
ছবিঃ সংগৃহীত
মিশরের আবিডোস অঞ্চলে রানি মেরেট-নীথের সমাধি থেকে সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা উদ্ধার করেছেন ৫,০০০ বছর আগের অসংখ্য সিল করা মদ্যপাত্র। প্রাচীন এই নিদর্শনগুলো শুধুমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব নয়, বরং প্রাচীন মদ প্রস্তুত প্রণালী, সংরক্ষণ কৌশল এবং এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য সম্পর্কে নতুন আলো ফেলেছে। গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার আধুনিক মদ শিল্প ও কৃষিবিজ্ঞানেও নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
কারা এবং কোথায় এই মদ্যপাত্র আবিষ্কার করলেন
অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিয়ানা কোলারের নেতৃত্বে পরিচালিত খননকাজে আবিষ্কৃত হয় শত শত প্রাচীন মদ্যপাত্র। রানি মেরেট-নীথ, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালের দিকে মিশরে রাজত্ব করতেন বলে ধারণা করা হয়, তাঁর সমাধির জটিল স্থাপনায় এ মদ্যপাত্রগুলো রাখা ছিল। অনেক পাত্রে আজও মূল সিল এবং আঙ্গুরের বীজ অক্ষত রয়েছে—যা প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারেই বিরল।
মদের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ কী বলছে
এই প্রাচীন পাত্রগুলোতে থাকা রাসায়নিক উপাদান, আঙ্গুরের জাত, গাঁজন প্রক্রিয়া এবং সংরক্ষণে ব্যবহৃত উপাদান বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা প্রাচীন মদ তৈরির প্রকৃত ধরন উন্মোচন করতে চান। সংরক্ষিত আঙ্গুরবীজের মাধ্যমে আধুনিক জাতের সঙ্গে জেনেটিক সংযোগ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা। সিল করা পাত্র ব্যবহার থেকে ধারণা করা যায়, প্রাচীন মিশরীয়রা মদের মান ও স্থায়িত্ব ধরে রাখতে উন্নত কৌশল জানতেন।
সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে মদের ভূমিকা
এই মদ্যপাত্রগুলো কেবল পানীয় নয়, বরং প্রাচীন সমাজে এটি ছিল মর্যাদার প্রতীক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সমাধির পরিবেশ, তাতে পাওয়া শিলালিপি এবং সহকারী কর্মকর্তাদের কবর থেকে বোঝা যায়, মদ ছিল শবদাহ ও পুনর্জন্ম সম্পর্কিত বিশ্বাসের অংশ। জীবন ও মৃত্যুর দ্বারপারে এর উপস্থিতি প্রাচীন মিশরীয়দের মনোজগতে এর গভীর স্থানকে নির্দেশ করে।
প্রাচীন বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ইঙ্গিত
মদ তৈরি ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন ছিল বিশেষ দক্ষতা, জ্ঞান ও সরঞ্জাম—যেমন সিল করার মাটি, ধারক, আঙ্গুরচাষ ইত্যাদি। এ থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিশরে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এবং জটিল বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল। পাশাপাশি এটি প্রমাণ করে যে, মদ তৈরির জ্ঞান ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং হয়তো একাধিক সভ্যতার সঙ্গে আদান-প্রদানও ঘটেছিল।
আধুনিক বিজ্ঞানেও প্রভাব ফেলতে পারে আবিষ্কারটি
এই সিল করা পাত্রগুলো এখন আধুনিক এনোলজিস্ট ও বায়োকেমিস্টদের জন্য এক অনন্য গবেষণার সুযোগ। অবশিষ্ট কণা ও রাসায়নিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকরা প্রাচীন ও আধুনিক মদ প্রস্তুতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারছেন। এতে হয়তো হারিয়ে যাওয়া কোনো প্রাকৃতিক উপাদান বা টেকনিক আবার আবিষ্কৃত হতে পারে। বিশেষ করে অর্গানিক ও ট্র্যাডিশনাল মদ তৈরির ক্ষেত্রে প্রাচীন প্রযুক্তি নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
এই ৫,০০০ বছরের পুরনো মদ্যপাত্রগুলো শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক রত্ন নয়, বরং প্রাচীন এবং আধুনিক বিশ্বের মধ্যে এক সেতুবন্ধন। বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, এই আবিষ্কার মদ উৎপাদনের ইতিহাস নতুন করে লিখে দিতে পারে—যেখানে আধুনিক ভিটিকালচারের শেকড় অনেক গভীর এবং বিস্তৃত ছিল তা স্পষ্ট হবে।
মুমু