
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তৎপরতার মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন একতরফাভাবে ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত ৩ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধে জার্মানির বিরুদ্ধে জয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে তিনি এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন। এই সময়ের মধ্যে মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সব ধরনের সামরিক হামলা বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে মস্কো। রাশিয়া বিশ^াস করে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও এ ধরনের উদাহরণ অনুসরণ করা হবে। ক্রেমলিন সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে রুশ ফেডারেশনের সশস্ত্র বাহিনী উপযুক্ত ও কার্যকর জবাব দেবে। ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া আবারও শান্তি আলোচনার জন্য শর্তহীন প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছে। যার লক্ষ্য হলো, ইউক্রেন সংকটের মূল কারণগুলোর সমাধান এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা। তবে ওয়াশিংটন জানিয়েছে, ইউক্রেনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চান ট্রাম্প। কিয়েভের দাবিও একই। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এই শান্তিচুক্তির মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র আর থাকবে কিনা, তা নির্ধারণ করার জন্য চলতি সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ৩দিনের যুদ্ধবিরতির সমালোচনা করে বলেন, এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা একটি প্রতারণার চেষ্টা। এর আগেও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইস্টার সানডে উপলক্ষে ১৯ এপ্রিল ৩০ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল পুতিন। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, রাশিয়া যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেও সেদিন ২ হাজার ৯০০টি হামলা চালিয়েছিল। সেদিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধেও রাশিয়ায় হামলা চালানোর অভিযোগ ছিল। তবে ট্রাম্প এবং জেলেনস্কি স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন বারবার বলেছেন, রাশিয়া কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই শান্তি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রিয়ান হিউজেস বলেন, সংঘাত থামাতে পুতিন যে সদিচ্ছা দেখিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চান এবং এই যুদ্ধের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। কিন্তু কিয়েভ সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষকেই সংঘাত অবসানের জন্য জরুরি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো শান্তি আলোচনা হয়নি। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মস্কো কেন তাদের প্রস্তাবিত অন্তত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হচ্ছে না? তিনি আরও বলেন, যেকোনো যুদ্ধবিরতি অস্থায়ী নয়, বরং অন্তত ৩০ দিনের জন্য তাৎক্ষণিক, পূর্ণ এবং শর্তহীন হওয়া উচিত। যাতে তা নিরাপদ এবং নিশ্চিত হয়। তিনি আরও বলেন, এটিই সেই ভিত্তি যা প্রকৃত কূটনীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের জ¦ালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ইউক্রেন ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে কৌশলগত চাল হিসেবে দেখছে। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধবিরতির নামে রাশিয়া কেবল সময় নিচ্ছে। আমরা শুধু প্রকৃত শান্তি চাই, যেখানে আমাদের ভূখণ্ডের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কিয়েভ এবং মস্কোকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে চাপসহ নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানিয়েছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাত নিরসনের জন্য নিদিষ্ট প্রস্তাব পেশ না করলে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে আসবে যুক্তরাষ্ট্র। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুতিনকে মিথ্যাবাদী বলে অভিহিত করেছেন। পুতিন যখন বিশে^র সামনে কথা বলেন, তখন তিনি বলেন, আমি শান্তি চাই। কিন্তু বাস্তবে তিনি ইউক্রেনে বোমা ফেলছেন। মানুষ হত্যা করছেন। তিনি রাশিয়াকে আক্রমণকারী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ফ্রান্স শুধু একটি জবাবের অপেক্ষায় আছে। সেটি হচ্ছে রাশিয়া কি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির পক্ষে? যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আগামীকালই যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তবে তিনি ফ্রান্সের অবস্থান বিষয়ে বলেন, ইউক্রেনের জনগণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সীমান্তের মধ্যে শান্তিতে বসবাসের অধিকার রক্ষা করা ফ্রান্সের নীতিগত অঙ্গীকার। আমরা জাতিগুলোর সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে আন্তর্জাতিক আইনকে সমর্থন জানিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান এক ও অবিচল।
গত ১১ এপ্রিল রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মস্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী বিশেষ মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ। উইটকফ মনে করেন, ইউক্রেনের পূর্বদিকের ৪টি অঞ্চলকে নিজেদের মালিকানায় আনতে রাশিয়া যে কৌশল অবলম্বন করেছে, তাকে সমর্থন দেওয়াটাই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার একটি দ্রুততম উপায়। অঞ্চলগুলো হলো- লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া এবং খেরসন। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনের ওই ৪ অঞ্চলকে রাশিয়া অবৈধভাবে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ একে মূলত রাশিয়ার দাবি বলে উল্লেখ করেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো নিয়ে উইটকফ মন্তব্য করেন, তারা রুশভাষী। সেখানে অনুষ্ঠিত গণভোটে বিপুল সংখ্যক জনগণ ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা রাশিয়ার শাসনাধীন থাকতে আগ্রহী। পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তাড়াহুড়ো করে আয়োজিত ওই গণভোটকে একটি প্রহসন বলে অভিহিত করেছেন। এ গণভোটের ফলকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য অঙ্গীকার করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো মনে করে, শান্তিচুক্তির জন্য অগ্রগতি না হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। ইউক্রেনকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে তিনি চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসকল শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, ট্রাম্প তার অনেকগুলোই শিথিল করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, মে মাস নাগাদ ইউক্রেনে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক। তবে আংশিকভাবে হওয়া দুটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থবির হয়ে আছে। চুক্তিগুলোর একটি জ¦ালনি অবকাঠামো এবং অপরটি কৃষ্ণসাগর নিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তেমন একটা অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ভ্যাটিকানের ব্যাসিলিকিায় ট্রাম্প ও জেলেনস্কি সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি বিষয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প বলেন, তার মনে হচ্ছে পুতিন যুদ্ধ থামাতে চান না এবং তাকে ভুল বুঝিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। তিনি পুতিনের সমালোচনা করে বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বেসামরিক এলাকা, শহর ও নগরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পুতিনের কোনো কারণ ছিল না। এটা আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে, সম্ভবত তিনি যুদ্ধ ধামাতে চান না। এটি এখন ব্যাংকিং বা সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে হবে বলে ট্রাম্প জানান। মূলত রাশিয়ার ওপর ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত পেয়েই পুতিন তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। স্পষ্টতই ওয়াশিংটনকে দেখাতে এমন চতুর পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া। ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, রাশিয়া আসলে যুদ্ধ চায় না। তবে এই কৌশল এখন ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সমালোচকরা বলছেন, এটা কেবলই প্রচারণা কৌশল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র রাষ্ট্রগুলোর অভিযোগ, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বার্তা দিতে চেয়েছে, ইউক্রেন নয়, রাশিয়াই এই যুদ্ধের একমাত্র শান্তিপ্রিয় পক্ষ। তবে ইউক্রেনের সমালোচকরা বলছেন, কিয়েভই যুদ্ধবিরতিকে অবহেলা করছে। তাদের দাবি, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা বরাবরই যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে চায়। এদিকে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব সের্গেই শোইগু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ঐতিহাসিক রুশ ভূখণ্ডে শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হলে তৃতীয় বিশযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তিনি দাবি করে বলেন, তথাকথিত ইউরোপীয় জোট ইউক্রেনে শান্তিরক্ষীর ছদ্মবেশে সামরিক উপস্থিতির পরিকল্পনা করছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের জন্য ইউরোপীয় জোট গঠনের ধারণা রাশিয়ার নিকট অগ্রহণযোগ্য এবং একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এটি ইউরোপ এবং সমগ্র বিশে^র নিরাপত্তার জন্য গুরুতর বিপদ বয়ে আনতে পারে।
রাশিয়ার হয়ে লড়াই করার জন্য প্রায় ১৪ হাজার সৈন্য উত্তর কোরিয়া পাঠিয়েছে বলে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা মনে করেন। উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে বিপুল পরিমাণ কামানের গোলা, রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করেছে বলে কিয়েভ জানিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ইউক্রেনীয় বাহিনীর দখলকৃত রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ফিরে পাওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। রুশ সৈন্যদের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরাও লড়াই করেছেন বলে রাশিয়া উল্লেখ করেছে। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রুশ শহর ব্রায়ানস্ক, কৃষ্ণসাগরে টহলরত রুশ যুদ্ধজাহাজ এবং কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী উপদ্বীপ ক্রিমিয়ায় ১১৫টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের দেওয়া চূড়ান্ত প্রস্তাব ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এর আগে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ইউক্রেনকে প্রদত্ত ট্রাম্পের খসড়া প্রস্তাবে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি এবং ২০২২ সালের পর রাশিয়ার দখল করা ইউক্রেনের প্রায় সকল অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জেলেনস্কি ট্রাম্পের ওই প্রস্তাব নাকচ করে বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে আগ্রহী হলেও রাশিয়ার নিকট কোনো অঞ্চল ছেড়ে দিতে তিনি নারাজ। তিনি বলেন, কিয়েভ কখনোই রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের কোনো অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেবে না। এটি আমাদের সংবিধানের লঙ্ঘন। এগুলো আমাদের ভূখণ্ড। ট্রাম্প জবাবে বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট চাইলে যুদ্ধ আরও ৩ বছর চালিয়ে যেতে পারেন এবং নিজের পুরো দেশই হারাতে পারেন।
যুদ্ধের বিভীষিকা যখন ইউক্রেনের জনসাধারণকে ক্লান্ত করে তুলেছে এবং পশ্চিমা রাজনীতিতে চরম বিভাজন দেখা দিয়েছে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া কূটনৈতিক যোগাযোগ পেয়েছে এক নতুন মাত্রা। পুতিনের সঙ্গে চতুর্থবারের মতো স্টিভ উইটকফ বৈঠকে বসেছিলেন। এই সফরটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন ট্রাম্প একদিকে রুশ হামলার নিন্দা করছেন, অন্যদিকে একটি চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর আশা দেখাচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক মহলে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ কিয়েভকে বাদ দিয়ে এটি কোনো গ্রেট পাওয়ার চুক্তির সূচনা কি না? উইটকফের মস্কো সফরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যরকম কূটনীতির নিদর্শন। সফরটি কি শান্তির সূচনা, নাকি রাজনৈতিক কৌশলের কোনো অংশ, তা পরবর্তী কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহের ওপর নির্ভর করছে। তবে তা যুদ্ধবিরতির চেয়েও অনেক বৃহৎ একটি ভূরাজনৈতিক মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। হামলার বাস্তবতা আর আলোচনার কৌশল- এই দুইয়ের ফাঁকে শান্তির সম্ভাবনা কিন্তু চাপা পড়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ থামাতে হলে সমঝোতায় যেতে হবে এবং দুই পক্ষকেই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্যানেল