
ছবিঃ সংগৃহীত
সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পাহালগামে নিহত ২৬ জনের ঘটনায় কাশ্মীরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। এর সাথে সঙ্গতি রেখে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে কাশ্মীরের রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আশা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক বন্দী ও পেহেলগাম হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি
২০১৯ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর হাজার হাজার কাশ্মীরি বন্দী হন। বেশিরভাগই রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে চিহ্নিত, যাদের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টি-টেরর’ আইন বা ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এসব বন্দীদের মুক্তির জন্য গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কিছু রাজনৈতিক দল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু পাহালগাম হামলার পর সেসব আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। এই হামলার পর, ভারতীয় বাহিনী কঠোর অভিযান শুরু করেছে, এবং হাজার হাজার সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
বন্দীদের পরিবারের যন্ত্রণার চিত্র
শেকিলা, যিনি তার ২৪ বছর বয়সী পুত্র ফাইজিয়াাবের মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন, বলেছেন, ‘পেহেলগাম হামলার পর আমার ছেলে মুক্তি পাবার আশা অনেকটাই শেষ হয়ে গেছে।’ ফাইজিয়াব ২০১৯ সালের পর থেকেই বন্দী, এবং তার বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টি-টেরর’ আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। গত নির্বাচনে কাশ্মীরের অনেক রাজনৈতিক দল তাদের প্রচারে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতা
গত বছরের নির্বাচনে কাশ্মীরি জনগণ আশা করেছিলেন যে একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। কাশ্মীরের প্রভাবশালী দল জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (NC) ৪২টি আসন জয়লাভ করেছিল, কিন্তু সরকার গঠন হওয়ার পরও বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে কিছু স্পষ্ট পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ইশরাত নামে এক তরুণী, যার ২৫ বছরের ভাইও বন্দী, বলেন, ‘এখন মনে হচ্ছে, তারা আমাদের অনুভূতিতে খেলা করেছে ভোটের জন্য।’ তাঁর ভাইকে ২০২৩ সালে ‘পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট’ (PSA) এর অধীনে আটক করা হয় এবং পরে তাকে কাশ্মীর থেকে ১,০০০ কিলোমিটার দূরের একটি কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। এর ফলে পরিবারটি আর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছে না, এবং তার কারাবাসে ভোগান্তি আরও বাড়ছে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের মুখপাত্র ইমরান নবী দার বলেছেন, ‘কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা বাতিল হওয়া এবং দিল্লির নিয়োগকৃত লেফটেন্যান্ট গভর্নরের নিয়ন্ত্রণের কারণে আমাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে দলটি এই ইস্যু সমাধানের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি তাদের অঙ্গীকার।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি বা স্থানান্তর কাশ্মীরের জন্য একটি দীর্ঘকালীন ইস্যু, এবং পেহেলগাম হামলা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। কাশ্মীরি জনগণের জন্য এ এক কঠিন সময়, যেখানে বন্দীদের পরিবারগুলি একদিকে যেমন অপেক্ষা করছে, অন্যদিকে তারা সরকারের প্রতিশ্রুতির অপেক্ষায়।
সূত্রঃ https://aje.io/oz4ryv
আরশি