
চাকরির বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত একটি ধারণা হলো—কাজ জানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো "চেনা জানা" বা পরিচিতি। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। এতে দেখা গেছে, যেসব কর্মী কোনো খ্যাতিমান বা তারকা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পূর্বে কাজ করেছেন, তারা কর্মজীবনের শুরুতে সুবিধা পেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
গবেষণাটি কোথায় হয়েছে? এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Journal of Applied Psychology-তে। এতে যুক্ত ছিল দুই ধরণের বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্রের NBA-এর ১৭৯ জন হেড কোচের চার দশকের ক্যারিয়ার পর্যালোচনা এবং প্রায় ৫০০ কর্মজীবী প্রাপ্তবয়স্কের অংশগ্রহণে একটি পরীক্ষা।
কী বলছে গবেষণা?
গবেষণায় দেখা যায়, যেসব কোচ পূর্বে কোন লিজেন্ডারি কোচের (যেমন: ফিল জ্যাকসন) অধীনে কাজ করেছেন, তারা নতুন দলে দায়িত্ব নেওয়ার পর যদি খারাপ পারফর্ম করেন, তবুও চাকরি হারানোর ঝুঁকি কম থাকে। কারণ তাদের সঙ্গে তারকা কোচের সংযোগের কারণে ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে ধরা হয়—এটা শুধুই অস্থায়ী ব্যর্থতা।
অন্যদিকে, যদি তারা ভালো পারফর্ম করেন, তখন সেটিকে 'স্বাভাবিক' বা 'প্রত্যাশিত' হিসেবে ধরা হয়। ফলে ভালো কাজ করেও তারা প্রয়োজনীয় স্বীকৃতি বা পুরস্কার পান না। গবেষণার তথ্য বলছে, এই প্রভাব প্রায় ৯ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ব্যক্তিগত পরিসরে একই চিত্র ডিজাইন শিল্প নিয়ে করা পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা দুটি কাল্পনিক কর্মীর কাজ মূল্যায়ন করেন—একজন যিনি খ্যাতনামা ব্যক্তির প্রাক্তন সহকর্মী এবং অপরজন যিনি এমন কোনো পরিচিতির সাথে যুক্ত নন। ফলাফলে দেখা যায়, তারকা-সংযুক্ত কর্মী খারাপ করলে বিচারকরা সেটিকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে দেখেন, কিন্তু ভালো করলে সেটিকে বেশি গুরুত্ব দেন না। অপরদিকে, সাধারণ কর্মীর ব্যর্থতা ধরা হয় তার ‘অযোগ্যতা’ হিসেবে।
কেন এমন হয়?
গবেষকেরা বলছেন, এটির পেছনে কাজ করে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা, যাকে বলা হয় Balance Theory। এর মাধ্যমে মানুষ তাদের ইতিবাচক ধ্যানধারণা ধরে রাখতে চায়। ফলে, তারকা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত কাউকে নিয়ে সেই ইতিবাচক ভাবনা বজায় রাখতে গিয়ে বাস্তবতা উপেক্ষা করা হয়।
বব নারডেলির উদাহরণ এই প্রভাব বাস্তব দুনিয়ায়ও দেখা যায়। জেনারেল ইলেকট্রিকের কিংবদন্তি সিইও জ্যাক ওয়েলচের প্রোটেজে ছিলেন বব নারডেলি। তিনি হোম ডিপোর সিইও হয়ে দুর্দান্ত আর্থিক ফলাফল দেন। তবুও তাকে তেমন স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, বরং পরবর্তীতে তাকে চাকরি ছাড়তে হয়। তখন তিনি বলেন, "পুরস্কার না পাওয়াটা বুঝি, কিন্তু শাস্তি পাওয়াটা বুঝি না।"
চাকরি দাতা ও কর্মীদের জন্য পরামর্শ গবেষকরা বলছেন, যারা কর্মী নির্বাচন বা পদোন্নতি দেন, তাদের উচিত প্রভাবশালী পরিচিতির কারণে মূল্যায়নে পক্ষপাত না দেখানো। মূল্যায়ন করা উচিত নির্দিষ্ট কর্মদক্ষতা, আচরণ ও কর্মফল অনুসারে। প্রয়োজনে ৩৬০ ডিগ্রি ফিডব্যাক কিংবা নিরপেক্ষ প্রমোশন কমিটি গঠন করার কথাও বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, যারা নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উচিত নিজের কাজের কৃতিত্ব স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা। পরিচিতির ছায়া থেকে বের হয়ে নিজস্ব অবদান তুলে ধরলেই মূল্যায়নে সঠিক চিত্র উঠে আসবে।
পরিচিতির জোরে প্রথম ধাপটি পার হওয়া সম্ভব, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে হলে প্রমাণ করতে হবে নিজের কাজের দক্ষতা ও অর্জন। পরিচিতি নয়, ক্যারিয়ারে প্রকৃত সাফল্য নির্ভর করে নিজের কাজের ওপর।
রিফাত