
ছবিঃ সংগৃহীত
ঘুমের সমস্যা আর অ্যালঝেইমারস রোগ—এই দুইয়ের মাঝে একটা গভীর সম্পর্ক থাকতে পারে, এবং নতুন এক গবেষণায় তারই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দেখেছেন, ঘুমের ওষুধ সুভোরেক্স্যান্ট (Suvorexant) খাওয়ানোর পর, মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রোটিন অ্যামিলয়েড-বিটা (amyloid-beta) এবং টাও (tau) এর মাত্রা সামান্য কমেছে। এই দুই প্রোটিনই অ্যালঝেইমারস রোগে মস্তিষ্কে জমে গিয়ে কোষ ধ্বংস করে।
গবেষণাটি ছিল খুব ছোট পরিসরে—মাত্র ৩৮ জন মধ্যবয়সী, সুস্থ এবং ঘুমে কোনো সমস্যা নেই এমন অংশগ্রহণকারী নিয়ে। কিন্তু তারপরও এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ঘুম ও অ্যালঝেইমারসের জৈবিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন আলো ফেলেছে।
ঘুম ভালো তো মস্তিষ্ক ভালো
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন, আমাদের ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেকে পরিষ্কার করে, দিনের জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে ফেলে। যদি ঘুম না হয়, তবে এই প্রোটিনগুলো জমে থেকে যেতে পারে—যার ফল হতে পারে অ্যালঝেইমারস।
এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের দুই রাতে একবার করে সুভোরেক্স্যান্ট ওষুধ বা প্লেসিবো (নকল ওষুধ) খাওয়ানো হয়। এরপর প্রতিনিয়ত তাদের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের তরল) থেকে নমুনা নেওয়া হয় ৩৬ ঘণ্টা ধরে।
ফলাফলে দেখা যায়, সাধারণ ঘুমের ওষুধের ডোজে অ্যামিলয়েড-বিটা প্রোটিন ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। উচ্চ ডোজে সাময়িকভাবে টাও প্রোটিনের পরিবর্তিত সংস্করণ (যেটা কোষ ধ্বংসের সাথে জড়িত) কিছুটা কমে। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা আবার আগের মাত্রায় ফিরে আসে।
তাহলে কি অ্যালঝেইমারস প্রতিরোধে ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত?
গবেষণার প্রধান, নিউরোলজিস্ট ব্রেন্ডান লুসি বলেন, “এখনই কেউ ভাববেন না যে প্রতিরাতে এই ওষুধ খেলে অ্যালঝেইমারস ঠেকানো যাবে। এটা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের গবেষণা।”
তিনি বলেন, ঘুমের ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে নেশা হতে পারে, এবং অনেকক্ষেত্রে এই ওষুধ গভীর ঘুম না এনে হালকা ঘুম ঘটায়, যা পর্যাপ্ত নয়। তার আগের গবেষণাতেও দেখা গেছে, গভীর ঘুমের অভাবে টাও ও অ্যামিলয়েড প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
ঘুম—একটি প্রাকৃতিক ওষুধ
অ্যালঝেইমারস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ওষুধ নেই। কিন্তু ঘুম ঠিক রাখা, ঘুমের স্বাস্থ্য (sleep hygiene) বজায় রাখা, এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অনিদ্রার মতো সমস্যার চিকিৎসা নেওয়া—এই সবই হতে পারে মস্তিষ্ক ভালো রাখার একমাত্র উপায়।
গবেষক লুসির আশা, ভবিষ্যতে এমন ওষুধ আসবে যা ঘুম ও অ্যালঝেইমারসের সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মস্তিষ্ক রক্ষা করতে পারবে।
“আমি আশাবাদী,” বলেন লুসি। “তবে এখনও অনেক পথ বাকি।”
এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে Annals of Neurology নামক জার্নালে।
স্মরণযোগ্য কথা:
- ঘুমের সমস্যাই হতে পারে অ্যালঝেইমারসের শুরুর লক্ষণ।
- ঘুম ভালো মানেই মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা ভালো।
- এখনই ঘুমের ওষুধ দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা না করে, ঘুমের স্বাস্থ্য বজায় রাখাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
নিজের ঘুমের প্রতি যত্নশীল হন। নিয়মিত ঘুম, সকালের রোদ, আর পরিমিত ব্যায়াম—এই তিনই হতে পারে আপনার মস্তিষ্কের প্রকৃত বন্ধু।
মারিয়া