ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

লিভার সুস্থ রাখতে এই ৯টি বিষয় সবাইকে জানতে হবে

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ৯ জুলাই ২০২৫

লিভার সুস্থ রাখতে এই ৯টি বিষয় সবাইকে জানতে হবে

ছবি:সংগৃহীত

আমাদের শরীরে লিভার প্রতিনিয়ত অসাধারণ কাজ করে চলেছে—রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলা, রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখা, হজমে সাহায্য করা—এমনকি ৫০০-রও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তবু আমরা খুব কমই লিভারের যত্ন নেওয়ার কথা ভাবি।

এআইআইএমএস, হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডে প্রশিক্ষিত লিভার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌরভ সেঠি এবার এই বিষয়ে সচেতন করতে এগিয়ে এসেছেন। সম্প্রতি তিনি এমন ৯টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছেন, যা তিনি বলেন, “আমি এগুলো আর গোপন রাখতে চাই না।”

চলুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর সেই জরুরি কথাগুলো:

১. হ্যাঁ, লিভার নিজেকে সারাতে পারে—কিন্তু সীমা আছে
লিভার এমন একটি অঙ্গ যা নিজে নিজেই ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে। তবে যদি ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সেখানে চিরস্থায়ী দাগ পড়ে (সিরোসিস), যা আর ফিরে আসে না।

২. কফি শুধু ঘুম কাটায় না, লিভারের জন্য ওষুধও বটে
প্রতিদিন ৩ কাপ বা তার বেশি কফি খেলে লিভারের সিরোসিস বা ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ৪০% কমে।
ডাঃ সেঠির পরামর্শ: কফিতে চিনি বা ক্রীম না মেশান। আর যদি ক্যাফেইন আপনার ঘুম বা নার্ভের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে, তাহলে অবশ্যই সাবধান হোন।

৩. ফ্যাটি লিভার শুধু মদ্যপানকারীদের সমস্যা নয়
আজকাল প্রতি ৩ জনে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন, যাঁরা কখনও মদও খাননি। এই রোগ প্রায়ই কোনো লক্ষণ ছাড়াই শরীরের বড় ক্ষতি করে ফেলে।

৪. আপনি যা খান, ওষুধসহ—সবকিছুই লিভারের ওপর দিয়ে যায়
সাধারণ পেইনকিলার যেমন প্যারাসিটামল (অ্যাসিটামিনোফেন), অতিরিক্ত খেলে মারাত্মক লিভার ক্ষতি হতে পারে। ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডোজ ঠিকমতো জেনে নিন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. আপনার ঘুমই ঠিক করে দিচ্ছে লিভারের ‘মেরামতির’ গতি
পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম না হলে লিভারের কাজ ব্যাহত হয়, বিষক্রিয়া পরিষ্কার কমে যায়। প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা গভীর ঘুম আপনার লিভারের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে।

৬. লিভারেরও একটা নিজের ঘড়ি আছে
আপনার শরীরের মতো লিভারও একটি নির্দিষ্ট ছন্দে কাজ করে (সার্কেডিয়ান রিদম)। রাতে দেরি করে খাওয়া লিভারের প্রাকৃতিক ডিটক্স কাজকে ব্যাহত করে এবং এতে চর্বি জমে যায়।

৭. আপনার বাসাতেই লুকিয়ে থাকতে পারে লিভারের শত্রু
ডিশ ওয়াশ, ফ্লোর ক্লিনার, কসমেটিকস এমনকি কীটনাশক—এসবের অনেক উপাদান লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক বা হালকা বিকল্প ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

৮. সব সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিনই নিরাপদ নয়
অনেক হারবাল সাপ্লিমেন্ট বা অতিরিক্ত মাত্রার ভিটামিন লিভারে প্রদাহ বা ক্ষতি করতে পারে। "প্রাকৃতিক" বলেই সবকিছু ভাল নয় — শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৯. প্রচুর পানি পান করলে লিভার পরিষ্কার রাখতে সুবিধা হয়
আপনার লিভার যদি ঠিকভাবে টক্সিন বের করতে চায়, তাহলে তাকে সাহায্য করুন। প্রতিদিন ২–৩ লিটার পানি পান করুন। শরীর সচল থাকবে, লিভারও হাঁফ ছাড়বে।


ডাঃ সেঠির মতে, “আপনার লিভার ২৪ ঘণ্টা নিরলসভাবে কাজ করছে—আপনিও তাকে একটু সাহায্য করুন। ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তনই পারে বড় ক্ষতি ঠেকাতে।”

 

মারিয়া

×