ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

হাতে ও পায়ের জয়েন্টের ব্যথা কমানোর খাবার

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ৯ জুলাই ২০২৫

হাতে ও পায়ের জয়েন্টের ব্যথা কমানোর খাবার

ছবি: সংগৃহীত

হাতে ও পায়ের জয়েন্টের ব্যথা (আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যা) কমানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার খুবই উপকারী হতে পারে। এসব খাবার মূলত প্রদাহ কমাতে, কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং ব্যথা উপশমে সাহায্য করে।

এখানে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করতে পারে:

১. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শক্তিশালী প্রদাহরোধী উপাদান। এটি জয়েন্টের প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর।

  • ফিশ অয়েল (চর্বিযুক্ত মাছ): স্যালমন, ম্যাকেরেল, সার্ডিন, টুনা মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ থাকে। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার এসব মাছ খাওয়া উপকারী।

  • চিয়া সিড ও ফ্ল্যাক্স সিড (তিসির বীজ): এগুলো উদ্ভিজ্জ ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস। সালাদ, দই বা স্মুদিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

  • আখরোট: এটিও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ একটি বাদাম।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ফ্রি র‍্যাডিকেল দূর করে, যা প্রদাহের অন্যতম কারণ।

  • বেরি জাতীয় ফল: স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, চেরি (চেরি বিশেষ করে গাউটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে)।

  • গাঢ় সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, কেল, ব্রোকলি। এগুলোতে ভিটামিন কে, সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

  • কমলা, লেবু, পেঁপে, আনারস: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, যা কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়।

৩. হলুদ ও আদা: এগুলো প্রাকৃতিক প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে পরিচিত।

  • হলুদ: হলুদের মূল উপাদান কারকিউমিন শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণসম্পন্ন। দুধের সাথে মিশিয়ে (গোলমরিচ সহ, কারণ গোলমরিচ কারকিউমিনের শোষণ বাড়ায়) বা তরকারিতে ব্যবহার করতে পারেন।

  • আদা: আদা ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আদা চা বা তরকারিতে আদা ব্যবহার করতে পারেন।

৪. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ডি হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। এর অভাবে ব্যথা বাড়তে পারে।

  • ফ্যাটি ফিশ: স্যালমন, ম্যাকেরেল।

  • ফর্টিফায়েড দুধ ও দই: ভিটামিন ডি যুক্ত দুধ ও দই।

  • সূর্যের আলো: সকালের নরম রোদ ভিটামিন ডি এর প্রাকৃতিক উৎস।

৫. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার: ক্যালসিয়াম হাড়ের শক্তি বজায় রাখে।

  • দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: দুধ, দই, পনির।

  • বাদাম ও বীজ: তিল, আমন্ড।

  • সবুজ শাকসবজি: ব্রোকলি, কেল।

৬. আস্ত শস্য (Whole Grains): ব্রাউন রাইস, ওটস, বার্লি, কুইনোয়া - এই ধরনের আস্ত শস্য প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রক্রিয়াজাত শস্য (সাদা রুটি, সাদা চাল) এড়িয়ে চলা ভালো।

৭. ডাল ও মটরশুঁটি: এগুলো উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন, ফাইবার এবং খনিজ উপাদানের ভালো উৎস, যা প্রদাহ কমাতে সহায়ক।

৮. অলিভ অয়েল: এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল (जैतून का तेल) এ ওলিওক্যান্থাল নামক একটি প্রদাহরোধী যৌগ থাকে, যা আইবুপ্রোফেনের মতো কাজ করে।

যা এড়িয়ে চলবেন বা সীমিত করবেন:

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ফাস্ট ফুড: এগুলো প্রদাহ বাড়াতে পারে।

  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়: চিনি প্রদাহ বাড়ায়।

  • লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস: ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

  • অতিরিক্ত লবণ: ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে পাথর তৈরি করতে পারে।

  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল: এটিও প্রদাহ বাড়ায়।

গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ: খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি, পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা (যেমন হাঁটা, সাঁতার) এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জয়েন্টের ব্যথা কমাতে অত্যন্ত জরুরি। যদি ব্যথা তীব্র হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

সাব্বির

×