
আমরা প্রত্যেকেই প্রতিদিনের জন্য একটি একমাত্র টিকিট পাই—এর নাম ‘আজ’। প্রশ্ন হলো: আপনি কি সেটিকে অটোপাইলটে দৌড়ে পেরিয়ে যাবেন, নাকি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলোতে থেমে দিনের গোপন জৌলুসটুকু অনুভব করবেন?
নিচে এমন সাতটি ছোট্ট অভ্যাস দেওয়া হলো । যে কোন একটিকে চেষ্টা করুন, অথবা সবগুলোই—তারপর খেয়াল করুন, কত দ্রুত জীবন আবার থেমে উপভোগ করার মতো হয়ে ওঠে।
১. সকালে পানীয় তৈরি করুন এক অভ্যর্থনার মতো করে
কখনো হাতে করে কফি বিন গুঁড়ো করি শুধু তার সুবাস পেতে, আবার কখনো খোলা পাতা পিপারমিন্ট চা ঢেলে দিই পুরোনো এক কাপের ভেতর। নিয়ম একটাই: পানি গরম হওয়ার সময় ফোন স্ক্রল নয়। আমি শুধু বাষ্প দেখি, বুদবুদ শুনি, আর নিঃশ্বাস নেই।
হার্ভার্ডের বেনসন-হেনরি ইনস্টিটিউট বলছে, এমন দৈনন্দিন অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে ও মানসিক সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: দিনের প্রথম স্বাদটি আপনার জিভে কেমন লাগছে? মাত্র ৯০ সেকেন্ডের এই উপস্থিতি একটি সাধারণ পানীয়কেও পরিণত করে এক শান্তির নোঙরে।
২. আপনার যাত্রাপথকে দিন এক গল্পের নাম
আমার প্রিয় একটি উক্তি: “চেনা পথেও ছন্দ বদল মস্তিষ্ককে নিয়ে যায় আবিষ্কারের মোডে,”—বলেছেন মনোবিজ্ঞানী ড. এলিসা এপেল, UCSF-এর মাইক্রো-জয় বিষয়ক গবেষণার প্রধান লেখক।
তাই আমি প্রতিদিনের পথগুলোর নাম বদলে দিই। মুদি দোকানে যাওয়ার হাঁটাপথকে বলি “জুঁইফুলের ট্রেইল”, কারণ একটি বেড়ার পাশে ফুল ফোটে। যোগ ক্লাসে গাড়ি চালানো হয় “পডকাস্ট তীর্থযাত্রা”।
গল্প পুরোনো পথকেও করে তোলে নতুন দৃশ্য। পরেরবার যখন আপনি ট্রাফিক সিগন্যালে থামবেন, নিজের মনে বর্ণনা করুন: রোদে পোড়া স্কুটার, ব্যস্ত ট্যাক্সি, ফোনে হেসে উঠছেন এক দাদি।
অভিনন্দন—এখন আপনি নিজ জীবনের পরিচালক।
৩. প্রতিদিন লিখে রাখুন এক লাইনের একটি স্মৃতি
হয়তো আপনি আগেও আমার ‘এক লাইনের জার্নালিং’ নিয়ে লেখা পড়েছেন। এখনো আমি সেটির প্রতি আস্থাশীল।
প্রতিদিন রাতে আমি লিখে রাখি একটি সংবেদনশীল মুহূর্ত: “দুপুর ৩টার দিকে মাখন লাগানো টোস্টের খসখসে আওয়াজ” অথবা “যোগব্যায়ামের শেষে ম্যাটে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ”।
কোনো দামী ডায়েরির দরকার নেই; ফোনের নোট অ্যাপেই চলে। সপ্তাহ শেষে আপনার কাছে থাকবে সাতটি ছোট্ট রত্ন—যেগুলো না লিখলে হারিয়ে যেত।
বোনাস: পরে এগুলো পড়লে মনে হবে—একটি ব্যক্তিগত অনুভূতির অ্যালবাম খুলে বসেছেন।
৪. পাঁচ মিনিটে ঘরকে দিন প্রাণ
তাজা ফুল তো ভালোই, তবে বিনামূল্যের বিকল্পও আছে। আমি মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির ইউক্যালিপটাস গাছ থেকে (অনুমতি নিয়ে) ডাল এনে একটি পুরোনো ফুলদানি সাজাই।
কখনো বইগুলো রঙ অনুযায়ী সাজাই, আবার কখনো শেষ গ্রীষ্মের সমুদ্রের শাঁস রাখা শুরু করি।
হার্ভার্ড হেলথের গবেষণা বলছে, চোখের সামান্য পরিবর্তনও আমাদের মনোবল ও শক্তি বাড়াতে পারে।
মাত্র পাঁচ মিনিট সময় নিন: একটি জিনিস সরান, একটি মোমবাতি জ্বালান, একটি জানালা খুলে দিন।
হঠাৎ করেই ঘরটাকে মনে হবে—আপনার মনের ছোঁয়ায় ছুঁয়ে যাওয়া।
৫. একটি খাবারকে রূপ দিন মনোযোগী অভিজ্ঞতায়
একটি প্রশ্ন: আপনি কি আজকের মধ্যাহ্নভোজটি খেতে পারেন ঠিক যেমনটি এটি আপনার জীবনের প্রথম খাবার?
আমি এমনকি গতকালের বেঁচে যাওয়া খাবারও আমার প্রিয় প্লেটে সাজাই, পা দুটো মাটিতে রেখে মন দিয়ে খাই।
যেটাই হোক—ওটমিল কিংবা রেস্তোরাঁর নুডলস—তাকে গ্রহণ করুন একজন রন্ধনশিল্পীর টেস্টিং মেনুর মতো।
শেষে আপনি শুধু পেটভরে উঠবেন না, বরং উপস্থিতির অনুভূতিতে পূর্ণ থাকবেন।
৬
দিন শেষ করুন মোমবাতির আলোয় শরীরটাকে ছড়িয়ে
সবশেষে—হ্যাঁ, আপনি ঠিকই ধরেছেন, এটিই শেষ ধাপ—একটি স্ক্রলিং সেশনের বদলে পাঁচ মিনিটের ধীর স্ট্রেচিং করুন মোমবাতি বা হালকা ফেয়ারি লাইটের আলোয়।
একটি শান্ত প্লেলিস্ট চালাই, শিশুর ভঙ্গিতে থাকি, মেরুদণ্ডকে সময় দিই নিজেকে ছাড়তে।
নিজের শরীরের প্রতি এমন ছোট দয়ার কাজও গণ্য হয়। ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, অন্যের প্রতি বা নিজের দিকেই এমন সচেতন কাজগুলো সুখ দেয় অনেকক্ষণ পর্যন্ত।
প্রয়োজন নেই দামি যোগ স্টুডিও বা সুগন্ধি তেলের। শুধু একটু নিঃশব্দ আলো আর কোমল নিঃশ্বাস—যা গোটা দিনটিকে মমতায় মুড়ে দেয়।
সানজানা