
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববিখ্যাত অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস একবার বলেছিলেন, “দারুণ কিছু করতে চাইলে, আপনাকে অবশ্যই আপনার কাজকে ভালোবাসতে হবে।” তার এই কথার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর সত্য।
ভাবুন একবার যখন আপনি সত্যিই আপনার কাজকে ভালোবাসেন, তখন সেটি শুধু পেশা থাকে না, হয়ে ওঠে এক অন্তর্দাহ। আর সেই ভালোবাসাই আপনাকে টেনে নিয়ে যায় উৎকর্ষের পথে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন ভালোবাসা আর দীর্ঘস্থায়ী সফলতার মাঝে এতটা গভীর সম্পর্ক?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে আমরা পৌঁছে যাই এক গুরুত্বপূর্ণ শব্দে: ‘অ্যালাইনমেন্ট’ বা সামঞ্জস্যতা।
এই প্রতিবেদনে আমরা জানব কীভাবে আপনার প্যাশন আর পেশার মধ্যে সংযোগ স্থাপনই হতে পারে আপনার দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এবং কীভাবে এটি আপনার কাজের মান ও জীবনের গুণগত মানও উন্নত করতে পারে।
১) ভালোবাসা থেকেই জন্ম নেয় অধ্যবসায়
পেশাগত সফলতার ক্ষেত্রে যারা সত্যিকার অর্থে এগিয়ে যেতে পারেন, তাদের অন্যতম গুণ হলো অধ্যবসায়। আর এই অধ্যবসায়ের পেছনে যে শক্তি কাজ করে, তা হলো ভালোবাসা। যখন আপনি যা করছেন, সেটিকে সত্যিই ভালোবাসেন, তখন সেটা কেবল দায়িত্ব নয়, তা হয়ে ওঠে স্বপ্নপূরণের যাত্রা। আপনার ভালোবাসা তখন হয়ে দাঁড়ায় এক অন্তর্নিহিত দিকনির্দেশক, যা আপনাকে উত্সাহিত করে, টিকিয়ে রাখে এবং সব বাধা ডিঙোতে সাহায্য করে।
২) ব্যক্তিগত তৃপ্তি এনে দেয় ‘সঠিক কাজের সাথে মিল’
অনেকেই এমন পেশায় থাকেন, যেটা বাইরের চোখে আদর্শ মনে হয়—ভালো বেতন, ভালো পরিবেশ, দারুণ টিম। কিন্তু তবুও কিছু একটা যেন কোথাও নেই। কেন? কারণ হয়তো কাজের সঙ্গে আপনার হৃদয়ের যোগ নেই। এলিজা হার্টলি নিজেও এমন অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, যেখানে নিজের ভালোবাসার কাজ খুঁজে পেয়ে তিনি জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেন। কষ্ট ছিল, শিখতে হয়েছে, কিন্তু কাজ থেকে পাওয়া আনন্দ সব কিছু ছাপিয়ে গেছে।
৩) প্যাশন ও অ্যালাইনমেন্ট বাড়ায় উৎপাদনশীলতা
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকার প্রায় ৮৭.৭% কর্মী তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না কারণ তারা কাজকে ভালোবাসেন না। যারা ভালোবাসেন, তারাই প্রকৃত অর্থে নতুন কিছু করতে চান, ‘অতিরিক্ত এক কদম’ এগিয়ে যেতে চান। সুতরাং ভালোবাসা শুধু প্রেরণা নয়, এটি আপনাকে সঠিক কাজ করতে শেখায়।
৪) উদ্ভাবনে জ্বালানী জোগায় কাজের প্রতি ভালোবাসা
যখন আপনি আপনার কাজে ভালোবাসা খুঁজে পান, তখন সেটি হয়ে ওঠে একটি উদ্ভাবনের ক্ষেত্র। আপনি শুধু কাজ করেন না—চিন্তা করেন, স্বপ্ন দেখেন, নতুন কিছু ভাবেন। স্টিভ জবস নিজেও এর উজ্জ্বল উদাহরণ। তার প্রযুক্তি ও ডিজাইনের প্রতি ভালোবাসা শুধু অ্যাপলের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না—তা ছিল তার পরিচয়েরই একটি অংশ।
৫) জীবনের গভীর অর্থ এনে দেয় প্যাশন-সমন্বয়
একটি স্বাস্থ্য সংকটের সময় এলিজা বুঝেছিলেন—শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করে গেলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। যখন আপনার কাজ আপনার প্যাশনের সঙ্গে মিল পায়, তখন সেটি কেবল বেতন নয়, জীবনের গভীর তৃপ্তি এনে দেয়।
৬) কাজের ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে পুরো টিমে
যখন আপনি আপনার কাজকে ভালোবাসেন, সেটি কেবল আপনাকেই বদলায় না—আপনার চারপাশকেও প্রভাবিত করে। আপনার কাজের প্রতি মনোযোগ, ইতিবাচক মনোভাব, সততা—সবকিছু মিলে তৈরি করে একটি সুস্থ ও উদ্দীপনাময় কর্মসংস্কৃতি।নেতারা যদি প্যাশনের সাথে কাজ করেন, তা কর্মীদের মধ্যে প্রেরণা জাগায় এবং একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলে।
৭) অ্যালাইনমেন্ট কোনো গন্তব্য নয়, এটি এক নিরবিচার যাত্রা
সবশেষে মনে রাখা দরকার, এই ‘অ্যালাইনমেন্ট’ একবারের জন্য নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিনিয়ত নিজের প্যাশন খুঁজে বের করা, শক্তি শনাক্ত করা এবং তা পেশার সঙ্গে মেলানো—এই হল মূলমন্ত্র। সফল হতে হলে শুধু বাইরে নয়, ভেতরের সাথে মিল রেখে চলা জরুরি। সেই মিলই আপনাকে সত্যিকারের সাফল্য এনে দেবে।
আসল সাফল্য আসে যখন আপনি হন ‘আপনি’
অ্যালাইনমেন্ট মানে শুধু কাজের ভালোবাসা নয়, এটা এক ধরনের আত্ম-সত্যতা। আপনি কে, আপনি কী ভালোবাসেন এবং আপনি কী বিশ্বাস করেন—এই তিনের মিলনেই আসে টেকসই সফলতা। কাজের মাধ্যমে আপনি যখন নিজের একটি অংশ পৃথিবীর সঙ্গে ভাগ করে নেন, তখনই আসে সার্থকতা।
স্টিভ জবসের মতো করে বললে, 'যখন আপনি যা করেন, তা ভালোবাসেন—তখন কেবল সফল হন না, সফলতাকে জিইয়ে রাখেন'।
সূত্র: https://geediting.com/mal-steve-jobs-said-the-only-way-to-do-great-work-is-to-love-what-you-do-heres-why-sustainable-success-always-starts-with-alignment/
রবিউল