ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

মধুর জিআই স্বীকৃতি

-

প্রকাশিত: ২৩:৫৫, ৪ মে ২০২৫

মধুর জিআই স্বীকৃতি

সম্পাদকীয়

বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে গত সপ্তাহে অবশেষে সুন্দরবনের মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পাওয়া গেছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্পনক্সা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বীকৃতির সনদ তুলে দেওয়া হয় বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)-এর হাতে।

এর পাশাপাশি জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে বরিশালের আমড়া, টাঙ্গাইলের জামুর্কীর সন্দেশ এবং কুমিল্লার খাদি কাপড়সহ ২৪টি পণ্য। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের আরও কয়েকটি পণ্যের জিআই স্বীকৃতি মিলেছে। ফলে স্বভাবতই সুন্দরবনের মৌয়াল, মধু ব্যবসায়ী ও গবেষকরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। উল্লেখ্য, সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মৌয়াল বাঘ, কুমির ও সাপের ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে সরাসরি মধু সংগ্রহ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। মৌয়ালদের প্রতিবছর নিহত ও আহতের ঘটনাও ঘটে থাকে। 
বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বাংলাদেশের সুন্দরবনে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে মধু সংগ্রহ অভিযান। সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের কেয়াখালের একটি গাছ থেকে চাক কেটে মধু সংগ্রহের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রতি বছরের মতো ১ এপ্রিল হতে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতিপত্র বা পাস দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০০ কুইন্টাল, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম।

উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৩ কুইন্টাল। এরপর থেকে এর পরিমাণ কমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৮৩ কুইন্টাল। এবার মধু সংগ্রহের পরিমাণ আরও কমেছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই একশ্রেণির জেলে ও চোরাশিকারি চুরি করে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

এর বাইরেও গত কয়েক বছরে বনদস্যুদের উৎপাত, বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে আগুন লাগা সর্বোপরি ডাকাতদের উৎপাত-উপদ্রবে মধু সংগ্রহের পরিমাণ কমছে দিন দিন। সুন্দরবনের আয়তনও কমেছে ইতোমধ্যে। সেই প্রেক্ষাপটে সুন্দরবনের বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত নজরদারি আরও বাড়ানোর বিকল্প নেই। 
মধু একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টিকর পানীয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ প্রাকৃতিক নিরাময়ও বটে। শ্লাঘার বিষয় এই যে, বিলম্বে হলেও ভৌগোলিক জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সুন্দরবনের মধু। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ২০২১ সালে। অথচ সুন্দরবন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ মধু আহরিত হয়ে থাকে তার দুই-তৃতীয়াংশই আহরণ করা হয় বাংলাদেশ থেকে।

তদুপরি এই মধু চাষকৃত নয়, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। সেই হিসেবে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। দুঃখজনক হলো, সুন্দরবনের  মধুকে ভারত জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করার পরেই টনক নড়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেটেন্ট শিল্পনক্সা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের। অথচ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন পাঠিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

এখানেই সরকারি প্যাটেন্ট অফিসের অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও গাফিলতি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সরকারের মনে রাখা উচিত, বহির্বিশ্বে মেড ইন বাংলাদেশে যেতে এবং ব্র্যান্ডিং করতে হলে দেশীয় পণ্যের মেধাস্বত্বকে সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে বিদেশী বিনিয়োগ ও পর্যটক আকর্ষণ করাও হবে দুঃসাধ্য।

×