
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিনের একটি বড় জটিলতা হলো জরিপ। এখনো দেশজুড়ে ভূমি জরিপের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ব্রিটিশ আমলে করা সিএস জরিপ, যা শুরু হয়েছিল ১৮৮৮ সালে এবং তা সম্পূর্ণ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৫২ বছর। অথচ সে সময় ঢাকা জেলার মালিক ছিল মাত্র দুইটি পরিবার—নবাব পরিবার এবং ভাওয়াল পরিবার। তবুও জরিপ সম্পন্ন করতে এত দীর্ঘ সময় লেগেছে।
তবে এখন সেই দীর্ঘ সময়ের জমানা শেষ হতে চলেছে। ভূমি সচিব জানিয়েছেন, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই জরিপ কাজ কয়েক মিনিটেই সম্পন্ন করা সম্ভব। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কোরিয়া ভূমি জরিপ প্রযুক্তিতে অত্যন্ত দক্ষ। তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশের ডিজিটাল ভূমি জরিপে সহায়তা করার জন্য। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা খুবই স্বল্প সুদে (interest point 0.1%) এবং ২৮ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ "সফট লোন" হিসেবে বাংলাদেশ পাবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভূমি জরিপে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিমিনিটে ৫০০ থেকে ৬০০ ছবি তোলা যাবে, যা সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ম্যাপে রূপান্তর করা হবে। যেখানে আগে একটি ছোট হল রুমের জরিপ করতে দীর্ঘ সময় লাগত, এখন কয়েক একর জমির জরিপ কয়েক মিনিটেই সম্ভব হবে।
ভূমি সচিব আরও জানান, ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তায় বাংলাদেশে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছে, যার অধীনে ২০২০ সাল থেকে কাজ চলছে। মে মাসে প্রথমবারের মতো এরো সার্ভে—অর্থাৎ বিমানের মাধ্যমে জরিপ—সম্পন্ন হয়েছে। ছয়টি এলাকায় মাত্র ১০ দিনের মধ্যে এই জরিপ শেষ হয়েছে, যা বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির প্রথম ব্যবহার।
তিনি বলেন, "যদি আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ ও নির্ভুল ডিজিটাল জরিপ করতে পারি, তবে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার ৮০ ভাগ সমাধান হয়ে যাবে। কারণ আমাদের দেশে বেশিরভাগ মামলার কেন্দ্রবিন্দু হলো ভূমি বিরোধ—ভাইয়ে ভাইয়ে, চাচা-ভাতিজায় কিংবা পরিবারের মধ্যে বিভেদ। এমনকি প্রতিটি নাগরিক এই মামলা জটের কোনো না কোনোভাবে অংশীদার।"
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক, নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ভূমি জরিপের পথ তৈরি হবে, যা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় নতুন যুগের সূচনা করবে।
মারিয়া