
গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা ও ভোটাধিকার। যেখানে সবাই ভোটে অংশগ্রহণ করবে উৎসবমুখরভাবে। দেশের প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের মতো বাংলাদেশী নাগরিক প্রবাসে বসবাস করেন। যাদের ভোটাধিকার থাকলেও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (যেমন- ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন) অধিকাংশ সংখ্যক ভোটার ভোট দিতে পারেননি। এর মূল কারণ, ভোট দেওয়ার জন্য দেশে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশে এখনো অনলাইন বা ডাকযোগে (পোস্টাল ভোটিং) ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়নি প্রবাসীদের জন্য। অনেক প্রবাসী জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে থাকলেও ভোটার তালিকায় ঠিকানা সঠিক না থাকার কারণে ভোট দিতে পারেন না। তাদের মধ্যে মাত্র প্রায় ১০-১৫ লাখের মতো তালিকাভুক্ত ভোটার, যারা প্রবাসে রয়েছেন। অনেকেই ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত অথবা এনআইডি সংগ্রহ করেননি।
সীমিত পরিসরে হলেও আগামী নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। সে লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে সব প্রস্তুতি। কার্যকর পোস্টাল, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটÑ এই তিন বিকল্প প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। তবে কোনো পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হয়নি এখনো। পোস্টাল ভোটে ভোটার ডাকযোগে ব্যালট সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। এটা নিরাপদ, তবে সময়সাপেক্ষ। অনলাইন বা ই-ভোটিংয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজে ভোট দেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রক্সি ভোট ওয়ান কাইন্ড অব পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। প্রবাসীরা বিদেশে বসে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং তার পক্ষে একজনকে (তার নির্বাচনী এলাকার) নির্ধারণ করে দিতে পারবেন প্রক্সি ভোটার হিসেবে। এছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশীরা স্থানীয় দূতাবাসে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। তবে এমন ব্যবস্থা কার্যকর করা সহজ শুধু দূতাবাস আছে এমন সব দেশে।
তবে নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি থাকলে মোবাইল ভোটিং অ্যাপ হতে পারে আধুনিক সমাধান। পরিচয় যাচাই ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এনআইডি ডেটাবেস ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ করতে না পারাটা দুঃখজনক। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনে প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল মুখ্য। রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করায় আর্থিক খাতে প্রায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিল তখন। তারা দেশকে উন্নত করতে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়ে রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে করছেন সহায়তা। তাই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সরকারের একান্ত প্রয়োজন। প্রবাসীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে কার্যকর কোনো ভোটিং ব্যবস্থা, যাতে তারা অবাধে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। আমরা আগামীতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি।
প্যানেল