
ছবি: Gerard Hoet (ডিজাইন) ও Joseph Mulder (খোদাই), ১৭২০–১৭২৮ | পাবলিক ডোমেইন
ইহুদি জাতি ইতিহাসের এক প্রাচীন জনগোষ্ঠী, যাদের উত্থান-পতনের বিস্তৃত বিবরণ আল-কুরআনে পাওয়া যায়। নবী ইব্রাহীম (আ.) থেকে শুরু করে নবী মূসা (আ.) পর্যন্ত এ জাতির ইতিহাস একদিকে গৌরবময়, অন্যদিকে বেদনাদায়ক ও বিক্ষিপ্ত। নবী ইব্রাহীম (আ.)-এর পুত্র ইসহাক (আ.) এবং তাঁর পুত্র ইয়াকুব (আ.), যাঁর অপর নাম ছিল ‘ইসরাঈল’।তাঁর বংশধররাই বনী ইসরাঈল নামে পরিচিত। আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন, “হে বনী ইসরাঈল! স্মরণ করো আমার সেই অনুগ্রহ, যা আমি তোমাদের প্রতি করেছিলাম এবং তোমাদেরকে জগতবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।” (সূরা আল-বাকারা, ২:৪৭)
তবে এই শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে তারা ব্যর্থ হয়। একে একে নবীদের অমান্য ও হত্যা, কিতাব বিকৃতি, চুক্তিভঙ্গ এবং ফিতনা সৃষ্টির মাধ্যমে তারা নিজেদের অবনমিত করে তোলে। কুরআনে উল্লেখ আছে, “তারা আল্লাহর কালাম শুনে তা বুঝেও বিকৃত করতো।” (সূরা আল-বাকারা, ২:৭৫) এবং, “তারা নিজেদের হাতে কিতাব লিখে বলে, ‘এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে’, যাতে তারা এর বিনিময়ে সামান্য মূল্য পায়।” (সূরা আল-বাকারা, ২:৭৯)
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় তথাকথিত ‘ইসরায়েল রাষ্ট্র’। এর পেছনে দীর্ঘ পরিকল্পনা ও জায়নিস্ট আদর্শ কাজ করেছে, যা কেবল একটি ভৌগোলিক সীমানা নয়—বরং একটি বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের দর্শন। Rothschild পরিবার, Freemasonry ও Zionist চক্র এই আন্দোলনের নেপথ্য শক্তি হিসেবে চিহ্নিত। আজকের বিশ্ব অর্থনীতি, গণমাধ্যম, চলচ্চিত্র, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধশিল্প ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রজুড়ে এ গোষ্ঠীর প্রভাব অনেকাংশেই দৃশ্যমান।
এ প্রসঙ্গে কুরআনে বলা হয়েছে, “তুমি দেখবে, তাদের অনেকেই পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে। আর আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালোবাসেন না।” (সূরা আল-মায়িদা, ৫:৬৪)
ইয়াহুদীরা নিজেদের ‘আল্লাহর মনোনীত জাতি’ দাবি করলেও, বাস্তবে তারা ধর্মীয় সত্য বিকৃত করে এক বর্ণবাদী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে। সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে তারা মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। কুরআনে আছে, “তারা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ে দেয় এবং জেনে-বুঝেও তা গোপন করে।” (সূরা আল-বাকারা, ২:৪২)
ভবিষ্যতের পরিণতি সম্পর্কেও কুরআন ও সহীহ হাদীসে স্পষ্ট বার্তা এসেছে। আল্লাহ বলেন, “যখন তারা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসবে, তখন আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এমন এক বাহিনী প্রেরণ করব যারা প্রবল শক্তিশালী হবে; তারা তোমাদের ঘরে ঢুকে পড়বে।” (সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “কিয়ামতের পূর্বে ইয়াহুদীদের সঙ্গে মুসলিমদের যুদ্ধ হবে। এমনকি পাথর ও গাছ পর্যন্ত বলবে—‘হে মুসলিম! আমার পেছনে এক ইয়াহুদী আছে, তাকে হত্যা করো।’” (সহীহ মুসলিম: ২৯২২)
এই জাতির ইতিহাস মুসলিম উম্মাহর জন্য কেবল একটি অতীতচিত্র নয়, বরং তা একটি সতর্কবার্তা ও আত্মসমালোচনার উপলক্ষ। কুরআনের আলোকে বিশ্বকে দেখা, সত্য প্রচারের মাধ্যম হিসেবে মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা, ফিলিস্তিন ও আল-আকসার প্রতি দায়বদ্ধতা, ইবাদত ও তাকওয়ার চর্চা, এবং ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগ—এগুলো আজকের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয়।
বিশ্বব্যবস্থার আধুনিক রূপ আসলে এক জাহেলি সভ্যতার রূপান্তর, যেখানে নৈতিকতা, মানবতা ও ইনসাফ অবমূল্যায়িত। এই প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের উচিত কুরআনের আলোয় নিজেদের জীবন ও সমাজকে সাজানো এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ।
আল্লাহ যাদের একসময় শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই নিজেদের কর্মের দ্বারা তা হারিয়ে ফেলেছে। আজকের মুসলমানদের সামনে সেই ভুল না করার সুযোগ এখনো আছে—শুধু প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, ঐক্য এবং দায়িত্ববান ভূমিকায় দৃঢ় প্রত্যাবর্তন।
নোভা