
ছবি: সংগৃহীত।
"না, আমি এটা খাব না!"—বা—"আমি এখনই খেলতে যাব!"—শিশুদের মুখে এমন কথা শুনে অনেক বাবা-মা হতাশ হয়ে পড়েন। ছোটবেলার এই ‘জেদ’ যেন বড় হয়ে ওঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেদ করা শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের একটি অংশ। তাই জেদকে দমন না করে বোঝার চেষ্টা করাটাই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।
শিশুর জেদ কেন হয়?
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুরা যখন নিজেদের চাওয়া বা স্বাধীনতা প্রকাশ করতে শেখে, তখনই তারা কিছুটা ‘জেদ’ করে। এটা তাদের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ধাপ। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুরা সাধারণত বেশি জেদ করে, কারণ তারা তখন ভাষা এবং অনুভূতি প্রকাশে শিখছে, কিন্তু সবসময় সেগুলো ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না।
জেদ করলে কী করবেন?
১. শান্ত থাকুন, প্রতিক্রিয়ায় না জড়ান
শিশুর জেদে আপনি রেগে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বরং শান্ত থেকে তাকে বোঝান—আপনি তার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
২. বিকল্প দিন
“না” বলার বদলে “তুমি এটা না করে ওটা করতে চাও?”—এভাবে বিকল্প উপস্থাপন করলে শিশুরা নিয়ন্ত্রণে থাকা অনুভব করে এবং জেদ কমে যায়।
৩. ধৈর্য ধরুন ও সময় দিন
শিশুদের মনোভাব পরিবর্তনে সময় লাগে। ধৈর্য ধরে তার কথা শুনুন, বুঝতে চেষ্টা করুন জেদের পেছনের কারণটা কী—ক্ষুধা, ক্লান্তি, কিংবা মনোযোগের অভাব?
৪. নিয়ম ও সীমা নির্ধারণ করুন
শিশুদের স্বাধীনতা প্রয়োজন, তবে তা অবশ্যই নিরাপদ সীমার মধ্যে। স্পষ্টভাবে নিয়ম নির্ধারণ করলে শিশুরা কী করা যাবে আর কী যাবে না, তা বুঝতে শিখে।
৫. ভালো আচরণে প্রশংসা করুন
শুধু শাস্তি নয়, যখনই শিশু ভালো আচরণ করে, তখন তার প্রশংসা করুন। এতে শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং জেদ কমে।
কখন বিশেষজ্ঞের সহায়তা প্রয়োজন?
যদি শিশুর জেদ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়, দৈনন্দিন জীবনে বিঘ্ন ঘটায় বা আগ্রাসী আচরণে রূপ নেয়—তবে শিশুর মানসিক বিকাশ নিয়ে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুরা জেদ করবে—এটাই স্বাভাবিক। অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো সেই জেদকে বুঝে সুচারুভাবে পরিচালনা করা, যাতে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত না হয়। ভালোবাসা, ধৈর্য ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে শিশুর জেদও একসময় গঠনমূলক আচরণে রূপ নিতে পারে।
নুসরাত