেশন লোকালয়ের বাইরে স্থানান্তর করা প্রয়োজন।
প্যানেল