
ছবিঃ সংগৃহীত
মতের সাথে না মিললেই শাহবাগী, নাস্তিক বানিয়ে ফেসবুকে প্রচার চলবে, প্রান্তিক মানুষে পরিণত করা হবে বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
সোমবার (৫ মে) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, পুরনো খেলা নতুন করে মাঠে হাজির করার কতই না চেষ্টা। সেই শাহবাগ, শাপলা বাইনারি, সেই মৌলবাদ বনাম প্রগতিশীলতা। আমার শরীর, মন, মস্তিষ্ক সবটা জুড়ে নারীসত্ত্বাকে আমি ধারণ করি। জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত প্রতিটা মেয়েকে যে পরিমাণ সংগ্রাম তার পরিবার, সমাজ আর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সাথে করতে হয় সেটা তুলে আনা আমার দায়িত্ব। তা সেটা যত গালি খেয়ে হোক, অশালীন মন্তব্যের মুখে হোক আর যতই ভোট কাটুক না কেন।
তিনি আরও বলেন, আপনি যতক্ষণ নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলবেন না ততক্ষণ আপনি মেইনস্ট্রিম নারী রাজনীতিবিদ। আর যেই নারীসত্ত্বার পক্ষে কথা বলবেন, সাথে সাথে আপনাকে নারীবাদি , শাহবাগীসহ নানান ট্যাগ দেয়া হবে। ঈদের সময় বান্ধবীদের আড্ডা হচ্ছিল। কথায় কথায় দেখলাম প্রত্যেকেই শাহবাগী ট্যাগের শিকার হয়েছে ৫ আগস্টের পর। মতের সাথে না মিললেই শাহবাগী, নাস্তিক বানিয়ে ফেসবুকে প্রচার চলবে, প্রান্তিক মানুষে পরিণত করা হবে। এই পরিমাণ নারীবিদ্বেষ সমাজের সকলক্ষেত্রে, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারী রাজনীতিকরা লড়াই না করলে কখনোই নারী অধিকার নিশ্চিত সম্ভব না।
উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা জানি, সব সমাজেরই একটা ভাষা থাকে, কালচার থাকে। কিন্তু আপনারা দেখেন, সমাজে কিন্তু নারীরা অধিকার সচেতন হইছে, তারা আগায় গেছে, নিজেদের অপিনিয়ন দেয়ার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। কিন্তু পুরুষরা কি সেই তুলনায় পরিবর্তন হয়েছে?! নারীরা চাকরি করে, বাচ্চা সামলায়, রান্নাঘরটাও সামলায়, সবক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করা শেখানো হয়।। কিন্তু পুরুষদের কখনো শেখানো হয় কম্প্রোমাইজ কিভাবে করতে হয়?! এই সমাজে নারী-পুরুষের চিন্তার সংঘর্ষ অহরহ হচ্ছে। এই চিন্তার মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া হলে আইনের মধ্যে সেটার প্রতিফলন থাকত। যেকোনো সংশোধনকেই পুরুষ ভার্সেস নারী, ধর্ম ভার্সেস নারী, মৌলবাদ ভার্সেস প্রগতিশীলতা এরকম একটা ফ্রেমে ফেলা হয়। তাই সমাজের নারীদের প্রতি বৈষম্যের আমূল পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। শুধুমাত্র প্রক্রিয়াগত কারণেই না, যে পরিমাণ নেগেটিভিটির সাথে প্রতিমুহূর্তে ফাইট করে যেতে হয়। আর মেইনস্ট্রিম পলিটিক্সে নারী ইস্যুকে গৌণ করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চলে। বিষয়টা এমন যে নারী অধিকার ইস্যু ডিল করলেই রাজনীতিতে আপনি কিছুটা ডানে বা কিছুটা বামে হেলে পড়বেন। গত ৯ মাসে সবাই পপুলিস্ট হতে গিয়ে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নকে গৌণ করে তোলার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যারাই মুখ খুলবে, কনসার্ন শো করবে, তাকে যেন গালি দিয়ে, ট্যাগ দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়া যায়। গত কয়েকদিনের গালি শুধু এখানে লিঙ্গকে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছেনা, এটা ব্যবহার হয় রাজনৈতিকভাবে ভোকাল থাকা নারীদের প্রান্তিক করে দেয়ার উদ্দেশ্যে।
তিনি আরও বলেন, আমি বলি, সামাজিক রীতিনীতি, কালচার এই প্রশ্নগুলো মোকাবিলা সম্ভব যদি সকল মত পথের মানুষের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া হয়। কিন্তু সামাজিক রীতিনীতির কথা বলে পরিবর্তনের দরজা বন্ধ করার চেষ্টাকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি। কারণ পরিবর্তন তো হচ্ছে, ইন্টারনেটের যুগে প্রতিনিয়ত মানুষের চিন্তার মধ্যে পরিবর্তন হচ্ছে। চিন্তার মিথষ্ক্রিয়ার মধ্যে এই পরিবর্তনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ সম্ভব। কিন্তু, যদি কেও গালি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে, রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক করার মধ্য দিয়ে নারী অধিকারের আলাপকে দাবিয়ে দিতে চায় সেই চিন্তার বিরোধিতা অবশ্যই নারী ও মানুষ হিসেবে আমার কর্তব্য।
তাই, গালি দিতে থাকেন। আমি কথা বলে যাব। রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক হওয়ার ভয় দেখিয়ে দমায় দিতে পারবেন, এই ভুল চিন্তা করিয়েন না।
ইমরান