ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

দারফুরে গণহত্যার নতুন ছক: ইসরায়েলি কৌশল অনুকরণে আরএসএফ!

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ৫ মে ২০২৫

দারফুরে গণহত্যার নতুন ছক: ইসরায়েলি কৌশল অনুকরণে আরএসএফ!

ছবিঃ সংগৃহীত

জামজামে গণহত্যা
২০২৫ সালের ১১ এপ্রিল, সুদানের দারফুর অঞ্চলের জামজাম শরণার্থী শিবিরে RSF (Rapid Support Forces) ভয়াবহ হামলা চালায়। শিবিরে আগুন লাগানো হয়, চিকিৎসকদের হত্যা করা হয়, আর যেসব মানুষ পালাতে চেয়েছিল, তাদের ওপরও গুলি চালানো হয়। এই এক হামলাতেই কমপক্ষে ৫০০ জন মানুষ (নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ) মারা গেছে। লাখ লাখ মানুষ আবার ঘর ছাড়া হয়েছে।

তাদের অজুহাত
আরএসএফ বলছে, “জামজাম ছিল এক ‘সামরিক ঘাঁটি’, তাই সেখানে হামলা করা হয়েছে।” এই ভাষা পরিচিত শোনাচ্ছে? ঠিক এমন কথাই ইসরায়েল বলে গাজায়—যখন তারা শিশুদের স্কুল বা হাসপাতাল বোমা মারে, তখন বলে, ‘সেখানে হামাসের ঘাঁটি ছিল।

সুদানের মানবাধিকার আইনজীবী রিফাত মাকাওই বলেন, “এটা কেবল মিল নয়, এটা ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের কৌশল অনুকরণ। সাধারণ মানুষকে ‘যোদ্ধা’ বানিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।”

অপরাধ ঢাকার চেষ্টা

আরএসএফ আজ তাদের কাজকে বৈধ দেখাতে ‘মানবাধিকার’ শব্দ ব্যবহার করছে। তারা বলে, ‘আমরা সাধারণ মানুষকে রক্ষা করছি’, আবার বলে—‘শরণার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে দিচ্ছি।’
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—এই কথার আড়ালে নারী ধর্ষণ, গুলি করে হত্যা, এবং দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হচ্ছে। ২০০৩ সালে দারফুরে প্রথম যখন সংঘাত শুরু হয়, তখন এই আরএসএফ ছিল জানজাওয়িদ নামক ঘোড়ায় চড়া আরব সশস্ত্র দল—যারা ‘অ-আরব’ কৃষকদের মারছিল। আজও সেই পুরনো শত্রুতা নতুন রূপে ফিরে এসেছে।

ইসরায়েলের ছাঁচে গণহত্যা!

গাজায় ইসরায়েল কী করছে? স্কুল/হাসপাতাল ধ্বংস করে বলছে: ‘সেখানে হামাস লুকিয়ে ছিল’ মানুষকে বলছে ‘নিরাপদ এলাকায় যাও’, তারপর সেই এলাকাও বোমা মারে। সাধারণ মানুষকে ‘মানব ঢাল’ বলা হয়, যাতে তাদের হত্যা বৈধ দেখানো যায়, এগুলোই আজ আরএসএফ করছে জামজামে। একে একে পশ্চিম, দক্ষিণ, পূর্ব, কেন্দ্রীয় দারফুর দখল করে, এখন তারা শেষ বড় শহর এল-ফাশার ঘিরে রেখেছে।

আরএসএফ এর যুদ্ধনীতি কী বলছে?

শিবিরের লোকজনকে ‘দুশমন’ বানিয়ে মারছে, খাদ্য ও ওষুধ আটকে রেখে দুর্ভিক্ষ ঘটাচ্ছে। নারীদের অপহরণ ও গণধর্ষণ চালাচ্ছে, যারা পালাচ্ছে, তাদেরকেও ধরে হত্যা করছে। আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য বলছে, ‘আমরা মানবিক করিডোর খুলেছি!’এভাবে মানুষ হত্যা, জাতিগত নিধন ও মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে RSF এখন দারফুরে চূড়ান্ত কর্তৃত্ব কায়েম করতে চাইছে।

বিশ্লেষকদের মতামত

আইন বিশেষজ্ঞ লুইজি ড্যানিয়েলি বলছেন,‘ইসরায়েল ও আরএসএফ একই কৌশলে কাজ করছে— মানুষকে প্রথমে শত্রু বানাও, তারপর হত্যা করো, আর দুনিয়াকে বোঝাও, এটা বৈধ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা একটা নতুন রকমের গণহত্যার ছক, যেটা এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।’

এই ঘটনাগুলো শুধু দারফুর বা গাজা নয়—এই কৌশল এখন বিশ্বব্যাপী একটি ‘টেমপ্লেট’।
যুদ্ধাপরাধকে ‘মানবিক সাহায্য’ বানিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর যারা নির্যাতিত—তারা হারিয়ে যাচ্ছে, তাদের আর কেউ শুনছে না। আরএসএফ যদি এই পথে এগোতেই থাকে, তাহলে দারফুরের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠবে গাজার মতোই—এক ভয়াবহ রক্তাক্ত ইতিহাস।

সূত্রঃ https://aje.io/kby4n1

আরশি

×