
ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞানজগতের বিস্ময়কর প্রতিভা আলবার্ট আইনস্টাইন কি সত্যিই শান্তিতে বিশ্রাম নিচ্ছেন? মৃত্যুর পর তাঁর মস্তিষ্ক নিয়ে যা ঘটেছিল, তা যেন এক রহস্যময় এবং নৈতিক বিতর্কে ভরা অধ্যায়। একদিকে বিজ্ঞানীসুলভ কৌতূহল, অন্যদিকে মৃতব্যক্তির শেষ ইচ্ছা—এই দুইয়ের টানাপোড়েনে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে এক অনিচ্ছাকৃত গবেষণার বস্তু।
মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুলে ফেলা হয় মস্তিষ্ক
১৯৫৫ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন মারা যান। তাঁর ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর দেহ যেন সাধারণভাবে কবর দেওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের অনুমতি ছাড়াই আইনস্টাইনের মৃত্যুপরবর্তী ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা প্যাথলজিস্ট থমাস হার্ভে সেই ইচ্ছা অগ্রাহ্য করে আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক কেটে আলাদা করেন। এই সিদ্ধান্তে পরবর্তীতে শুরু হয় তীব্র বিতর্ক।
কোনো বৈজ্ঞানিক নিয়ম ছাড়াই সংরক্ষণ, জ্যাম জারে রাখা হয়েছিল অংশবিশেষ
থমাস হার্ভে সেই মস্তিষ্ক ফরমালডিহাইডে সংরক্ষণ করেন ঠিকই, কিন্তু ছিল না কোনো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রটোকল। এরপর তিনি তা কেটে ফেলেন কয়েক শতাধিক খণ্ডে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব খণ্ড রাখা হয় সাধারণ জ্যামের বোতলে। দীর্ঘদিন সেগুলো পড়ে ছিল হার্ভের ঘরে, যেখানেই তিনি স্থানান্তরিত হয়েছেন, সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছেন সেগুলো।
গবেষণা হয়েছে, কিন্তু ফলাফল বিতর্কিত
পরবর্তী কয়েক দশকে হার্ভে কিছু কিছু গবেষকের কাছে ওই মস্তিষ্কের খণ্ডাংশ পাঠান। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে বেশ কিছু গবেষণা হয়। কেউ কেউ বলেন, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কে নিউরনের ঘনত্ব বেশি ছিল বা গঠন ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। তবে এই গবেষণাগুলোর অনেকটাই সীমিত নমুনার ওপর নির্ভরশীল এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণের অভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
নৈতিক প্রশ্ন এবং বিজ্ঞানের সীমা
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকে যায়, একজন মৃত ব্যক্তির ইচ্ছা উপেক্ষা করে তাঁর দেহের অঙ্গ নিয়ে গবেষণা কতটা নৈতিক? আইনস্টাইন পরিষ্কারভাবে বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর দেহ যেন গবেষণার বস্তু না হয়। তা সত্ত্বেও, তাঁর মস্তিষ্কের এমন ভাগ্য যেন বিজ্ঞানের নাম করে এক অনিচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ।
আজও এই ঘটনা আলোচনার জন্ম দেয়—এটি একদিকে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল ও গবেষণার সীমা তুলে ধরলেও, অন্যদিকে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নৈতিকতা ছাড়া বিজ্ঞান প্রায়ই হয়ে ওঠে নির্মম। আইনস্টাইন হয়তো চেয়েছিলেন চুপিচাপ বিশ্রাম নিতে, কিন্তু তাঁর মস্তিষ্ক আজও রয়ে গেছে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
সূত্র: https://3dvf.com/en/what-was-really-done-with-albert-einsteins-brain-after-his-death-and-why-its-controversial/
রাকিব