ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ঘুমের সমস্যা? ভেড়া গোনা বাদ দিয়ে বিজ্ঞান-সমর্থিত ১০ উপায়ে দ্রুত ঘুমান

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১০:৫৬, ১১ জুলাই ২০২৫

ঘুমের সমস্যা? ভেড়া গোনা বাদ দিয়ে বিজ্ঞান-সমর্থিত ১০ উপায়ে দ্রুত ঘুমান

ছবি: সংগৃহীত

রাতে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করছেন, কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না? ভেড়া গুনেও কোনো লাভ হচ্ছে না? চিন্তা করবেন না, ঘুমের সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানীরা কিছু কার্যকর পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন, যা আপনাকে দ্রুত এবং গভীর ঘুমে সাহায্য করতে পারে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে স্লিপ স্পেশালিস্ট ডা. সমীর সাহা বলেছেন, একটি ভালো ঘুমের রুটিন তৈরি করতে ২১ দিন সময় লাগে, তাই ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

এখানে বিজ্ঞান-সমর্থিত ১০টি কার্যকর পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:

১. ৪-৭-৮ শ্বাসপ্রশ্বাস পদ্ধতি

এটি একটি সহজ শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল যা মনকে শান্ত করে এবং শরীরকে শিথিল করে ঘুম আনতে সাহায্য করে।

  • জিভের ডগা উপরের দাঁতের পেছনে রাখুন।

  • ৪ সেকেন্ড ধরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন।

  • ৭ সেকেন্ড শ্বাস আটকে রাখুন।

  • ৮ সেকেন্ড ধরে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।

  • এই প্রক্রিয়াটি ৪ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

২. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

ঘুমের জন্য উপযুক্ত ঘরের তাপমাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • শোবার ঘরের তাপমাত্রা ১৮-২২° সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখুন।

  • গরমকালে বিছানায় যাওয়ার আগে ঠান্ডা পানি দিয়ে পা ধুয়ে নিতে পারেন, যা শরীরকে শীতল করে।

৩. সন্ধ্যায় ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

ক্যাফেইন ঘুম ব্যাহত করে।

  • দুপুর ২টার পর চা-কফি বা অন্য কোনো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করা বন্ধ করুন।

  • ক্যাফেইনের বদলে গ্রিন টি বা হার্বাল টি পান করতে পারেন।

৪. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

ম্যাগনেসিয়াম প্রাকৃতিক পেশী শিথিলকারক হিসেবে কাজ করে।

  • রাতে ঘুমানোর আগে কলা, বাদাম বা ডার্ক চকলেট এর মতো ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান।

৫. ডিজিটাল ডিটক্স

ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আলো ঘুম নষ্ট করতে পারে।

  • ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে ফোন, ট্যাব এবং ল্যাপটপ বন্ধ করুন।

  • যদি একান্তই ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়, তবে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করুন বা ব্লু লাইট চশমা পরুন।

৬. প্রগতিশীল পেশী শিথিলকরণ

এই পদ্ধতি শরীরের প্রতিটি পেশীকে ধাপে ধাপে শিথিল করে।

  • পায়ের আঙুল থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত প্রতিটি পেশী কয়েক সেকেন্ডের জন্য শক্ত করুন, তারপর সম্পূর্ণ শিথিল করুন। এভাবে শরীরের ওপরের দিকে উঠতে থাকুন।

৭. ঘুমের সময়সূচি মেনে চলুন

শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে ঠিক রাখতে নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি জরুরি।

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন, এমনকি সপ্তাহান্তেও এই রুটিন ভাঙবেন না।

৮. সুবাস থেরাপি

কিছু সুগন্ধি মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে।

  • ল্যাভেন্ডার বা ক্যামোমাইল তেলের মতো এসেনশিয়াল অয়েলের সুগন্ধি ব্যবহার করুন।

  • বালিশে ১-২ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল স্প্রে করতে পারেন।

৯. গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা লিখে ফেলুন

মনের দুশ্চিন্তা বা পরিকল্পনা ঘুম নষ্ট করতে পারে।

  • ঘুমানোর আগে আপনার মাথায় ঘুরপাক খাওয়া সব চিন্তা একটি নোটবুকে লিখে ফেলুন। এটি মনকে হালকা করে এবং ঘুমাতে সাহায্য করে।

১০. সঠিক ঘুমানোর ভঙ্গি

ঘুমের ভঙ্গিও ঘুমের গুণগত মানকে প্রভাবিত করে।

  • পিঠের বদলে পাশ ফিরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

  • দুই হাঁটুর মাঝে একটি বালিশ রাখুন, যা মেরুদণ্ডকে সঠিক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করবে।

কিছু বাড়তি সতর্কতা:

  • ঘুমের ওষুধের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন।

  • বিছানায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন এবং কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন।

  • দিনের বেলা ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে ঘুমানো এড়িয়ে চলুন, এটি রাতের ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে।

এই অভ্যাসগুলো নিয়মিত পালনের মাধ্যমে আপনি একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন তৈরি করতে পারবেন এবং দীর্ঘস্থায়ী ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

সাব্বির

×