
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বজুড়ে দ্রুত বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা, যার প্রভাব ভারত ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ২০২১ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, “ভারতে চীনের পর সর্বোচ্চ সংখ্যক টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (IDF) মতে, ২০১৯ সালে ভারতে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। এই সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ১০১ মিলিয়ন এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৩৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
এই পরিসংখ্যান জানিয়ে দেয়, ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা, চিকিৎসা নেওয়া এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখা এখন সময়ের দাবি। ‘নীরব ঘাতক’ নামে পরিচিত টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধে, যার প্রাথমিক উপসর্গ অনেক সময়েই অযত্নে থেকে যায়। অথচ এই প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিনে ফেলা গেলে সময় থাকতেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। নিচে ডায়াবেটিসের এমনই সাতটি প্রাথমিক লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলি অবহেলা করলে পরে মারাত্মক হতে পারে:
১. অতিরিক্ত পিপাসা অনুভব করা
যথেষ্ট পানি পান করার পরেও যদি গলা শুকিয়ে থাকে বা বারবার পানি খেতে ইচ্ছে করে, তবে তা হতে পারে উচ্চ রক্তে শর্করার প্রভাব। শরীর তখন টিস্যু থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। বিশেষ করে রাতে অতিরিক্ত পিপাসা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া ডায়াবেটিসের সাধারণ লক্ষণ।
২. ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
সম্প্রতি কি রাতে বারবার বাথরুম যেতে হচ্ছে? এমনটা হলে তা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে কিডনি সেই অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে চায়, ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ।
৩. অকারণে ওজন কমে যাওয়া
বিনা কারণে, ডায়েট বা ব্যায়াম ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া হলে তা হতে পারে টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ। শরীর যখন পর্যাপ্ত গ্লুকোজ পায় না, তখন তা শক্তির জন্য পেশি ও ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে, যার ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস ঘটে।
৪. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি সারাদিন দুর্বল লাগে, কাজের শক্তি না থাকে—তবে সেটা চিন্তার বিষয়। গ্লুকোজ ঠিকভাবে কোষে প্রবেশ করতে না পারলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি পায় না, ফলে স্থায়ী ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয়।
৫. ঝাপসা দৃষ্টি
রক্তে অতিরিক্ত চিনি চোখের লেন্স থেকে তরল টেনে নেয়, ফলে ফোকাস করতে সমস্যা হয় এবং চোখ ঝাপসা দেখায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি চোখের রেটিনার ক্ষতি করে স্থায়ী দৃষ্টিশক্তি হানির কারণ হতে পারে। ঝাপসা দেখার পাশাপাশি অন্য উপসর্গ থাকলে দ্রুত রক্তে চিনি পরীক্ষা করান।
৬. ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
ডায়াবেটিস রক্তপ্রবাহকে ব্যাহত করে ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ফলে ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষতও সহজে শুকাতে চায় না। বিশেষ করে পায়ের ক্ষত সহজে না শুকালে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
৭. হাত-পায়ে ঝিনঝিন বা অবশভাব
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত এই উপসর্গটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি মারাত্মক প্রাথমিক ইঙ্গিত। হাত-পায়ে ঝিনঝিন, অবশভাব বা জ্বালাভাব হলে সেটি হতে পারে স্নায়ু ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণ। সময়মতো চিকিৎসা না হলে তা স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
এই উপসর্গগুলোর মধ্যে একাধিক যদি আপনার মধ্যে দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তা নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তনেই আপনি বাঁচাতে পারেন নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এমনকি জীবনও।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান