ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

জলবায়ু বিপন্নতা নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ১৭:৫৫, ১০ জুলাই ২০২৫

জলবায়ু বিপন্নতা নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি

সমসংখ্যক নারীর আর্থসামাজিক অধিকারে আইনগত কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু অপেক্ষাকৃত কোমল নারীরা বিভিন্নভাবে অনেক বৈপরিত্যের মুখোমুখি হয় বলে তথ্য উপাত্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। সমুদ্র পরিবেষ্টিত ও নদীস্নাত বাংলাদেশ হরেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে সামাল দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে জলবায়ু সংকটও মাথা চাড়া দিতে সময় নিচ্ছে না। নারী ও শিশুরা থাকছে চরম দুর্যোগপূর্ণ আবহে। মহিলা পরিষদের এক সভায় এমন তথ্য-উপাত্ত বিচলিত হওয়ার মতো। জলবায়ু প্রাকৃতিক এক চলমান প্রক্রিয়া। যার থেকে নারী-পুরুষ সবাই কিছু না কিছু বিপত্তির শিকার হয়। সেখানে নারীদের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলে আশঙ্কা করা প্রচলিত ধারা বলাই চলে। জলবায়ু সংকটে শুধু নারী নির্যাতন নয় তার চেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাবে প্রজনন স্বাস্থ্যেও ফেলছে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে উপকূলের হতদরিদ্র নারীদের সিংহভাগ সময় কাটে লবণাক্ত পানিতে। যা তাদের মাতৃত্বের পরম আকাক্সক্ষায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়া সংগত হলেও অযৌক্তিক তো বটেই। শুধু নৈসর্গ্যরে আঁচড় নয় বরং সামাজিকভাবেও তাদের প্রতিদিনের কর্মযোগে এমন বৈরিতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো বলে মহিলা পরিষদের এক সভায় উঠে আসে। যা নাকি সমতার সম্ভাবনাকেও বিনষ্ট করতে আগ্রাসী। সামাজিক সহিংসতা আর প্রাকৃতিক প্রদাহ সবই এক সূত্রে গাঁথা যেন বিনি সূতোর মালা। উপকূলের নিম্নবিত্ত নারীদের নিত্যকর্ম আর শ্রমযোগে লবণাক্ত পানির বিপরীত প্রদাহে সম্ভাবনাময় মাতৃত্বের আধারকেও বিঘ্নতার জালে ফেলে দেওয়ার তথ্য ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের। লাগাতার সময় ধরে লবণযুক্ত পানিতে মৎস্যজীবী নারীরা মাছ ধরার কর্মযোগে সম্পৃক্ত থাকেন। যাতে জরায়ুর মুখ থেকে পুরো প্রজনন স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে বয়ে বেড়ানো নারীদের কত স্বপ্ন যে স্বাস্থ্যহানির বিপন্নতায় হারিয়ে যায় তাও সংশ্লিষ্টদের জন্য এক অসহনীয় দুর্যোগ। আমরা আষাঢ় মাসের ঘন ঘোর বর্ষাকে আলিঙ্গন করছি। যা ঋতু বৈচিত্র্যের আবহমান বাংলাদেশের নিয়মিত পালাক্রম। সংগত কারণে এর যথার্থ প্রতিকার আর উপায় খুঁজে নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয় নারী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। আগামীর বাংলাদেশের নবপ্রজন্ম যেন সুস্থ স্বাভাবিকভাবে মাতৃজঠর থেকে যথাসময়ে জগতের আলো দেখে তার জন্য প্রাসঙ্গিক ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া অনিবার্য বলে মহিলা পরিষদ উদাত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানায়। এরই মধ্যে পালিত হলো ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। তেমন দিবসের আলোচনাসভায় একসঙ্গে আওয়াজ তোলা হয় নারীর প্রজন্ন স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকলে নতুন প্রজন্ম কি করে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীর আলো দেখবে? তবে সব অভিযোগ কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার দিকে চলে যাওয়াও অসংগত। স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের প্রত্যেকের দায়-দায়িত্ব পরিবেশ পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্যসম্মত আর নিরাপত্তার বেষ্টনীতে ঢেকে দেওয়া। সবচাইতে আশঙ্কিত বিষয় উপকূলীয় দরিদ্র নারীরা জানেও না তাদের চারপাশে কত বিপদ বিপন্নতা সহিংস আঁচড় বসাচ্ছে। সেখানে বেশি ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মাতৃরূপে নারীর সম্ভাবনাময় মহাশক্তি মা হওয়ার মোক্ষম জায়গায়। সাবধান, সচেতনতায় নারীকেই নিজের বিপদশঙ্কুল অবস্থা পাড়ি দিতে হবে। লবণাক্ত পানি থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখা ও পরিবেশ পরিস্থিতির ন্যায্যতা। আর ঘূর্ণিঝড়ের অপঘাতে দৃশ্যমান বিপত্তি কিন্তু নারী ও কোমলমতি শিশুদের। সেখানে গর্ভবতী নারীদের অবস্থাও শোচনীয়। প্রজনন স্বাস্থ্যে ঝুঁকি হলে চিকিৎসাও অনিবার্য। তেমন খরচ নাকি উপকূলীয় নারীদের প্রতিনিয়ত বেড়ে যাওয়ার দৃশ্যও স্বস্তিকর নয়। জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা নৈসর্গিক প্রদাহে নারীর যে দুঃসময় পার করা তার যথাযথ প্রতিকার না হলে আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যহানিও কোথায় গিয়ে ঠেকবে আশঙ্কিত এক বিষয়। 

 

প্যানেল/মো.

×