ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

পলির এগিয়ে চলা

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:২৫, ১১ অক্টোবর ২০২৪

পলির এগিয়ে চলা

বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিকল্পনায় সামনের দিকে ধাবিত হচ্ছে সমান তালে

বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিকল্পনায় সামনের দিকে ধাবিত হচ্ছে সমান তালে। সমসংখ্যক নারী তেমন যাত্রাপথের অনন্য অংশীদার। যা দৃশ্যমান প্রবৃদ্ধির আলোকিত জগৎ। কারণ সমাজের অর্ধেক অংশই যদি অন্ধকার বলয় থেকে আলোর পথে যেতে নির্র্বিঘœ, নিরাপদ না থাকেন সেখানে মূল কার্যক্রম পেছনে হটবেই। তাই দেশের চলমান উন্নয়ন যাত্রায় সামনে চলে আসছে নারীরা। সেখানে নারী শিক্ষা থেকে পেশাগত অবস্থানে বৈচিত্র্যময় কর্মযোগ নারী অধিকার আর স্বাধীনতার নিয়ামক সূচক।

এক সময়ের গৃহিণী নারীরা আজ যুগের প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে পা রেখে শুধু শিক্ষার আলোই নারী ব্যবসা বাণিজ্যকে পরম আগ্রহে নিজের চলার পথের সঙ্গী করতে পেছনের দিকে আর তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। পাপড়ী ইয়াসমিন পলি একজন রন্ধন শিল্পী, যিনি কিনা বাহারি দেশীয় খাবার আয়োজনে গ্রাহকদের শুধু গ্রামবাংলা নয় হারানো কয়েক ঐতিহ্যকেও আধুনিকতার অনুষঙ্গ করতে নিজেকে সমর্পণ করে যাচ্ছেন।

তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের আলাপচারিতায় উঠে আসে বাংলাদেশ বৈচিত্র্যময় আহারেরও বিশেষ মেলবন্ধন অস্বীকারের কোনো জায়গাই নেই। সেই ছোট মাছ কাচকি, পুঁটি, মলা এমন সব ধরণের গ্রামীণ মাছের সম্ভার আধুনিকতার পরশ নির্মাল্যেও ন্যূনতম বিচ্যুতি না ঘটা নতুন সময়কে আনন্দ আয়োজনের শরিক করা। মাছে-ভাতে বাঙালির চিরায়িত আহার সম্ভার আজও সার্বিক জনগণের কাছে কতখানি অমূল্য আবেদন আর সমর্পণে দক্ষ রন্ধন শিল্পী তেমন অভিমতই দিয়ে যাচ্ছেন অবলীলায়, অকুণ্ঠচিত্তে। বাহারি রন্ধন শৈল যে মাত্রায় আহারের পরম খাদ্য তালিকায় চলে আসছে সেটাও তাকে নানামাত্রিকে সুখ-আনন্দে ভরিয়ে তোলে।

সাধারণ বঙ্গ রমণী কিন্তু রন্ধন নৈপুণ্যে হয়ে উঠলেন অসাধারণ এক শৈল্পিক দ্যোতনার অনন্য রাঁধুনী। তিনি মনে করেন যখন রান্নার আয়োজনে হরেক উপাদান প্রস্তুত করতে হয় তখন যে মনোযোগ আর নিবেদন সেটাই যেন শিক্ষণীয় কোনো বিষয়ের প্রতি পরম অর্ঘ্য দেওয়া। অর্ঘ্যই বটে। কারণ যেভাবে পড়াশোনা করেছেন, যতœসহকারে সংসার-ধর্ম পালন করতে হয় সবই যেন বিনি সুতার মালায় একই সূত্রে গাঁথা। রান্না করাটাও যেন সেই আনন্দ, আপ্যায়ন যা অন্যদের জন্য পরম উপভোগ্য হতেও সময় লাগছে না।

পলির ব্যক্তিগত আলাপ-আলোচনায় সামনে এসে যায় তার পারিবারিক বলয়। সেখানে শিশুকন্যা থেকে বড় হওয়া বাবা-মার আদরে। পরের বিষয় লেখাপড়া শিখে নিজেকে তৈরি করা তাও কম মূল্যবান সময় নয় জীবনের। বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কন্যা পাপড়ীর বিয়ে হয়ে যায় নবাবগঞ্জের মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। যিনি ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে তার পেশাগত জীবনকে আনন্দের অনুষঙ্গ করেছেন। সহধর্মিণীর পেশাকেও সম্মানের সঙ্গে পছন্দ করে তার পাশেও দাঁড়িয়েছেন।

দুজনই তাদের কর্মজগত নানামাত্রিকে পরিপূর্ণ করে যাচ্ছেন উৎসাহ আর উদ্দীপনায়। গোপালগঞ্জের কন্যা পলি ‘রানী বীণাপাণি বিদ্যালয়’ থেকে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে শিক্ষা জীবনকে পূর্ণ করেন। এর পর শুরু হয় আর এক নতুন জীবনযাত্রা। অন্য আর একজনের ঘরনি রূপে দাম্পত্যের বন্ধনে জোটে এক হয়ে যাওয়া। নিত্য যাপিত জীবনের পরম অনুষঙ্গ। নিজের সংসার তার আগে পিতা-মাতার স্নেহমাধুর্যে তৈরি হওয়া শৈশব-কৈশোরের আর এক পরম যাপিত জীবনের পালাক্রম। পিতা মোহাম্মদ লোকমান সরদার। মাতা মোসাম্মত দৌলাতুননেছা। পিতা পেশায় ছিলেন শিপইয়ার্ডে।

নদীস্নাত ও সমুদ্র পরিবেষ্টিত আবহমান বাংলার চিরায়িত ঐশ্বর্র্য মৎস্য সম্পদের এক অবারিত বলয়। যা মাছে-ভাতে বাঙালিকে বিশ্ব সভায়ও পরিচিত করাতে অবশ্যম্ভাবী মুখরোচক, সুস্বাদু খাদ্য সম্ভার। পিতার শিপইয়ার্ডের পেশায় আশৈশব হরেক মাছের স্বাদ পেয়ে বড় হয়েছেন পলি। মা ছিলেন পাকা রাঁধুনীর মর্যাদায়। যা আজ অবধি স্মরণ চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে হৃদয়ের নিভৃতে গেঁথে আছে। পলির শিক্ষা জীবন হরেক বৈচিত্র্যে ভরপুর। ইসলামের ইতিহাসের ছাত্রী কোনো এক সময় নজর দিলেন ইংরেজি ভাষাকে দক্ষতার সঙ্গে আয়ত্তে আনতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ইংরেজি ভাষার ওপর কোর্স সম্পন্ন করেন। কোনো এক সময় আমি তার ইংরেজি উচ্চারণ আর পরিমিত শব্দে বাক্য তৈরির সাবলিলতায় মুগ্ধ হই। লেখার উন্নত মানও সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। তেমন সম্মান আমি অপাত্রে দিইনি। পড়াশোনা থেকে শুরু করে ভাষা জ্ঞানে বিশেষ করে বাংলা-ইংরেজিতে নিজেকে ভালো অবস্থানে নিয়ে আসা কম কৃতিত্বের বিষয় নয়। সেখানে আমরা মাতৃভাষাকেই ঠিকঠাকমতো উচ্চারণ করতে ভুলে যাই। আর ইংরেজি ভাষা তো বলাই বাহুল্য। কৃতিত্ব তো বটেই সম্মানের বিষয়ও গুরুত্ববহ। 
নিজেকে যেন পরিপূর্ণভাবে নিবেদন করা। একমাত্র কন্যা সাহিরা সাদিয়া ঢাকার ভিকারুন নিসার দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর রান্নায় পারদর্শিতা? চিরায়িত বাঙালি নারীর নিপুণ হাতে খাদ্যের অনবদ্য রন্ধন শৌর্য। কিছু খাবারের বর্ণনা না দিলেই নয়। ভরা ইলিশের মৌসুমে তৈরি করছেন ইলিশ পোলাও, সরষে ইলিশ। ছোট মাছের সুস্বাদু চচ্চরি। জ্যান্ত রুই, কাতল, মৃগেল মাছের অভাবনীয় সুস্বাদু রান্না।

চিংড়ি মাছের বিভিন্ন পদের আয়োজন সুস্বাদু মাছটিকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যায় শুধু বর্ণনায় হবে না। খেয়ে দেখাও জরুরি। দেশী মুরগির রান্নার যে চিরায়িত স্বাদ, গন্ধ তাও পলির হাতের ছোঁয়ায় খুঁজে পেতে দেরি হয় না। সেই মা, খালা, চাচিদের রান্না। যেখানে পুষ্টি থেকে স্বাদের পর্যন্ত কোনো ব্যত্যয় হয়েই না। মাছ-মাংসের মধ্যে আলুর স্বাদও লোভনীয়, পরম তৃপ্তিদায়ক। 
তার পেজের নাম : Rupa's শরঃপযবহ, মেইল : [email protected]

×