
ছবি: সংগৃহীত।
পাকিস্তান-ভারতের চলমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে দুই দেশের আধুনিক সামরিক অস্ত্রভাণ্ডার। আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তিসম্পন্ন হওয়ায় এবার যুদ্ধ শুরু হলে এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তান ২০২২ সাল থেকে পেয়েছে পিএল-১৫ মিসাইলবাহী আধুনিক চীনা যুদ্ধবিমান জেএফ-১০সি। অপরদিকে, ২০১৯ সালে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বিমান হামলার সময় ভারতের ভরসা ছিল পুরনো রুশ যুদ্ধবিমান। তবে বর্তমানে ভারতের হাতে রয়েছে ফ্রান্সের তৈরি শক্তিশালী ফাইটার জেট ‘রাফাল’।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যদি বড় পরিসরে যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে পাকিস্তান তাদের এফ-১৬ নয়, বরং চীনা জেএফ-১০সি দিয়েই আক্রমণ চালাবে। যুদ্ধক্ষেত্রে চীনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এগিয়ে থাকা ইসলামাবাদকে ঠেকাতে কীভাবে প্রস্তুতি নেবে নয়াদিল্লি—সে প্রশ্ন এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভারত-পাকিস্তানের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে চীনের ভূমিকা। যদিও চীন এখনো সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ নেয়নি, তবুও কূটনৈতিক ইঙ্গিত এবং বিবৃতিতে ইসলামাবাদের প্রতি তাদের সমর্থনের বার্তা স্পষ্ট।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, তারা পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাগত উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে এবং তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। এই প্রেক্ষাপটে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও ভারতকে চাপের মুখে ফেলতে সীমান্তে নানা পদক্ষেপ নিতে পারে বেইজিং।
পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে চীন—দুই ফ্রন্টে সম্ভাব্য সংঘাতে ভারত যেন কোণঠাসা পরিস্থিতিতে। চীনের পূর্ণ সমর্থনে ইসলামাবাদ আরও আত্মবিশ্বাসী, যা নয়াদিল্লির জন্য হয়ে উঠতে পারে কৌশলগত দুশ্চিন্তার কারণ।
আন্তর্জাতিক পরিসরে সমর্থনের পাশাপাশি চীন সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েও পাকিস্তানের পাশে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের অস্ত্র আমদানির ৮১ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। চীনা বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান PL-15 ও SD টাইপের যেসব বিযন্ড-ভিজ্যুয়াল রেঞ্জ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে, সেগুলোও চীন সরবরাহ করেছে।
পাকিস্তান এখন পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র দেশ, যারা চীনের বাইডু স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছে। এই স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতীয় সেনা ও নৌবাহিনীর গতিবিধি নজরদারিতে রাখছে ইসলামাবাদ।
দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়ও এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন। রাশিয়ার এস-৩০০-এর উন্নত সংস্করণ HQ-9 প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হাতে পেয়েছে পাকিস্তান। অন্যদিকে ভারতের ঝুলিতে রয়েছে রুশ এস-৪০০, ব্রাহ্মোস ও অগ্নি সিরিজের মতো শক্তিশালী সমরাস্ত্র।
এ ছাড়া আসন্ন যুদ্ধে ড্রোন ও মিসাইলের মতো মানুষবিহীন অস্ত্র বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে পেয়েছে তুরস্কের যুদ্ধ-পরীক্ষিত বাইরাকতার টিবি-২ এবং আকিঞ্চি ড্রোন। অন্যদিকে ভারত জোর দিচ্ছে ইসরায়েলের হেরন ও মার্কিন প্রিডেটর ড্রোনের ব্যবহারে।
যদি পাক-ভারত উত্তেজনা পূর্ণমাত্রার সংঘাতে রূপ নেয়, তবে তা শুধু উপমহাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ভারসাম্যকে টালমাটাল করে দিতে পারে। এর পেছনে বড় চালক শক্তি হয়ে রয়েছে চীন। প্রশ্ন হচ্ছে—চীন কি শান্তির বার্তা দেবে, নাকি এই বৈরিতাকে আরও উসকে দেবে? আপাতত সেই প্রশ্নের উত্তর অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে।
নুসরাত