
স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ও হাসপাতাল
বন্ধের ১৬তম দিনে স্বল্প পরিসরে চালু হয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ও হাসপাতালের বহির্বিভাগ। পাশপাশি চালু আছে জরুরি বিভাগও। তবে হাসপাতালের ইনডোর কার্যক্রম এখনো বন্ধ।
বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসক ও স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা হাসপাতালে এসেছেন। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে। এসব নিশ্চিত করলে তারা নিয়মিতই আসবেন। তবে অধিকাংশ চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের নিরাপত্তা শঙ্কা এখনো কাটেনি।
এদিকে, স্বল্প পরিসরে সেবা চালু হলেও হাসপাতাল ভবনের চতুর্থ তলা এখনো দখলে রেখেছেন জুলাই আহতরা। তাদের কয়েকজন চতুর্থ তলার কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে ভেতরে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের কারও সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
চিকিৎসক-নার্সদের ৮ দাবি ॥ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এতে তারা আট দফা দাবি তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার স্বল্প পরিসরে আউটডোর সেবা চালু হলে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একসঙ্গে সভায় বসেন। পরে তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জুলাই আহতদের পুনর্বাসনসহ ৮ দফা দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন। তার একটি অনুলিপি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত ‘জুলাই আন্দোলন’-এ আহত সব রোগীকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ও মানবিক বিবেচনায় উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। কিন্তু, বর্তমানে হাসপাতাল এক চরম নিরাপত্তা সংকট ও অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন। চিকিৎসার প্রয়োজন শেষ হওয়া সত্ত্বেও কিছু রোগী প্রায় ১০ মাস যাবৎ অপ্রয়োজনে হাসপাতালে অবস্থান করছেন। তারা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের গালিগালাজ, শারীরিক আক্রমণ এমনকি হাসপাতাল পরিচালকের ওপর হামলা ও আগুন লাগানোর হুমকিসহ নানাবিধ সহিংস কর্মকা- ঘটিয়েছে।
এতে দাবি করা হয়, তাদের দখলে থাকা সিটগুলো প্রকৃত দরিদ্র ও জরুরি রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে, অনেকেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তি ও অপারেশনে তারা প্রভাব বিস্তার এবং ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, তারা (জুলাই আহত) পরিচালককে আটকে রাখেন এবং গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিতে চেষ্টা করেন। সর্বশেষ হামলা করে অনেক চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গুরুতর আহত এবং হাসপাতালের অনেক স্থাপনার ক্ষতি করেন। সংকট সমাধান এবং চিকিৎসা কার্যক্রম নিশ্চিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড ৪ জুন হাসপাতালে আহত রোগীদের দেখতে আসেন। এ সময় ৫৫ জন আহতের মধ্যে মাত্র ৩০ জন মেডিক্যাল বোর্ডে উপস্থিত হন এবং তাদের কারোরই হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই বলে মেডিক্যাল বোর্ড মতামত দেয়। কিন্তু ছুটি দেওয়া সত্ত্বেও তারা হাসপাতাল ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং আবারও চিকিৎসকদের অবরুদ্ধ করেন। স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একটি দিনের জন্য বন্ধ থাকবে এটি কোনভাবেই কারও কাম্য নয়। আমরা বিশ্বাস করি, অবিলম্বে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো না নিলে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার (স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) সুদৃষ্টি ও জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্মারকলিপির অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অপথ্যালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওএসবি) এর আহ্বায়ক বা সদস্য সচিবকেও দেওয়া হয়।