ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেড়েই চলছে নীরব ঘাতক কোলন ক্যান্সার,এখনই সতর্ক হোন

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ২৪ মে ২০২৫

বেড়েই চলছে নীরব ঘাতক কোলন ক্যান্সার,এখনই সতর্ক হোন

যখন ক্যানসারের কথা উঠলে স্তন, ফুসফুস কিংবা ত্বকের মতো বিষয়গুলোই আলোচনায় আসে, তখন একটি মারাত্মক রোগ আমাদের অগোচরেই ছায়া বিস্তার করে চলেছে কোলন ক্যান্সার। পেটের গভীরে নীরবে বেড়ে ওঠা এই ক্যানসার, প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ না দিয়েই বিপদের দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে।

বিষয়টি গুরুতর, কারণ ২০২৫ সালের মধ্যেই শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই এক লাখ পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষ কোলোরেক্টাল ক্যানসারে (যার মধ্যে কোলন ও রেক্টাল ক্যানসার অন্তর্ভুক্ত) আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আশার কথা, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়, কোলন ক্যানসার সবচেয়ে নিরাময়যোগ্য ক্যানসারগুলোর একটি।

কোলন ক্যানসার আসলে কী?
এই ক্যানসারটি জন্ম নেয় বৃহদান্ত্রে বা কোলনে। সাধারণত এটি শুরু হয় ছোট ছোট কোষস্তুপ (পলিপ) আকারে, যেগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। বৃহদান্ত্রের প্রধান কাজ হচ্ছে খাবার থেকে পানি ও পুষ্টি শোষণ করা এবং বর্জ্য বের করে দেওয়া। কিন্তু ক্যানসার দেখা দিলে পুরো প্রক্রিয়াটিই ব্যাহত হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের কোনো লক্ষণই নাও থাকতে পারে, আর এটাই একে আরও বিপজ্জনক করে তোলে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় ব্যথা, পায়খানার ধরণে পরিবর্তন, রক্তপাত এবং অস্বাভাবিক ওজন হ্রাসের মতো উপসর্গ।

কারা ঝুঁকিতে?
অনেকে মনে করেন এটি শুধু বয়স্কদের বা যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদেরই হয়এই ধারণা ভুল। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন বিষয়গুলো কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়:

বয়স:
যদিও ৫০-এর বেশি বয়সীদের মধ্যে ঝুঁকি বেশি, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তরুণদের মধ্যেও ক্যানসার শনাক্তের হার বাড়ছে। তাই মিলেনিয়ালরাও নিরাপদ নন।

পারিবারিক ইতিহাস:
পরিবারের কারও (মা, বাবা, ভাইবোন) এই রোগ থাকলে ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে। বহু পলিপ বা দীর্ঘস্থায়ী হজমের সমস্যা থাকলেও সতর্ক থাকা দরকার।

জিনগত কারণ:
লিঞ্চ সিনড্রোম বা ফ্যামিলিয়াল অ্যাডিনোম্যাটাস পলিপোসিস (FAP)-এর মতো কিছু জিনগত রোগ কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

জীবনযাপনের ধরণ:
প্রচুর পরিমাণে লাল মাংস বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, ফল ও শাকসবজি না খাওয়া, ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ সবই ক্যানসারের আশঙ্কা বাড়ায়।

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা:
ক্রোনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস থাকলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি হয়।

যে উপসর্গগুলো একদম অবহেলা করবেন না
প্রাথমিক পর্যায়ে কোলন ক্যানসার প্রায়ই নীরব থাকে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা গেলে তা উপেক্ষা করা নির্দেশ করে ভয়ংকর কিছু:

হঠাৎ করে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা স্টুল,মলত্যাগে রক্ত অথবা টিস্যুতে রক্ত,কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া,পেটে ফাঁপা ভাব বা ব্যথা, যা দীর্ঘস্থায়ী

সবসময় ক্লান্ত লাগা বা দুর্বলতা, যা রক্তাল্পতার কারণে হতে পারে।

প্রতিরোধ কি সম্ভব?
পুরোপুরি প্রতিরোধ না করলেও ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে:

উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন শস্য, ফল, সবজি ও ডাল খাওয়া,লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে দেওয়া,নিয়মিত শরীরচর্চা,ধূমপান ত্যাগ,অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত রাখা।

কোলন ক্যান্সার উচ্চকণ্ঠে চিৎকার করে আসে না,এটি আসে ফিসফিসিয়ে। আর যখন বুঝতে পারবেন, তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই নিজের শরীরকে গুরুত্ব দিন, পরিবারের ইতিহাস জানুন, নিয়মিত স্ক্রিনিং করুন। নিজেকে সচেতন করা মানেই নিজের ভবিষ্যৎকে আরও সুরক্ষিত করা।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/48c9mjbr

আফরোজা

×