
বাংলাদেশে রাস্তাঘাট, সেতু-কালভার্ট, ড্রেনেজ কিংবা সুয়ারেজ, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার নির্মাণ এক কথায় সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ভূমিকাই মুখ্য। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের এলজিইডির ৩৬টি স্থানীয় কার্যালয়ে একযোগে অভিযান চালিয়েছে। এলজিইডির সদর দপ্তর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভারি ইমার্জেন্সি অ্যান্ড রেসপন্স প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখানে ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের অল্প কিছুদিন পর চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় জেলা- চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায় দেখা দেয় ব্যাপক বন্যা। বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য এ জেলাগুলো থেকে প্রকল্প বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। বাকিটা ব্যয় করবে বাংলাদেশ সরকার। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণের অভিযোগ রয়েছে এসব প্রকল্পের কার্যক্রম শুরুর আগেই। চারটি ল্যাপটপের মূল্য ১১ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব অস্বাভাবিক ঘটনা। প্রকল্পে ৬০টি মোটরসাইকেল ক্রয়ের প্রস্তাব করা হলেও কমিশন অনুমোদন দেয় ৩৬টির।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় একেকটি স্ট্রিট সোলার লাইটের মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৭২ হাজার টাকা। যদিও বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে এসব লাইটের আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণসহ অন্যান্য খাতে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে, তাও অস্বাভাবিক মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। দুদক টিম অভিযানকালে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র সংগ্রহ করেছে। কাজের গুণগত মান রক্ষা না করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ, নামমাত্র কাজ দেখিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে অভিযান চলাকালে। কয়েকটি জেলায় সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার, বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংগ্রহ করা হয়েছে নমুনা। নির্মিত সড়কের কোথাও জলাবদ্ধতা, কম পুরুত্বের কার্পেটিং, ফিনিশিং সমস্যা এবং সড়কের দুই পাশের শোল্ডার না থাকার চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। অভিযানকালে প্রকল্প বরাদ্দ, ঠিকাদারদের অর্থ উত্তোলন, অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরকারি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতাসহ নানাদিক খতিয়ে দেখা হয়েছে।
এনফোর্সমেন্ট টিম শীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দেবে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। দৃশ্যমান এ সকল অনিয়ম, অনাচার দেখে মনে হয়, এ যেন পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি। প্রতিটি সরকারের আমলেই এলজিইডিসহ দেশের সব দপ্তরে ব্যাপক অনিয়ম হয়ে আসছে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের অনিয়ম হয় মোটা দাগে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এমন তছরুপ আর কতকাল? আমাদের মাঝে কখনো দেশপ্রেমবোধ জেগে উঠবে না? ছোট দেশটির প্রতিটি দেশ প্রেমিক নাগরিক দেশের উন্নয়নে নিজের সর্বোচ্চটা ঢেলে দেবেন না?
প্যানেল