
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব যখন বিশৃঙ্খলা, চাপ ও অবিরাম শব্দে পূর্ণ, তখন একজন নারী নিঃশব্দে নিজের পথ ধরে হেঁটেছেন। না ঝগড়া করে, না বাড়াবাড়ি করে এবং আজ হয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী জীবিত ব্যক্তি। তিনি হলেন ব্রিটিশ নাগরিক ইথেল ক্যাটারহ্যাম। গেরোনটোলজি রিসার্চ গ্রুপের মতে, বর্তমানে তিনিই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বয়সী জীবিত মানুষ।
ইথেল জন্মগ্রহণ করেছিলেন এমন এক সময়ে, যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধও শুরু হয়নি ১৯০৯ সালের ২১ আগস্ট। তাঁর জীবনের পরিসর এত দীর্ঘ যে তিনি দেখেছেন যুদ্ধ, প্রযুক্তির বিপ্লব এবং মানুষের জীবনধারার নাটকীয় পরিবর্তন। কিন্তু তাঁর একটি সহজ জীবনমন্ত্র আজও অপরিবর্তিত: “কখনও কারও সঙ্গে ঝগড়া করো না। আমি শুনি এবং নিজের ইচ্ছামতো কাজ করি।” তাঁর মতে, এটাই তাঁর দীর্ঘজীবনের রহস্য।
সহজ সময়ের মানুষ: ইথেল ক্যাটারহ্যাম জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ ইংল্যান্ডের ছোট্ট গ্রাম শিপটন বেলিঞ্জারে, আট ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ। তখন সময় ছিল ১৯০৯ সাল—ঘোড়ার গাড়ি, হাতে লেখা চিঠি, সরল জীবনযাত্রা। তাঁর শৈশব কেটেছে সাদাসিধা রুটিন ও পারিবারিক মূল্যবোধে গড়া পরিবেশে। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন দুইটি বিশ্বযুদ্ধ, ইন্টারনেটের উত্থান এবং ইতিহাসের নানা মোড়—তবুও কখনও হারাননি নিজের ধীর ও শান্ত স্বভাব।
ভ্রমণে ভরপুর জীবন: ১৮ বছর বয়সে ইথেল গিয়েছিলেন ভারতে, কাজ নিয়েছিলেন এক ন্যানির (শিশুদের দেখাশোনা) ভূমিকায়। এটা ছিল শুধু একটি চাকরি নয়, বরং তাঁর সাহসী ও কৌতূহলী মনের প্রকাশ। ভারতে তিন বছর কাটিয়ে তিনি ফেরেন ইংল্যান্ডে। পরে বিয়ে করেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মেজর নরম্যানকে এবং তাঁর সঙ্গে হংকং ও জিব্রাল্টারেও বাস করেন।
অনেকের জন্য ভ্রমণ মানে উদ্বেগ, কিন্তু ইথেলের জন্য এটি ছিল নতুন অভিজ্ঞতা সংগ্রহের ছন্দমাত্র। নিজের শান্ত স্বভাব বজায় রেখে ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণের পথ। তিনি যুক্তরাজ্যে দুই কন্যার মা হন এবং ১৯৭৬ সালে স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি দৃঢ়তায় জীবনের পথ চলেছেন। নিঃশব্দে ও মর্যাদার সঙ্গে।
কখনও ঝগড়া করো না: সম্প্রতি সারের একটি কেয়ার হোমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যখন তাঁর দীর্ঘজীবনের রহস্য জানতে চাওয়া হয়, ইথেল শান্তভাবে বলেন, “কারও সঙ্গে কখনও ঝগড়া করো না। আমি শুধু শুনি এবং নিজের মতো করে চলি।” এটি কোনো স্রেফ পুরনো ধ্যানধারণা নয়। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, রাগ ও দ্বন্দ্ব হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমায় এবং বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে। ইথেলের পন্থা। অপ্রয়োজনীয় ঝামেলা এড়িয়ে চলা ও নিজের শক্তি অপচয় না করা—সম্ভবত তাঁর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিজ্ঞানও বলছে শান্ত থাকার পক্ষে: আধুনিক গবেষণা বলছে, যারা মানসিক স্থিরতা বজায় রেখে কম দ্বন্দ্বে জড়ায়, তারা সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়। লাগাতার মানসিক দ্বন্দ্ব শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, যা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার প্রধান কারণ। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ইথেলের জীবনদর্শন কেবল ব্যক্তিগত নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। শান্তি বেছে নেওয়ার মাধ্যমে তিনি নিজের হৃদয় ও মনকে হালকা রেখেছেন।
উদযাপন হোক জীবনের গল্পও: সম্প্রতি ইথেল তাঁর ১১৫তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন কেম্বারলির হলমার্ক লেকভিউ কেয়ার হোমে, মাথায় টিয়ারা ও কেক কেটে। ছবিতে দেখা যায় তিনি হাস্যোজ্জ্বল, পরিচর্যাকারীদের সঙ্গে পরিবেষ্টিত। তবে তাঁর প্রকৃত উপহার বিশ্ববাসীর জন্য শুধুমাত্র বয়স নয়। তাঁর জীবনগাথা। এই গল্প মনে করিয়ে দেয়, দীর্ঘজীবন মানেই কঠোর ডায়েট, প্রতিদিনের ব্যায়াম বা ব্যয়বহুল রুটিন নয়। অনেক সময় এটা মানে ভালো লাগার কাজ করা, কম কথা বলে বেশি শোনা এবং অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলা।
সুস্থ জীবনের জন্য সুখ কতটা জরুরি: সুখ সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক অনুভূতি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে, ঘুম উন্নত করে এবং আয়ু বৃদ্ধি করে। মানসিক দিক থেকে সুখ চাপ ও উদ্বেগ কমায়, মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে, বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায় এবং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করে। ফলে জীবন হয়ে ওঠে আরও পরিপূর্ণ ও স্বাস্থ্যসম্মত।
জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলো: এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো গ্রহণ করে এবং জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থেকে আমরাও বাঁচতে পারি এক সুস্থ ও সুখী জীবন।
দীর্ঘজীবনের জন্য সুখ কতটা জরুরি? সুখ দীর্ঘজীবনের অন্যতম চালিকাশক্তি, যা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক অনুভূতি, মানসিক প্রশান্তি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখে, প্রদাহ কমায়। যা দীর্ঘ জীবন যাপনের জন্য জরুরি।
এছাড়াও, সুখ সাধারণত সুস্থ অভ্যাস, দৃঢ় সামাজিক সম্পর্ক এবং চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়ায়। যা আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক।
শহীদ