ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে নদীভাঙন ও স্বাস্থ্যসেবা সংকট: মানুষের জীবন সংগ্রাম

রফিকুল ইসলাম রফিক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২৩:৫৬, ৪ জুন ২০২৫

কুড়িগ্রামে নদীভাঙন ও স্বাস্থ্যসেবা সংকট: মানুষের জীবন  সংগ্রাম

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম। নয়টি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই জেলা, নদ-নদী ও চরাঞ্চল দ্বারা প্রভাবিত। 
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদী রয়েছে। তবে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এই সংখ্যা ৫০টিরও বেশি হতে পারে। প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ফুলকুমার, বুড়িতিস্তা, নীলকমল, বোয়ালমারী, সোনাভরি, হলহলিয়া, শিয়ালদহ, ধরণী, জালছিড়া, জিঞ্জিরাম ও কালজানি নদী এই জেলার প্রধান নদীগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

বর্ষা মৌসুমের আগেই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাট, রসুলপুর, কড্ডার মোড় এলাকাসহ কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, রাজারহাট, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় শতাধিক বাড়ি-ঘর, আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

কুড়িগ্রামে নদীভাঙন একটি মারাত্মক সমস্যা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে ১১টি গ্রামের ২৬টি বসতবাড়ি, একটি মসজিদ, রাস্তাঘাট ও কয়েক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। 

কুড়িগ্রামে নদীভাঙন একটি মারাত্মক সমস্যা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙনে ১১টি গ্রামের ২৬টি বসতবাড়ি, একটি মসজিদ, রাস্তাঘাট ও কয়েক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। 

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (CEGIS) এর গবেষণা অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে নদীভাঙনে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। এই ক্ষতির মধ্যে আবাদি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট এবং স্থানীয় অবকাঠামো ধ্বংস অন্তর্ভুক্ত।

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। নদীভাঙনে ২০২০-২০২৩ সালে কুড়িগ্রামের ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এছাড়া, চরাঞ্চলের অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে চিকিৎসাসেবা পাওয়া কঠিন।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা,নুর আলম বলেন,  "ভাঙনের কারণে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে।"
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন,  "গত ১৫ বছরে ইউনিয়নের ৮০ ভাগ নদীতে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পুরো ইউনিয়ন নদীগর্ভে চলে যাবে।"
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, "কুড়িগ্রামের ১০-১২টি পয়েন্টে নদ-নদীর ভাঙন রয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"

নদীভাঙনের ফলে চরাঞ্চলের অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চরাঞ্চলের অনেক এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে চিকিৎসাসেবা পাওয়া কঠিন।

সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীর একাধিক লক মত প্রকাশ করেন "চিকিৎসা সেবা পেতে অনেক দূর যেতে হয়। অনেক সময় রোগী পথেই মারা যায়।"

নদীভাঙনের ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। উলিপুর উপজেলার রসুলপুরে গত এক মাসে প্রায় অর্ধশত পরিবার ভিটে হারিয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ মাঠসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

একজন শিক্ষক বলেন "বিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছে না।"
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানিয়েছেন, "কুড়িগ্রাম জেলা সব দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। জেলার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে চর ও সমতলে আলাদা আলাদা বাজেট করে তা বাস্তবায়ন করলে জেলাবাসীর জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে।"

কুড়িগ্রাম জেলার নদীভাঙন ও স্বাস্থ্যসেবা সংকট চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। নদীশাসন, চর উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠনের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের জনগণের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব।
 

Jahan

×