
বিশ্বজুড়ে শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় বড় ধরনের সাফল্য এসেছে। নবজাতক ও কম ওজনের ছোট শিশুদের জন্য প্রথমবারের মতো বিশেষভাবে তৈরি ম্যালেরিয়া চিকিৎসার ওষুধ “Coartem Baby” অনুমোদন পেয়েছে।
ওষুধটি তৈরি করেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওষুধপ্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নভার্টিস, এবং অনুমোদন দিয়েছে সুইস স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি আফ্রিকার উচ্চ সংক্রমণপ্রবণ দেশগুলোতে চালু করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
শিশুমৃত্যুর পরিসংখ্যান ভয়াবহ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়াজনিত কারণে প্রায় ৫৯৭,০০০ জনের মৃত্যু হয়, যার ৭৫ শতাংশই ছিল পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু।
এই মৃত্যুর অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশে, যেখানে কম ওজন ও সদ্যোজাত শিশুদের জন্য উপযুক্ত ওষুধের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যার বিষয় ছিল।
আগে ছিল না অনুমোদিত ওষুধ
যেসব শিশুদের ওজন ৪.৫ কেজির কম, তাদের জন্য এতদিন পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ম্যালেরিয়া ওষুধ ছিল না। চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়েই তাদের বড় শিশুদের জন্য তৈরি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতেন—যা ডোজজনিত ঝুঁকি তৈরি করত, কারণ নবজাতকের যকৃত ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি বিকশিত হয় না।
এই কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থায় একটি "গ্যাপ" বা ফাঁক তৈরি হচ্ছিল, যা ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুহার আরও বাড়িয়ে তুলছিল।
পরীক্ষিত ও নিরাপদ ডোজ
নভার্টিস এবং Medicines for Malaria Venture (MMV) এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘Coartem Baby’ ওষুধটি নবজাতক ও ৪.৫ কেজির কম ওজনের শিশুদের জন্য পরীক্ষিত ও নিরাপদ ডোজে প্রস্তুত করা হয়েছে।
এতে রয়েছে আর্টেমিথার ও লুমেফানট্রিন—যা বহু বছর ধরেই ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
আটটি আফ্রিকান দেশ এই ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও মূল্যায়নে অংশ নিয়েছে এবং তারাই প্রথম ধাপে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি পাবে।
অলাভজনকভাবে সরবরাহ করবে নভার্টিস
নভার্টিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ভাস নারাসিমহান বলেন,
“আমরা গর্বিত যে তিন দশকের গবেষণার পর আমরা এমন একটি ওষুধ আনতে পারলাম যা সবচেয়ে ছোট এবং ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করবে।”
সংস্থাটি জানিয়েছে, ওষুধটি অলাভজনক ভিত্তিতে সরবরাহ করা হবে, যাতে স্বল্প আয়ের দেশগুলোর শিশুদের মধ্যেও সমতা বজায় থাকে।
রোগ নিরাময়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব
MMV-এর প্রধান নির্বাহী মার্টিন ফিচেট বলেন,
“এটি ম্যালেরিয়া নিরাময়ের পথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এতদিন এই বয়স ও ওজন শ্রেণির শিশুদের জন্য কোনো কার্যকর ওষুধ ছিল না। এখন সেই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে।”
যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মারভেল ব্রাউন বলেন,
“সাব-সাহারান আফ্রিকায় শিশুদের মধ্যে ম্যালেরিয়াজনিত মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সিকেল সেল ডিজিজসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। এমন একটি ওষুধ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বৈপারীত্য ঘটাতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ভবিষ্যতে শিশু মৃত্যুর হার কমাতে ও স্বাস্থ্যসেবা সমতার নিশ্চয়তা দিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
Jahan