
সম্পাদকীয়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে চাঞ্চল্য জাগানোর মতো ঘটনা দ্রুত জেনে যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ। ঘটনা নেতিবাচক হলে শুরু হয় সরকারের সমালোচনা। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিমূলক চিত্র জনমনে শঙ্কা জাগায়। রবিবার ঢাকা মহানগরীতে ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা আলোড়ন জাগিয়েছে। সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক নারী।
তাঁর পরনে ছিল শাড়ি, হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ এবং পাশেই ছিল একটি ট্রলি ব্যাগ। হঠাৎ সাদা রঙের একটি প্রাইভেট কার তার সামনে আসে। চলন্ত অবস্থাতেই গাড়িটির সামনের অংশের বাঁ পাশের জানালা দিয়ে একজন ঝুঁকে বেরিয়ে ছোঁ মেরে টান দেয় ভ্যানিটি ব্যাগটি। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারী মাটিতে পড়ে যান এবং ব্যাগের সঙ্গে ওই নারীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীরা।
শিউরে ওঠার মতো এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কতখানি। বলা দরকার, এর আগে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে করে ছিনতাইয়ের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ধরা পড়েছে হাতে গোনা কয়েকজন।
সম্প্রতি ছিনতাই অনেকটা বেড়েছে এবং এর জন্য সবচাইতে বড় মাধ্যম মোটরসাইকেল। এ সকল মোটরসাইকেলের জ¦ালানি সাধারণত কোনো পাম্প থেকে সংগ্রহ করা না, রাস্তার মোড়ে অবৈধ জ¦ালানি বিক্রয়ের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়েছে। যারা জ¦ালানি বিক্রয় করে তারা চোরাই জ¦ালানি বিক্রয়সহ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার।
ছিনতাইকারী কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে কিংবা গণধোলাইয়ের শিকার হলে তাদের মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসে অন্যরা। গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলে তাদের ছাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট আইনজীবী আছেন, যারা বাকিতে তাদের মামলা পরিচালনা করেন। ছিনতাইকারীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আইনজীবীর বিল পরিশোধ করে। এখানে তিনটি বিষয় না বললেই নয়। এক. ছিনতাইকারীদের গ্রুপভিত্তিক ঐক্য। দুই. অপরাধীর পক্ষে বাকিতে আইনি লড়াই। তিন. আইনের ফাক-ফোঁকর দিয়ে জামিন প্রাপ্তি। জামিনে বেরিয়ে আবার ছিনতাই করা।
ছিনতাই ঢাকার নিয়মিত ঘটনা। সভ্য সমাজে ছিনিয়ে নেওয়ার এমন পেশা চলতেই পারে না। অথচ বিষয়টি বেশ পেশাদার আকারই ধারণ করেছে ঢাকায়। খুব কম ব্যক্তিই আছেন যারা দীর্ঘদিনের ঢাকাবাসে একবারের জন্য হলেও নিজে ছিনতাইকারীর পাল্লায় পড়েননি, কিংবা ছিনতাই হতে দেখেননি। অভিনব পদ্ধতিতে ছিনতাই, সেটিও সময়ের ব্যবধানে ‘ডাল-ভাত’ হয়ে গেছে।
নতুন নতুন অভিনবত্ব দিয়ে ছিনতাইকারীরা ঢাকাবাসীকে ‘বিস্ময়াভিভূত’ করে চলেছে। ঢাকার ছিনতাইকারীরা যথেষ্ট বেপরোয়া ও কৌশলী হয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার একটি পৃথক বিশেষ টিম গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে, যারা ছিনতাইয়ের স্পটগুলোতে ঝটিকা অভিযান চালাবে। তাতে যদি নাগরিকদের কিছুটা স্বস্তি আসে। জনমনে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, পুলিশ কী করছে?
এলাকাভিত্তিক টহল কেন জোরদার করা হচ্ছে না। প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান। সেটাতেই যদি ব্যর্থতা দেখা দেয়, তাহলে কর্তাব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা, শাস্তি প্রদানসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প কী?