ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

যে ৬টি খাবারে কমবে ফ্যাটি লিভার!

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ৪ মে ২০২৫

যে ৬টি খাবারে কমবে ফ্যাটি লিভার!

মানবদেহে যকৃত বা লিভার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে এটি রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলে, ওষুধ ও অ্যালকোহল ভাঙতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রে বাইল উৎপাদন করে যা চর্বি ভাঙতেও সহায়তা করে। কিন্তু আজকের অগোছালো জীবনযাত্রার কারণে এই অঙ্গটির ওপর বাড়ছে বাড়তি চাপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই লিভার ভালো রাখা সম্ভব। ফ্লোরিডা-ভিত্তিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. জোসেফ সালহাব, যিনি ইনস্টাগ্রামে ‘দ্য স্টমাক ডক’ নামে পরিচিত, তিনি জানাচ্ছেন  দৈনন্দিন ডায়েটে ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার রাখলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সম্প্রতি এক ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান, তাদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।’’

চলুন দেখে নেওয়া যাক এমন ৬টি উপকারী খাবার যা আপনার রোজকার ডায়েটে রাখলে লিভার থাকবে সুস্থ ও কর্মক্ষম।

 

কুমড়োর বিচি ও অ্যাভোকাডো

কুমড়োর বিচি এবং অ্যাভোকাডো একসঙ্গে খেলে তা লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী প্রভাব ফেলে। অ্যাভোকাডোতে রয়েছে স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এটি গ্লুটাথায়ন নামক এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের উৎস, যা লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, কুমড়োর বিচিতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা লিভারের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে থাকা ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট হিসেবে কাজ করে, যা লিভার কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

পালং শাক ও অলিভ অয়েল

ডা. সালহাবের মতে, পালং শাক এবং এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল একত্রে খেলে লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য চমৎকার কাজ করে। পালং শাকে আছে ক্লোরোফিল, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এবং লিভারে চর্বি জমার পরিমাণ কমায়। এছাড়াও এতে থাকা নাইট্রেট ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লিভারের এনজাইম কার্যকারিতা বাড়ায়। অপরদিকে, অলিভ অয়েলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা লিপিড মেটাবলিজম ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে। এর ওলিওকান্থাল উপাদান লিভারের প্রদাহ কমাতে ভূমিকা রাখে।

কালো শিম 

কালো বিন বা কালো শিম ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর। এতে আছে দ্রবণীয় আঁশ, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে,এই দুটি বিষয়ই লিভারে চর্বি জমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। আঁশযুক্ত খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা আবার লিভারের প্রদাহ ও চর্বির বিপাকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কালো বিনে থাকা পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমিয়ে লিভারকে রক্ষা করে।

ডার্ক চকলেট

ডার্ক চকলেটে রয়েছে ইপিক্যাটেচিন ও ক্যাটেচিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা লিভারে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমায়। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত হয়, যা ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণগুলোর একটি। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেট নিয়মিত খেলে লিভার এনজাইম ALT ও AST এর মাত্রাও কমতে পারে এবং লিভার কোষে চর্বি জমার হারও হ্রাস পায়।

এডামামে

এডামামে হলো তরুণ সয়াবিন, যা উচ্চমানের প্রোটিন সরবরাহ করে এবং লাল মাংসে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাটের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা জেনিস্টেইন ও ডেইডজেইন নামক যৌগ লিভারে চর্বি জমা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই আইসোফ্ল্যাভোনগুলো লিপিড বিপাক এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে,ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাদাম ও কাজু

সঠিক পরিমাণে বাদাম ও কাজু খেলে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে উপকার পাওয়া যায়। এই দুই ধরনের বাদামে রয়েছে মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করে। আমন্ড বা বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই, যা লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। বাদাম ও কাজু দুটোতেই আছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেশিয়াম, যা রক্তে শর্করার বিপাক এবং লিভার এনজাইমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

লিভারের যত্ন নিতে হলে শুধু ওষুধ নয়, প্রতিদিনকার খাবারেও আনতে হবে সচেতন পরিবর্তন। ডায়েটে ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক খাবারগুলো যুক্ত করলে লিভারের চর্বি জমার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। তাই সুস্থ লিভারের জন্য আজ থেকেই বদলে ফেলুন আপনার প্লেটের প্রতিদিনের গল্প।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2ntt7xjs

আফরোজা

×